খেজুর ও আখের গুড়ের জিলাপি
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
জিলাপি খাইতে হয় গরম গরম। ঠান্ডা জিলাপির কোনো মজা নাই।
দুইটা জিনিস খাইতে হয় গরম গরম -এক জিলাপি, দুই চা।
ঠান্ডা জিলাপি আর ঠান্ডা চা দুইই বিষ।’
-হুমায়ূন আহমেদ।
জিলাপি বা জিলিপি এক মজার মিষ্টি খাবার। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে যথা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশে এই মিষ্টান্নটি জনপ্রিয়। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে জিলাপি পাওয়া যায় না।
জিলাপির সর্বাধিক পুরনো লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায় মুহম্মদ বিন হাসান আল-বোগদাদীর লিখিত ১৩’শ শতাব্দীর রান্নার বইতে, যদিও মিসরের ইহুদিরা এর আগেই খাবারটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল। ইরানে এই মিষ্টান্ন জেলেবিয়া নামে পরিচিত, যা সাধারণর রমযান মাসে গরীব-মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানরা জিলাপি নিয়ে আসে।
বাংলাদেশে রমযান মাসে ইফতারিতে এটি একটি জনপ্রিয় খাবার। আর খাবারের সাথে সাথে জিলাপির প্যাচ কথাটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। জিলাপির প্যাচওয়ালা মানুষ অপছন্দ হলেও জিলাপি আমরা প্রায় সবাই ভালোবাসি। আর সেই জিলাপি পছন্দ করে না এমন লোক খুজে পাওয়া দায়। রমজানের ইফতারিতে তো জিলাপি ছাড়া অনেকের চলেই না। ভোজনরসিকদের খাদ্য মেন্যুতে জিলাপির রয়েছে বিশেষ চাহিদা। আবার গ্রামাঞ্চলে মিষ্টি বলতে তো জিলাপিই সবার জানা।
দেশে বাহারি নামের প্যাঁচ জিলাপি, রেশমি জিলাপি, চিকন জিলাপি ও শাহী জিলাপির মতো বিলাসিতার হাজারো জিলাপি থাকলে ও জীবন জীবিকার তাগিদে জিলাপি তৈরি করে এলাকার মানুষের কাছে বিখ্যাত বনে গেছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার লুধুয়া বজারের মোঃ ইস্রাফিল। তার তৈরি জিলাপির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর এক একটির ওজন আধা কেজি। প্রতিটি জিলাপির দাম ৫০ টাকা। এটি তৈরিতে চিনির পরিবতে ব্যবহার করা হচ্ছে খেজুর ও আখের গুড়ের মিশ্রণ ।
কোন ধরনের কৃত্রিম রং বা রাসায়সিক পদার্থ ছাড়াই খুব সহজ ফরমুলায় ফুটপাতে তৈরি এ জিলাপি এক জনের পক্ষে একা খাওয়া সম্ভব না। তবুও সুস্বাদু এ জিলাপি কিনতে অনেক দুর-দুরান্ত থেকেও প্রতিদিন অনেক মানুষ ভীড় করছে। নদী ভাঙ্গা কবলিত ফলকনের লুধুয়া মধ্য বাজারে বসেই প্রতিদিন প্রায় শতাধিক জিলাপি তৈরি করে বাজারেই বিক্রি করছেন ইস্রাফিল। স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনই তার প্রধান ক্রেতা। ইদানিং নদী দেখতে আসা লোকজন ও নদী পাড়ে গেলে ইস্রাফিল জিলাপি কিনতে ভুল করছেন না।
ইস্রাফিল জানান, তিনি একাই টানা ২৫ বছরের ও বেশি সময় ধরে তৈরি করছেন এ জিলাপি। তিনি আরো বলেন বংশানুক্রমে ২৫ বছর আগে বাবার হাতেই এ জিলাপি তৈরি করতে শিখেন। বর্তমানে তিনি জিলাপি বিক্রি করে চালিয়ে যাচ্ছেন ৫ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে ৯ জনের পরিবার। মেঘনার ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে তিনি ভিটে মাটি হারিয়েছেন।
কিন্তু অন্যদের মতো তার ভয় নেই। কারণ মেঘনা যতই ধেয়ে আসছে তিনি ততই সামনে যাচ্ছেন। সব জায়গায়ই সমান ক্রেতা। জিলাপি নিয়েই থাকতে চান, চালাতে চান তার জীবনের গাড়ি। যারা জিলাপি ভালোবাসেন শুধু তাদের পাশে থাকার আশা নিয়ে। এভাবেই চলছে জিলাপি আর ইস্রাফিলের জীবন।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ