ঘুরে আসুন রাজবন বিহার

প্রকাশঃ মার্চ ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ১২:১৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Rajban_Bihar-672x469“রাঙ্গামাটি” প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। এখানকার লেক, ঝরনা, বিস্তির্ন নীল আকাশ, পাহাড় সর্বপরি আদিবাসি মানুষের সাধারন সহজ-সরল জীবন আপনাকে বিমহিত করবে। এখানে যেদিকে তাকাবেন নজরে পড়বে কেবল পাহাড় আর কাপ্তাই লেকের পানি।

বিশাল কাপ্তাই লেকের পুরোটাই যেন অপার মমতায় দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছে পাহাড়গুলি। আকাশের মেঘ আর তার নীলাভ আভা খেলা করে লেকের জলে, দূরে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যায়, আবার যেন উকি দিয়ে দেখে নেয়, কেমন আছে লেক।

হলফ করে বলা যায়, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টান আপনাকে টানবেই। আর এখানের আকর্ষণীয় একটা জিনিস হলো রাজবন বিহার।

রাজবন বিহার বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে বনভান্তে লংদু এলাকা থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাঙামাটি আসেন। বনভান্ত এবং তাঁর শিষ্যদের বসবাসের জন্য ভক্তকূল এই বিহারটি নির্মান করে দেন। চাকমা রাজা দেবাশিষ রায়ের তত্ত্বাবধানে রাজবন বিহার রক্ষণাবেক্ষনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাজবন বিহার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থল।

এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই তীর্থস্থান এই রাজবন বিহার। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধ ভিক্ষু) আবাসস্থল ও বনভান্তের ভোজনালয়। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজ বন বিহারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।

খানিক আগে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেছে রাঙামাটির ঘন সবুজ পাহাড়ি উপত্যকা। দূর পাহাড়ের মাথার ওপর নেমে এসে আবারও সম্ভবত বৃষ্টি নামানোর পাঁয়তারা করছে মেঘদল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে না জানা বৃক্ষ আর লতাগুল্মের সারি। তারপর আচমকা হোঁচট খেয়ে যেন থেমে গেছে হ্রদের পানি দেখে।

ছোট-বড় সবুজ টিলার গা ঘেঁষে দূরে কোথায় মিলিয়ে গেছে পাহাড়বাসী হ্রদ। বৃষ্টির উৎপাতেই বুঝি হালকা মেটে রং ধরেছে তার শরীরে। এককোনায় কয়েক জোড়া নাও বাঁধা। হ্রদের এপাড়ে কিংবা ওপাড়ে। কোথাও কেউ নেই। এসব কিছু থেকে চোখ তুলে ওপরের দিকে তাকালে আবারও আরেক দফা শ্বাসরুদ্ধকর সবুজ দুনিয়া। গম্বুজের সুচালো মাথা উঁকি দিচ্ছে রাশি রাশি সবুজের মাঝখান থেকে।

রাজবাড়ীর সামনের ঢালু রাস্তার মাঝখানটায় থেমে আলোকচিত্রী বন্ধু আঙ্গুল তোলেন দূরে-‘ওই যে দেখছেন, ওইটাই রাজবনবিহার। চলেন, আপনাকে ঘুরায়ে আনি।’ তর্জনী তাক করে ঠিক কোন জায়গাটা দেখানোর চেষ্টা করেন, বুঝে উঠতে পারি না ঠিক। আবার মনে মনে ভাবি,’ রাজবনবিহার? সে আবার কী? রাজারা সেই আমলে বন-জঙ্গলে শিকারে-টিকারে বেরোতেন বলে শুনেছি। রাজবনবিহার কি সে রকমই কিছু? তার পিছু নেওয়ার আগে পলকের জন্য মনের চোখে পুরোনো দিনকার রাজা-রাজড়াদের কল্পিত ছবি ভাসে।

একটা পাহাড়ের মাথায় আছি আমরা। ওপারের পাহাড়েই রাজবনবিহার। জঙ্গলের পাখিগুলোর মতো ফুড়ুত করে উড়ে যেতে পারলেই বুঝি বেশ হতো। কিন্তু মানুষ হওয়ার হুজ্জত অনেক। তাই আমাদের পাহাড় বেয়ে নামতে হয় নিচে। তারপর সরু লিকলিকে খালটা পেরিয়ে চড়তে হয় পাশের বামুন পাহাড়ের মাথায়।

খিঁচ খিঁচ। খোঁয়াক খোঁয়াক। রাজবনবিহারের সামনের মাঠটায় পদার্পণ করতে না করতেই শাখামৃগদের নিজস্ব ভাষায় সাদর সম্ভাষণ। শব্দের উৎস খুঁজে বের করার আগেই তিড়িং-বিড়িং তিন লাফ দিয়ে সামনের মাঠে নেমে আসে তিন বানর। নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে বেজায় রকমের ঝাপটাঝাপটি শুরু করে তারা। সামনের মাঠেই একদল মনুষ্য সন্তান ক্রিকেট না কী যেন খেলছে, তাদের পেছনে রেখে বানরের কুস্তি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় আমাদের।

শাখামৃগ পরিবেশিত লম্ফঝম্প ক্রীড়া উপভোগ শেষে আমরা এগোই রাজবনবিহারের মূল ভবনের দিকে। ততক্ষণে অবশ্য জানা হয়ে গেছে, এই জায়গাটা আসলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। প্রতিবছর কঠিন চীবর দান উৎসব হয় এই রাজবনবিহারেই। ভিক্ষুদের ধ্যান-সাধনার জন্যই নাকি এই বিহারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রাজারা।

রাজবনবিহারের সম্মুখ ভবনের সিঁড়িতে ওঠার আগে জুতো খুলে রাখা নিয়ম। খালি পায়ে আমরা সিঁডি ডিঙিয়ে পা রাখি রাজবনবিহারের মূল প্রাঙ্গণে। এ যেন আরেক দুনিয়া। ঘাসে ঢাকা চত্বরে বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন ভিক্ষুরা। সুবিশাল বৌদ্ধ মূর্তির সামনে উপবিষ্ট আছেন কেউ কেউ। ত্রিভুজাকৃতির গম্বুজওয়ালা ভবনগুলোর সামনের একটা জায়গায় আগুন জ্বলছে। বিহার প্রাঙ্গণে এদিক-ওদিক ঘুরঘুর করছিলাম। এর মধ্যেই চোখে পড়ল বানর (নাকি হনুমান?) মূর্তিগুলোর ওপর।

ডান দিকের চাতালের মাথায় আছে সুবিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি। সামনের চত্বরে উপবিষ্ট কয়েকজন ভিক্ষু। সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই। এই সময়টায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম। কোথাও কেউ উচ্চ স্বরে কথা বলছে না। নাগরিক কোলাহল নেই। হাঁকডাক নেই। সব মিলিয়ে আশ্চর্য এক নীরবতা দাপিয়ে বেড়ায় বিহারের আনাচ-কানাচে।

কিভাবে যবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গমাটি যায় শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া সাড়ে ৮শ’ টাকা। এছাড়া ডলফিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদিা নন এসি বাসও যায় রাঙ্গামটি। ভাড়া জনপ্রতি সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি বিশ মিনিট পর পর রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

প্রতিক্ষণ/এডি/রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G