গুলশান কার্যালয়ে থমথমে নীরবতা

প্রকাশঃ মার্চ ৪, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

gulshanবিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে এখন সুনসান নীরবতা।

সকাল থেকে আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনায় পবিত্র কোরআন পাঠ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের কথা থাকলেও এখনো কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

টানটান উত্তেজনা নিয়ে কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি, বিএনপির প্রধানের প্রটোকলের পুলিশের অবস্থান আর যথারীতি ফটকের সামনে রেজিস্টার খাতা নিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যদের অপেক্ষা- এই হলো গুলশান কার্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি।

দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বুধবার আদালতে হাজির করার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

তিনি গ্রেফতার হতে পারেন- এমন আলোচনাও চলছে সর্বত্র। দুর্নীতির দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার বিরুদ্ধে জামিন চাইতে আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। আদালতে জামিন চাইতে গেলে কার্যালয়ে ফিরতে না পারার আশঙ্কা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের।

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি এখন গুলশান কার্যালয়ে। খালেদা জিয়া কি কার্যালয়ে থাকছেন? তাকে কি গ্রেফতার করা হবে?- এইসব প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে। কার্যত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের গতিপথ কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আজ কী ঘটে তার ওপর।

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রয়েছেন কার্যালয়ে।

গুলশান সূত্র বলছে, খালেদা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছেলের চেহলাম পালনের।

কোকোর মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্ণ হয়েছে আজ বুধবার। দিনব্যাপী মিলাদ ও কুরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা হবে বলে খালেদার মিডিয়া উইং থেকে বলা হচ্ছে। বাদ আসর হবে কোকোর জন্য বিশেষ মোনাজাত।

ছেলের জন্য দোয়া জানাতে দেশবাসী ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের কাছে আহবান জানিয়েছেন খালেদা।

অবস্থাদৃষ্টে অনেকেরই ধারণা, খালেদা আদালতে এসব কারণেই যাচ্ছেন না। ছেলের চেহলামের দিনে কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকে তাকে গ্রেফতার করবে বা তল্লাশি চালাবে, এমনটি ভাবতে চাইছেন না অনেকে। কারণ, এদেশে পরিবার ও ধর্মীয় আচারকে গুরুত্ব দেওয়া হয় অনেক বেশি।

এছাড়া নিজেরই দেওয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ভেঙেও আদালতে যাওয়ার কথা নয় খালেদার।

উল্লেখ্য, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

একই সঙ্গে কোনো আসামি না থাকায় মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করে ৪ মার্চ দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, জামিন সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে বিএনপির চেয়ারপারসন বুধবার আদালতে যাবেন।

এর আগে নানা কারণ দেখিয়ে দুই মামলার শুনানির নির্ধারিত ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৬ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন বেগম খালেদা জিয়া। মাত্র সাতদিন হাজির হন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার প্রাক্তন সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসাীয় শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার প্রাক্তন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলায় হারিছ চৌধুরী শুরু থেকে পলাতক।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। গত বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে মামলা দুটিতে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায়।

প্রতিক্ষণ /এডি/ মাহমুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G