গোপালগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে প্রসিদ্ধ খেজুর গুড়
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জ জেলার প্রসিদ্ধ খেজুরের গুড় বিলুপ্ত প্রায়। গ্রাম-বাংলায় খেজুর গাছ তেমন আর চোখে পড়ে না। এক সময় শীতের সকালে গাছীদের রস সংগ্রহ করে বাড়িতে বাড়িতে মহিলাদেরকে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। কিন্তু এখন সে দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম খেজুর গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, শীত মৌসুম শেষ হলেও গাছীরা এখনও গাছ কাটা শুরু করেনি। খেজুর গাছও প্রায় বিলীন হতে চলেছে। গাছীরাও অন্য পেশায় চলে যোগ দিচ্ছে।
ঘোষেরচর ইসলাম পাড়ার এক খেজুর গাছী মোঃ তুহিনুর রহমান জানান, বর্তমানে খেজুর গাছ কেটে আগের মত লাভ হয় না। আগে গাছে যে পরিমাণ রস পাওয়া যেত তার অর্ধেকও এখন পাওয়া যায় না। তাছাড়া খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় যে পরিমাণ রস পাওয়া যায় তা বিক্রি করে গাছের মালিককে দেয়ার পর সারাদিনের পরিশ্রমের মূল্য হয়না।
বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অধিক ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে খেজুর গাছ।
এছাড়া ইটের ভাটায় ইট
পুড়ানোর ও কুমারদের হাড়ী পাতিল পোড়ানোর প্রধান জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে খেজুর গাছ। জমিতে অধিক পরিমাণ সার ব্যবহারের ফলে খেজুর গাছ রস শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, আখের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা অনুসারে চিনি ও গুড় পাওয়ার কারনে খেজুর গাছের গুড়ের প্রয়োজন পড়ে না। বিনা খরচে অনাদরে বাড়ীর পাশের ভিটা পতিত জমিতে রাস্তার পাশে সারি সারি বেড়ে উঠা খেজুর গাছগুলোকে কেটে ফেলে বিদেশী জাতের গাছ লাগানো হচ্ছে অধিক মুনাফা লাভের আশায়।
বর্তমানে ভরা মৌসুমেও স্থানীয় হাট-বাজারে খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করতে দেখা যায় না। ২-৩ বছর পূর্বে শীত মৌসুমে ৩০-৩৫ টাকা দামে বিক্রি হত প্রতি কেজি গুড়। পার্শ্ববরর্তী কয়েকটি জেলা থেকে গুড় আমদানী করে ১০০-১২০ টাকা হারে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ স্থানে বাজারের একটা অংশ জুড়ে ছিল গুড়ের হাট। খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আর আগের মত শীতের সকালে গ্রামের বাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী দুধ চিতই, ভাপা, পুলি-পায়েষ তৈরী হয় না। যে হারে খেজুর গাছ বিলুপ্ত হচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছর পর জেলার কোথাও খেজুর গাছ দেখা যাবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রতিক্ষণ/এডি/ এল জেড