খুব দ্রুতই তিস্তা চুক্তি: মমতা

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৪৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডট কম

mamotaখুব দ্রুতই তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আশ্বাস দিলেন ঢাকা সফররত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার রাজধানীতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই), ফেডারেশন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স, কলকাতা (আইসিসি) আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সভা এবং দু’দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মমতা বলেন, ‘আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন, তিস্তা ইস্যু নিয়ে চিন্তা করবেন না। শিগগিরই এর সুরাহা হবে।’মমতা এই বলেও আশ্বস্ত করেন, সংবিধান সংশোধন বিল পাস হলে স্থল সীমান্ত কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি হলে এটা দু’দেশের জনগণের জন্য মাইল ফলক হবে।’

এসময় মমতা আরো বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সম্পর্ক ভাগ করা যায় না।’আমার ওপর আস্থা রাখুন। এটা আমাদের প্রবলেম (সমস্যা)। এটা আমাদের-আপনাদের সবার প্রবলেম।তিনি বলেন, আমি হাসিনাদির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গেও এ বিষয়েও কথা বলবো। বিষয়টি আমাদের ওপরই ছেড়ে দিন।

তিনি আরো বলেন, পদ্মা, মেঘনা, গঙ্গা, যমুনা নদী সবই আমাদের সবার। কেউ ভাগাভাগি করতে চাইলেও তা হবে না। আজ বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডায় মমতা ব্যানার্জি এ সব কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, গানে গানে দুই দেশের সমস্ত বাধা দূর হবে। দিস ইজ এ নিউ বিগিনিং (This is a new begining)। এটি একটি নতুন শুরু। সাংস্কৃতিক বন্ধনের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো বড় জায়গায় যাবে।মমতা বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসা করে বলেন, আপনাদের আতিথেয়তা ভুলবার নয়।

‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডায় সপ্রতিভ মমতা দুই বাংলার শিল্পীদের কাছ থেকে গান শুনতে চান। এর মধ্যে বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, আলমগীর, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদী মোহাম্মদ, ভারতীয় শিল্পী প্রসেনজিৎ, দেব, মুনমুন সেন, নচিকেতা, চিত্রনির্মাতা গৌতম ঘোষসহ অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আলতাফ মাহমুদের রচিত ২১ ফেব্রুয়ারির গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ অংশ নেন।

এরপর সবাইকে তিনি দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আহ্বান জানান। প্রথমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও পরে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডা শেষ হয়।

এদিকে, ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডার পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে মমতা ব্যানার্জি এতটাই সপ্রতিভ ছিলেন যে, তিনি নিজেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং তার সঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদু্জ্জামান নূর অংশ নেন।

এ আড্ডায় মমতা ‘মাটি’ শিরোনামে একটি কবিতা পাঠ করেন। পাঠের পরে তিনি বলেন, মাটি ও ভাষা সবটাই একাকার। তাই, ‘মাটি’ শিরোনামে এ কবিতাটা পড়লাম।তিনি বলেন, বিশ্বে পঞ্চম ও এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছে বাংলা ভাষা

অনুষ্ঠানে চিত্রনির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, আমি আবেগে আপ্লুত। এ দেশে আমার অনেক বন্ধু রয়েছেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, মমতার এ সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে।

 আলী জাকের বলেন, আপনার মধ্য দিয়ে বাংলা খুঁজে পাই। বাঙালি খুঁজে পাই। আপনি রাজনৈতিক মতপার্থক্য ঘোচানোর জন্য চেষ্টা করবেন। সবার বক্তব্য শেষে মমতা ব্যানার্জি বলেন, নিশ্চয়ই আমি মতপার্থক্য ঘোচানোর জন্য সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখবো।

তার সফরকে ইতিবাচক উল্লেখ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, অনেক আন্তরিকতা নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এ সফর আনন্দদায়ক হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসেছেন মমতা ব্যানার্জি। বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন দেখার আগ্রহের কথা জানার পরই মমতাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।

আজ বিকেলের দিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পাঁচটার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করার কথা রয়েছে মমতা ব্যানার্জির। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শহীদমিনারে পুষ্পমাল্য দেবেন।

ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনসহ দু’দেশের দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা নানা বিষয় মিটে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতার সফরসঙ্গীদের অনেকেই।

মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- সেখানকার নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু, দীপক আধিকারী, এমপি, অভিনেত্রী মুনমুন সেন, এমপি, মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র এবং অভিনেত্রী শতাব্দী রায়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত আটটা ৫০ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট-২৩০-এ করে ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

এ সময় তার সঙ্গে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসে। এর মধ্যে সঙ্গীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনির্মাতাও রয়েছেন।   বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ তাদের স্বাগত জানান।

প্রতিক্ষণ/এডি/রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G