খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) এর জীবনী (শেষ পর্ব)

প্রকাশঃ মার্চ ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ১২:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০৬ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

muরাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন :

খলীফার উক্ত অব্যাহতি আদেশ তিনি অবনত মস্তকে মেনে নেন এবং সাধারণ সৈনিক বেশে বাকি যুদ্ধে শরীক থাকেন। তারপর খলীফা তাকে সিরিয়ার রাহা, হিরাত, আমদ এবং লারতার অঞ্চলসমূহের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন (আছহাবে রাসূলের জীবনকথা, ২/৭২ পৃঃ)। অতঃপর তিনি খলীফা প্রদত্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে দ্রুত সিরিয়ায় গমন করেন।

তিনি ইয়াযীদকে লেবানন, আমর (রাঃ)-কে জেরুজালেম, সুরাহবিলকে জর্দান অভিমুখে পেরণ করেন এবং তিনি দ্রুত গতিতে বলবেক, এডেসা, আলেপ্পো, কিন্নিসিরিন প্রভৃতি স্থান দখন করে সমগ্র সিরিয়া অঞ্চলে মুসলিম শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আর এভাবে তিনি একজন সুদক্ষ সেনানায়ক থেকে একজন সুযোগ্য রাষ্ট্রীয় শাসকে পরিণত হন।

সেখানে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর স্বেচ্ছায় অবসর নেন। ইসলাম গ্রহণের পর হযরত খালিদ (রাঃ) মাত্র ১৪ বছর জীবিত ছিলেন। এ অল্প সময়েই তিনি মোট ১২৫ মতান্তরে ৩০০ টি ছোট-বড় যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তবে মজার বিষয় হল তিনি কোন যুদ্ধেই পরাজিত হননি (ইবনুল আছীর, তারীখে কামিল, ৪১৮ পৃঃ)।

ইলমে হাদীছে তাঁর অবদানঃ

ইসলাম গ্রহণের পর থেকে প্রায় মৃত্যু অবধি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান করেছেন। মহানবী (ছাঃ)-এর সান্নিধ্যে থাকার খুবই কম সুযোগ পেয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, জিহাদের ব্যস্ততা আমাকে কুরআনের বিরাট একটি অংশ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছে (আল-ইছাবা, ৪১৫ পৃঃ)। তারপরেও তিনি এ শিক্ষা থেকে একেবারে বঞ্চিত থেকেছেন তা নয়। বরং তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে যতটুকু সময় কাঁটাতে পেরেছেন তার সদ্ব্যবহার করেছেন। তিনি মোট ১৮ মতান্তরে ১৭টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তার মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ হাদীছ ২টি এবং বুখারী এককভাবে একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি ফৎওয়া বিভাগে সাধারণত বসতেন না। তাই তার ফৎওয়ার সংখ্যা দুটির বেশি পাওয়া যায় না।

ইন্তেকালঃ

খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) ৬৩৯ খ্রিঃ মোতাবেক হিজরী ২১ মতান্তরে ২২ সালে কিছুদিন অসুস্থ হন এবং ৬০ বছর বয়সে মদীনাতে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, তিনি ‘হিমছ’-এ মৃত্যুবরণ করেন। তবে এ মত ঠিক নয় বলে ধারণা করা হয়। কারণ খলীফা উমর (রাঃ) তাঁর যানাযায় উপস্থিত হন বলে ধারণা করা হয় (উসদুল গাবা ১/৯৫)। খালিদের মৃত্যুতে উমার (রাঃ) আফসোস করে বলেছিলেন, ‘নারীরা খালিদের মত সন্তান প্রসবে অক্ষম হয়ে গেছে।’ এমন কি তাঁর মৃত্যুতে খলীফা নিজে কেঁদেছিলেন (রিজালুন হাওলার রাসূল, ৩০৫ পৃঃ)।

উপসংহারঃ

খালিদ (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বীরের আসনে সমাসীন। সামরিক ক্ষেত্রে এবং রণাঙ্গনে তাঁর যে অবদান তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। পাশাপাশি এ কথাও স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, তিনি একজন যোগ্য শাসকও ছিলেন। পরিশেষে ‘খালিদ সাইফুল্লাহ’ নামক গ্রন্থের একটি উদ্ধৃতি দিয়েই শেষ করছি।

সেখানে বলা হয়েছে ‘আল্লাহ তা‘আলা খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর উপর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা ভুলবার নয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, আমরা যেন তার জীবনীর বিভিন্ন ঘটনাবলীকে নিয়ে চিন্তা করি এবং নিজেদের মধ্যে তাঁর গুণাবলীর সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করি। কারণ মুসলিম জাতির তাঁর গুণাবলী অবলম্বনের মধ্যেই যথার্থ স্বার্থকতা নিহিত’। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন। আমীন!!

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G