ঐতিহ্যের মসজিদ ষাট গম্বুজ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
চারিদিকে সবুজের আয়োজন। ফুলের মেলা বললেও ভুল হবেনা। মাঝ বরাবর মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ। বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত এ মসজিদ। মসজিদটিতে পাওয়া যাবেনা কোন শিলালিপি, মসজিদটি কে, কতো সালে নির্মান করেছিল তার সুনিদ্রিষ্ট তথ্য খুজে পাওয়া যায়না। স্থাপত্যশৈলী দেখে মনে করা হয় এটি খান ই-জাহান আলি নির্মান করেছেন। ১৫শ শতাব্দিতে বহু বছর ধরে কাজ করে বহু অর্থ খরচের বিনিময়ে নির্মান করা হয় বলে ধারনা করা হয়।
বাংলাদেশে নির্মিত প্রাচীন আমলের মসজিদ গুলোর মধ্যে সর্ববৃহত ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদটিকে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের মর্যাদা দিয়েছে। এই মসজিদটিই বাগেরহাট শহরকে বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহরের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।
হযরত খানজাহান (রঃ) কর্তৃক নির্মিত অপূর্ব কারুকার্য খচিত পাঁচ শতাব্দীরও অধিক কালের পুরাতন বিশালায়তন এ মসজিদ। মসজিদটি খান জাহান সাহেবের দরগা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিয্যের সাক্ষি্ হয়ে দাড়িয়ে আছে। স্থাপত্য কৌশলে ও লাল পোড়া মাটির উপর লতাপাতার অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পের এ মসজিদ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
ষাটগম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটিকে কিন্তু মাত্র ষাটটি গম্বুজ আছে তা নয়। প্রকৃত পক্ষে চতুস্কোনের বুরম্নজের উপর চারটি গম্বুজসহ এতে ৭৪টি গুম্বজ আছে। মাঝের সারির বাংলা চালের অনুরূপ ৭টি চৌচালা গম্বুজসহ এতে মোট ৮১টি গম্বুজ দেখতে পাবেন। বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, এর প্রার্থনা কক্ষের চৌচালা ছাদ ও গম্বুজগুলি ইট ও পাথরের ষাটটি খাম্বার দ্বারা সমর্থিত খিলানের উপর নির্মিত।
স্থানীয় লোকজন মনে করেন, হযরত খানজাহান (রঃ) মসজিদটি নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথরগুলো চট্রগ্রাম অথবা ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে এনে ছিলেন। এ পাথরগুলো মুলত তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতের গঠন বৈচিত্রে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
বিশাল মসজিদের চতুর্দিকে প্রাচীর ৮ফুট চওড়া, চার কোনে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির। এ মিনারে উপরে উঠতে ব্যবহারের জন্য সিড়ি দেয়া আছে। মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরী, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগ পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য ঐতিহাসিক এ মসজিদটি এবং সেই সাথে মসজিদের সাথে জড়িত খানজাহান (রঃ) এর মাজার শরীফের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/কেএইচ