কেমোথেরাপিই ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর কারণ: ডাঃ জোনস
সুদীপ্ত চক্রবর্ত্তী, কলকাতা প্রতিনিধি:
ক্যান্সারের অন্যতম স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি কেমোথেরাপি নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর মূলে রয়েছে কেমো নিয়ে বরাবরের সেই ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ বিতর্ক। ডাঃ হার্ডিন বি জোনস নামের মার্কিন ক্যান্সার পরিসংখ্যানবিদ বলেন, যেসব ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ কেমোথেরাপি নেননি, তারা বরং কেমোথেরাপি চিকিৎসা চলা রোগীদের তুলনায় গড়পড়তা সাড়ে ১২ বছর বেশি বেঁচেছেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে আমেরিকার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের আয়ু নিয়ে এক সমীক্ষার পর ডাঃ জোনস এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। ডাঃ জোনসের এই গবেষণা নিউইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্স পত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর আরও বিস্ফোরক অভিযোগ, আসলে ওষুধ কোম্পানিগুলির বেশি লাভের উদ্দেশ্যে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার এত রমরমা ব্যবসা। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স এবং ফিজিওলজির একজন প্রাক্তন অধ্যাপক দাবি করেছেন, ক্যান্সার নয়, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর কারণ আসলে কেমোথেরাপি। কী দাবি করছেন জোনস? তিনি জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে, প্রচলিত ক্যান্সার চিকিৎসা না করানো ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্তরা প্রচলিত চিকিৎসার অধীনে থাকা রোগীদের চারগুণ বেশি সময় বাঁচেন। তাঁর আরও চাঞ্চল্যকর দাবি হল, কেমোথেরাপি নেওয়া ক্যান্সার রোগীদের একটা বড় অংশই তিন বছরের মধ্যে মারা যান। বাকিরা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যান।
এ প্রসঙ্গে আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি’র প্রধান ডাঃ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কেমোথেরাপি একটি স্বীকৃত ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি। যে কেউ যা খুশি দাবি করলেই হল? উনি (ডাঃ জোনস) বসবাস করেন আমেরিকায়, সব থেকে বেশি ক্যান্সার চিকিৎসা ও কেমোথেরাপিতে খরচ হয় সেখানেই। সেটা বন্ধ করতে পেরেছেন? তাঁর এই দাবির পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কী? এ ধরনের দাবি করতে হলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা জরুরি। সেটা কি করেছেন? আমার মনে হয় না, এ ধরনের দাবির পিছনে কোনও বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি আছে।
আর এক বিশিষ্ট ক্যানসার চিকিৎসক ডাঃ গৌতম মুখোপাধ্যায়ও বলেন, এ ধরনের দাবি মানতে আমি নারাজ। কেমোথেরাপি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এক বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, এই দাবি আংশিক সত্যি। আমেরিকার মতো দেশে এখন ক্যান্সার জিনটাকেই আটকে দেওয়ার নতুন থেরাপি চালু হয়েছে। তার নাম বায়োলজিক্যাল থেরাপি বা টার্গেট থেরাপি। আর চালু কেমোথেরাপিতে বেশ কিছু রাসায়নিক আছে, যেগুলি শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষতিকর কোষগুলি ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু পাশাপাশি তারা অনেক ভালো কোষও নষ্ট করে। সেজন্যই কেমোথেরাপি নিয়ে এই সমালোচনা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই স্বীকৃত থেরাপিই বন্ধ করে দিতে হবে।
তারপর থেকেই তোলপাড় পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যদিও রাজ্যের প্রথম সারির ক্যান্সার চিকিৎসক এই ধরনের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘বিজ্ঞানসম্মত নয়’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই কিছু বিজ্ঞানী ও গবেষকের একটি দল দাবি করে যাচ্ছেন, প্রচলিত ক্যান্সার চিকিৎসায় লাভের থেকে ক্ষতি বেশি। কিন্তু তার পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারছেননা তাঁরা।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ