ওবামার ফটোগ্রাফার বাংলাদেশি জুয়েল

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৫, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৫০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:১৯ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

juel-samadবাগদাদ নগরের কাছেই একটা বিস্ফোরণের খবর । ছুটে যান ক্যামেরা নিয়ে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়েই বোঝেন পা দিয়েছেন মৃত্যুকূপে। অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটছে মার্কিন সেনারা। জুয়েল দেখলেন দুই পাশের রাস্তায় মানুষ বলতে কেউ নেই। জুয়েল একা। পিছু ফেরার উপায়ও নেই। গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। মাথায় হেলমেট। হাতে ক্যামেরা। ওপরে বিমান থেকে ক্যামেরাকে অস্ত্র মনে করে কেউ হামলা করে বসতে পারে। ওয়্যারলেসে আসা বার্তায় নির্দেশই ছিল ‘শ্যুট, অ্যানিথিং ইজ মুভিং’।

যেকোনো সময় এক ঝাঁক গুলি এসে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে শরীর। তথাপি সব ভয় তুচ্ছ করে সামনে এগোলেন। চলে গেলেন বিস্ফোরিত দুটো গাড়ির একেবারে কাছাকাছি। পটাপট ছবি ওঠাতে লাগলেন ক্যামেরায়। একটু পর হাম্বিতে (যুদ্ধভ্যান) চেপে এলো এক মার্কিন সেনা, ‘তুমি এখানে কী করছ!’ ‘আমি আমার কাজ করছি। তোমরা তো আমার দায়িত্ব নিলে না।’ জুয়েলের উত্তর। ‘তুমি কি সরে যেতে চাও?’ ছবি তোলার কাজ ততক্ষণে শেষ। খানিক বাদে জুয়েলকে নিয়ে নিরাপদ জায়গার সন্ধানে ছুটল সামরিক যান।

গল্প-উপন্যাসের পাতায় এমন দুঃসাহসী ‘চিরনবীন’ বাংলাদেশি তরুণের খোঁজ মেলে। কিন্তু বাস্তবে? হ্যাঁ, ইরাকে যুদ্ধের ময়দানে, আফগানিস্তানে ক্যামেরা হাতে ‘অবিশ্বাস্য’ সেই লড়াইটায় লড়েছেন জুয়েল সামাদ। জীবন বাজি রেখে তিনি তুলেছেন অসংখ্য ভয়াবহতার ছবি। তেমনি পেয়েছেন সম্মানও। তিনি এএফপির ফটো সাংবাদিক। কাজ করছেন হোয়াইট হাউসে।

juel-samad-2জুয়েলের জীবনের শুরুটাই হয়েছিল অন্য এক ‘যুদ্ধ’ দিয়ে। পুরান ঢাকায় কেটেছে জুয়েলের শৈশব। জন্মের এক মাস পর থেকেই দাদা-দাদির কাছে মানুষ। বাবা আবদুস সালাম নিজেও ছিলেন আলোকচিত্রী। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর অকূল পাথারে পড়ে জুয়েলদের পরিবার। জুয়েল তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র।

১৯৯৩ সাল। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে। ছয়টা লেটার নিয়ে পাস করেছেন জুয়েল। বন্ধুবান্ধব কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু জুয়েলকে নামতে হলো চাকরির সন্ধানে। এগিয়ে এলেন ডেইলি মর্নিং সান পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী আবু তাহের। তাঁর সহায়তায় শুরু হলো ডেইলি মর্নিং সান-এর ডার্করুমে কাজ শেখার পালা। একটা পেনট্যাক্স ক্যামেরা নিয়ে জুয়েল নিজেই শুরু করলেন ছবি তোলার কাজ। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করলেন। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে জুয়েলের চাকরি হয়ে গেল জনকণ্ঠ পত্রিকায়।

এরই মধ্যে আরেক ঘটনা। বার্তা সংস্থা এএফপির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান জন ম্যাকডুগ্যাল এলেন ঢাকায়। জনকণ্ঠ পত্রিকায় একটা ছবি দেখে দারুণ পছন্দ হয় জনের। ওই ছবির আলোকচিত্রী ছিলেন জুয়েল সামাদ। ডাক পেলেন তিনি। ক্যামেরা হাতে দিয়ে তাঁকে বলা হলো, ‘তোমার হাতে মাত্র ৩০ মিনিট সময়, এর মধ্যে তোমাকে রিকশাচালকদের কিছু ছবি তুলতে হবে।’ জুয়েল ছবি তুললেন। তাঁর তোলা ছবি মনে ধরে গেল জনের। মনে যে ধরল, তার প্রমাণ—কয়েক দিন পর পেয়ে গেলেন বার্তা সংস্থা এএফপিতে কাজ করার প্রস্তাব।

সেই সুবাদে শুরু হলো ক্যামেরা কাঁধে জুয়েলের ‘বিশ্ব জয়ের মিশন’। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ঘুরে ইন্দোনেশিয়ায় জুয়েল এলেন ব্যুরোপ্রধান হিসেবে। এরই মধ্যে ইরাক আর আফগানিস্তানে যুদ্ধের ময়দানে যেতে হয়েছে একাধিকবার। ২০০৮ সালের আগস্টে এল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ডাক। ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে অফিশিয়ালি দায়িত্ব পেলেন হোয়াইট হাউসে কাজ করার। তারপর এএফপির হোয়াইট হাউস ফটোগ্রাফার হিসেবে বারাক ওবামাকে ‘কাভারেজ’ করার । হয়ে যান হোয়াইট হাউসে এএফপির স্টাফ ফটোগ্রাফার। বারাক ওমাবা, মিশেল ওবামা তাঁর ক্যামেরায় উজ্জ্বলতা ছড়াতে থাকে। ওবামার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটাও দারুণ। এভাবে্ই জুয়েল সামাদ ক্রমেই শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G