কওমির দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমর্যাদা ঘোষণা

প্রকাশঃ এপ্রিল ১২, ২০১৭ সময়ঃ ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাওরায়ে হাদিস সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও এরাবিকে  মাস্টার্স সমমর্যাদা ঘোষণা করেছে সরকার।

মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আলেমদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে বেফাকের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে তিন শতাধিক কওমি আলেম উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে, দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেয়া হলো।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন হবে। আলেমদের নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে। তারাই এই স্বীকৃতির আইনি ভিত্তি দাঁড় করাবেন। এ সময় তিনি কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি বাস্তবায়নে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই এ বিষয়ে প্রস্তাব রেখেছেন। আমি এটুকুই বলবো কওমি মাদ্রাসার সনদকে আমরা স্বীকৃতি দিতে চাই- এখানে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী রয়েছেন, সচিবরা রয়েছেন, আমার দফতরের মুখ্য সচিব রয়েছেন এবং অন্য কর্মকর্তারা রয়েছেন, আমি আশা করি তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। যাতে এই সনদের স্বীকৃতি দ্রুত হতে পারে। আপনাদের মতামত যেটা আমার কাছে এসেছে, সবার স্বাতন্ত্র বজায় রেখে এবং দেওবন্ধের যে মূলনীতি সেটার ওপর ভিত্তি করেই এটা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এই স্বীকৃতি ঘোষণা করায় আলেমরা দেশের লাখ লাখ কওমি শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শোকরিয়া জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সবাই সমস্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আলেমরা ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘ দিনের। বিভিন্ন সময় এর জন্য আন্দোলনও হয়েছে। বিগত বিএনপি জোট সরকারের শেষ সময়ে এসে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমর্যাদা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। একটি টাস্কফোর্সও করে দিয়েছিলেন। তবে সেটা বেশি দূর এগোতে পারেনি। এর মধ্যেই বিদায় নিতে হয় সরকারকে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার জোরালো হয় কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি। ২০১০ সালে সরকার শিক্ষানীতি ঘোষণার সময়ই কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে দেয় সরকার। তবে আলেমদের মধ্যে অনৈক্য থাকায় এই কমিটির কার্যক্রম অনেকদূর এসে থেমে যায়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগী হয়ে আলেমদের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। সবশেষ সম্মিলিতভাবে আলেমরা স্বীকৃতির ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করায় সরকার তা ঘোষণার উদ্যোগ নেয়।

কওমি মাদ্রাসা মূলত ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দের আলোকে প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে কোরআন-হাদিসের মূলধারার শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়। বাংলাদেশে কয়েক হাজার কওমি মাদ্রাসার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।

দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর। এই স্তরে সিহাহ সিত্তাহ তথা হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয়টি কিতাব ছাড়াও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চমানের শিক্ষা দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং হাটহাজারি দারুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমেদ শফি, জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি মাওলানা ফরিদউদ্দিন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, ওলামা মাশায়েখ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল হালিম বোখারি, মাওলানা নূর হোসেন কাশেমী বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G