করোনাকাল;একজন কামাল ও অন্যান্য
কামাল ভাইয়ের করোনা জানবার পর থেকে মাত্র দুইবার ফোনে কথা হয়েছে। বাকি সময় অন্য উপায়ে আপডেট নিয়েছি। আজ দুপুরে তার সঙ্গে. ৫০সেকেন্ড আলাপে আমি বিমর্ষ হলাম। একই সঙ্গে বিষ্মিত ও মর্মাহত হয়েছি…।একজন টগবগে যুবকের কণ্ঠস্বর কী করে অমন ভঙ্গুর,ম্রিয়মান আর অস্পষ্ট হয়! তিনি অন্যবিধ সংকট কাটিয়ে উঠেছেন বিধায় হাসপাতাল ছেড়েছেন। কিন্তু…।
ডাক্তার আব্দুর রহিম একটা কোটি টাকার কথা বলেছেন। বুলেট যখন প্রবল শক্তিশালী হয়,সেটা তার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত সামনে যা পায় তাকে বিদ্ধ করে। আশেপাশে থাকা লোক ওই বুলেটের আঘাতে জর্জরিত লোকের অবস্থা বুঝবে না! করোনা বিশাল ব্যাসার্ধ আর অবিনাশী লক্ষ্য নিয়ে সামনে ধাবমান। কখন কে সামনে পড়ে যাবে,তার চৌদ্দপুরুষ একটা নতুন নির্মম ও অভূতপূর্ব বীভৎস অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে…।
এইটা যখন বলেছেন, তখন তার পরিবার জ্বরাক্রান্ত কিন্তু পরীক্ষিত নন। এই ফোনালাপের পরদিনই তাঁর পরিবার কোভিডের কবলে পড়লো! তিনি এও বলেছিলেন,”একজন চিকিৎসা কর্মী হিসেবে জানি,আমাদের বডির কোথায় কোন সবলতা দুর্বলতা আছে!” সেইকারণ ভয় জাগে বেশি। করোনায় সবার জীবন যাবে না,কিন্তু যে অভিঘাত ও অভিজ্ঞতা দিয়ে যাবে,তা আমাদের কোন চরম শত্রুর জন্যেও প্রার্থনা করতে পারি না।
আত্মীয়ের মধ্যে অনেকেই ভুগছেন, আগে ভুগে সেরেছেন তাদের অভিজ্ঞতা জানলে শুনলে নিজেকে এখনো ভাগ্যবান ভাবতেই পারি,আলহামদুলিল্লাহ। ভ্যাক্সিন দুইটা নেয়াতে মানসিক দৃঢ়তাও তৈরি হয়েছে।যারা হুজুগ ও গুজব ফলো করে,ভ্যাক্সিন নেননি,সুযোগ থাকলে এক্ষুণি নিয়ে নিন। তার আগে আধ্যাত্মিকতার শপথ গ্রহণ করুন। সব সিদ্ধান্ত উপরের ইশারায় হয়।
কামাল ভাইয়ের সুস্থতা চাই। তার সঙ্গে বিতর্ক করতে চাই,অভিমান করতে চাই। অভিযোগ জানাতে চাই। অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ঋদ্ধ হতে চাই। তিনি বিশুদ্ধ দারবিশ নন। কিন্তু অনেক দূরে গিয়েও কাছে আসার অনন্য ক্ষমতা ধারণ করেন। একজন কী যাদু মন্ত্রবলে এতজনের আপন হয়ে ওঠেন,তার দীক্ষা নিতে চাই। তার পরিবারের সবাই করোনাক্রান্ত হয়ে সুস্থতার পথে,আলহামদুলিল্লাহ। নুসাইবা ও তাহা’র মধ্যে রুহি-উপমাকে দেখতে পাই। আমাদের উপলব্ধি এই ধারায় বিস্তরণ ঘটুক।
আব্দুর রহিম ডাক্তার হিসেবে যতটা আপন,মানুষ হিসেবে তারচে ঢের বেশি।অনেক ডাক্তার চিনি,যারা অর্থেই নীরব হয়ে যান! তিনি অর্থ ও পরার্থ দুটোকে সমান জ্ঞান করেন। আরিবা ও আদিয়াত অবুঝ-সবুজ। তাঁরা প্রাণ খুলে হাসুক। ইলহামের সঙ্গে আদিয়াতের কুস্তি দিতে চাই!
প্লিজ,করোনা নিয়ে ভাবুন। ফিরে আসুন স্রষ্টা নির্দেশিত পথে। আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিলো, “একমাত্র তার দাসত্ব করা।” সেটা থেকে কেন দূরে???কেন! কামাল ভাইকে বলেছি,”একটা ইতিবাচক কাজের শপথ নিন,আল্লাহ সুস্থতা দান করবেনই।” আপনিও একটা সৎ মহৎ বা ইতিবাচক কাজের সিদ্ধান্ত নিন। আজই,এক্ষণ। হয় করোনা স্পর্শ করবে না,আপনাকে অথবা যদি করোনা হয়ও সুস্থ হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেছেন,
“আমি অবশ্যই ভয়,অভাব,রোগবালাই ইত্যাদি দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করবো। আর সুসংবাদ মু’মিনদের জন্যে। ” শুনতে কী পান???
মিজান বিন মজিদ
সহকারী অধ্যাপক,
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, টাঙ্গাইল