ক্রিকেটার থেকে গতি মানব

প্রকাশঃ জুলাই ৬, ২০১৫ সময়ঃ ৩:০৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

boltউসাইন বোল্ট পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন মানুষ। যিনি মাত্র ৯.৬৯ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। তার পূরাববর্তী দ্রুতগতির রেকর্ড ছিল ৯.৭২ সেকেন্ড। তিনি পাঁচবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। নিজেই আবার নিজের রেকর্ড ভাঙেন। উসাইন বোল্টের জীবনের বিভিন্ন বিষয় আজ তুলে ধরা হচ্ছে জীবনের জয়গান পাতায়।

জন্ম ও পরিবার

বোল্টের জন্ম ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট। জ্যামাইকার ছোট শহর শেরউড কনটেন্ট নামের ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেন এই গতিমানব। সেখানেই বাবা ওয়েলেসলি, মা জেনিফার বোল্ট, ভাই সাদেকি ও বোন শেরিনকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। উসাইন বোল্টের বাবা ছিলেন সামান্য মুদি দোকানদার। বাবার সাথে মাও দোকান চালাতে সাহায্য করতেন। একসময় উসাইন বোল্টকেও চাল-ডাল বিক্রি করতে হয়েছিল বাবা-মায়ের সাথে। এই মুদি দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকমে চলতো তাদের সংসার।

usain 4ছেলেবেলা ও দৌড়বিদ হয়ে ওঠা

ছোট বেলায় ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের রাস্তায় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে সময় কাটত বোল্টের। এই দুটি খেলার প্রতিই বোল্টের ভালো লাগা রয়েছে। যে কোনো খেলার মাধ্যমেই হোক সারাক্ষণ দৌড়ের উপরেই থাকতেন তিনি।

প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হলেন ওয়েলডেসিয়া প্রাইমারি স্কুলে। সেই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্প্রিন্ট ট্র্যারকে ১ম পা পড়ে বোল্টের এবং শুরুতেই বাজিমাত করেন বোল্ট। ১০০ মিটারে স্কুলের সেরা দৌড়বিদ হন তিনি।

usain 2তবে একটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার, বোল্ট ক্রিকেট, ফুটবল যখন যেটা পেতেন সেটাই খেলতেন। তবে ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের দিকেই এগোচ্ছিলেন বোল্ট।উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর বোল্টের ক্ষিপ্র গতি চোখে পড়ে তার ক্রিকেট কোচের। তার অনুপ্রেরণায় দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বোল্ট। বোল্টকে দেখে অলিম্পিকের সাবেক এক স্প্রিন্টারও বোল্টকে পরামর্শ দেন অ্যাথলেটিক্স এর মনোযোগ দেওয়ার জন্য। জ্যামাইকার হয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ইভেন্টে প্রথম অংশ নেন ২০০১ সালে। প্রথমবার অংশ নিয়েই ২০০ ও ৪০০ মিটারে জিতে নেন রুপা। একই বছর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারে অংশ নেন। কিন্তু ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও তখন পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং (২১ দশমিক ৭৩ সে.) করেন।

বোল্টের কিছু অনন্য কীর্তিusain 3

# তিনবার ২০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়ী প্রথম অ্যাথলেট উসাইন বোল্ট। দুইবার করে জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল জনসন ও ক্যালভিন স্মিথ

# দুইবার ১০০ ও ২০০ মিটারের ‘ডাবল’ জয়ের একমাত্র কীর্তি

# ৫টি ব্যক্তিগত স্বর্ণ জিতে বোল্ট স্পর্শ করেছেন কার্ল লুইস ও কেনেনিসা বেকেলেকে। মাইকেল জনসন ও সের্গেই বুবকা অবশ্য এগিয়ে। এ দু’জন জিতেছেন ৬টি করে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক।

# ৮টি স্বর্ণ জয়ের বিরল রেকর্ড। এই রেকর্ডে বোল্টের সঙ্গী কার্ল লুইস ও মাইকেল জনসন। কার্ল লুইস তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন ৮টি স্বর্ণ। মাইকেল জনসনকে ৮টি স্বর্ণ জিততে খেলতে হয়েছিল ৫টি আসর। মস্কোতে ৩টি স্বর্ণ জিতে উসাইন বোল্ট র্স্প করেছেন এই দুজনকে। মেয়েদের মধ্যে অবশ্য ৮টি স্বর্ণ আছে মার্কিন স্প্রিন্টার অ্যালিসন ফেলিক্সের।

অবসরের ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন

২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের পর ট্র্যাক থেকে বিদায় নেবেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন উসাইন বোল্ট। ২০১৬ সালে অবসর নিচ্ছেন না তিনি। অংশ নেবেন ২০১৭ সালের লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও। বুটজোড়া তুলে রাখতে পারেন এর পর। অবসর প্রশ্নে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন এ গ্রহের দ্রুততম মানব, ‘রিওর পরই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভক্তরা চায়, আমি যেন অন্তত আরও একটা বছর খেলে যাই। আমার স্পনসররা একই মত দিয়েছে। কোচও বলেছেন, এটা করা যেতে পারে।’

একদিনে ১০০ মুরগী

একদিনে ১০০ মুরগী খাওয়া সম্ভব শুধুমাত্র অতিমানবদের পক্ষেই। আর এই অতিমানবীয় এই কাজটি করা গতিমানব উসাইন বোল্টের কাছে কোনো বিষয়ই নয়। বোল্টের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য সেখানে ১০ দিন ছিলেন। প্রথম দিন তিনি মধ্যাহ্ন ভোজ এ ২০ মুরগীর একটি প্যাকেট নেন এবং রাতের খাবারেও ঐ একই রকম আরেকটি মুরগীর প্যাকেট সাবাড় করেন। কিন্তু পরের দিন থেকেই তার মুরগী আসক্তি প্রবল আকার ধারণ করে। সকালের নাস্তায় তিনি ২০ মুরগীর দুটি প্যাকেট সাবাড়ের পর মধ্যাহ্ন ভোজে একটা এবং সন্ধ্যায় আরো দুটি প্যাকেট ভক্ষণ করেন। এই মুরগীগুলোর সঙ্গে তিনি অ্যাপল পাই এবং কিছু সবজিও নিতেন।

Olympic gold medalist Usain Bolt of Jamaica crosses the finish line to win a 100-meter exhibition against a bus along the 9 de Julio Avenue in Buenos Aires, Argentina, Saturday, Dec. 14, 2013. (AP Photo/DyN, Rodolfo Pezzoni)

ইঞ্জিনের গতিও হার মেনেছে

স্বাভাবিকভাবে ইঞ্জিনের গতির সাথে পেরেও ওঠা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছে গতির দানব ‘উসাইন বোল্ট’। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারসে শিশুদের জন্য কোচিং ক্লিনিক উদ্বোধনের জন্য যান উসাইন বোল্ট। সেখানকার একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অনুরোধে যাত্রীবাহী বাসের বিপক্ষে রেসে নামেন বোল্ট। ৮০ মিটারের এই রেসটিতে অনায়েসেই বাসটির আগে ফিনিশিং লাইন পার করনে উসাইন বোল্ট।

টানা তিন বার বর্ষসেরাusain 5

উসাইন বোল্ট সর্বমোট পাঁচ বার বর্ষসেরা অ্যাথলেট (পুরুষ) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে টানা তিনবার তিনি বর্ষসেরা পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ এই পাঁচ বছর তিনি বর্ষসেরার পুরস্কার জয় করেন। মাঝখানে ২০১০ সালে সালে বোল্টকে হতাশ করে উৎসব করেছিলেন কেনিয়ান মাঝারিপাল্লার দৌড়বিদ ডেভিড রুডিশা। না হলে টানা ছয়বারের একটা রেকর্ড গড়ে ফেলতেন উসাইন বোল্ট।

নিজের সম্পর্কে বোল্টের মন্তব্য

‘ফোর্বস’ সাময়িকীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বোল্ট বলেছিলেন, ‘জীবনে আমি খুব বেশি সফলতা লাভ করতে পারিনি! কারণ, আমি একজন অলস প্রকৃতির মানুষ।’

বরাবরের মতো খামখেয়ালি স্বভাবের উসাইন বোল্ট একবার বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় খেলা ছাড়া আর কোনো কিছুই আমি চিন্তা করতে পারতাম না।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G