কো-পাইলটের ইচ্ছাতেই বিমান বিধ্বস্ত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
দুর্ঘটনা নয়, সন্ত্রাসবাদী হামলা নয়, সহ-পাইলটের মানসিক অস্থিরতাই কাল ডেকে এনেছিল বিমানের ১৪৮ যাত্রীর।
আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ফ্রান্সের আল্পস পর্বতমালায় ভেঙে পড়া যাত্রীবাহী জার্মানউইংস বিমানের কো-পাইলট।
তিনি বিমানটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ বিধ্বস্ত করেন বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে এমনই দাবি করছেন পাবলিক প্রসিকিউটর ব্রাইস রবিন।
জার্মানির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ (২৮) নামের ওই কো-পাইলট বেশ শান্ত প্রকৃতির ও মিশুক ছিলেন। সদ্য গত বছরেই জার্মানউইংসে যোগ দিয়েছিলেন। ফ্লাইট ৯৫২৫-এ সহকারী বিমান চালকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর হতাশায় ভুগছিলেন তিনি।
খবরে বলা হয়, বিমানটি বিধ্বস্তের জন্য কো-পাইলট দায়ী- এমন তত্ত্ব হাজির হওয়ার পর লুবিৎজকে নিয়ে তদন্ত শুরু করে জার্মান পুলিশ। লুবিৎজের ফ্ল্যাটে চার ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে তার প্রেমিকার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ পায় পুলিশ।
ওই সম্পর্ক নিয়ে তিনি বেশ কিছু হতাশাব্যঞ্জক মন্তব্যও করেছিলেন এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে রাজি হয়নি। তবে সেখানে কোনো সুইসাইড নোটও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার তার বস স্বীকার করেছেন, তিনি ব্যথিত ছিলেন। কিন্তু তার বিমান চালানো উচিত হবে না- এমন কথা কখনো বলা হয়নি।
তিনি মানসিকভাবে ঠিক ছিলেন না- এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে তিনি কীভাবে শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে গেলেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
এর আগে ফ্রান্সের আইনজীবীরা ব্ল্যাকবক্স রেকর্ডার পরীক্ষা করে জানান, ব্ল্যাকবক্স থেকে দুই পাইলটের যে কথপোকথন পাওয়া গিয়েছে, তা শুরুর দিকে একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ উড়ে যাওয়ার পথে মাঝে একবার টয়লেট যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন প্রধান পাইলট। তখনই বিপত্তির সূত্রপাত।
টয়লেটের দরজা দ্রুত বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন লুবিৎজ। বন্ধ করে দেন ককপিটে ঢোকার দরজাও। তারপই প্লেনটিকে ইচ্ছেমতো উচ্চতা পরিবর্তন করতে দেন। কনট্রোল রুম থেকে বারবার লুবিৎজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও, কোনও উত্তর দেননি তিনি। টয়লেটে আটকে পড়া বিমানের পাইলট বারবার দরজা ধাক্কালেও কোনও সাড়াশব্দ করেননি লুবিটজ।
একেবারে শেষ সময়েই নিজেদের পরিণতি বুঝতে পেরেছিলেন বিমানের যাত্রীরা। একদম শেষ মুহূর্তেই যাত্রীদের আতঙ্কিত চিত্কার ব্ল্যাকবক্সের রেকর্ডারে পাওয়া গিয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটার বেগে ফ্রেঞ্চ আল্পসের গায়ে আছড়ে পড়ে বিমানটি। বিমানটি আঁছড়ে পড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফে যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আলপস পর্বতে বিধ্বস্ত হয় জার্মানউইংসের বিমান এয়ারবাস এ৩২০। বিমানে থাকা ১৪৪ জন যাত্রী এবং দুই পাইলট ও চারজন অ্যাটেনডেন্ট সবাই নিহত হয়।
তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেসমিন