ঘুরে আসুন ‘সিলেটের সুন্দরবন’
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা নিকেতন দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। হযরত শাহজালাল (রহ:), শাহ পরান (রহ:) এর পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত এই সিলেটের প্রতি ভ্রমণ পিপাসু মানুষের রয়েছে অন্যরকম আকর্ষণ। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সিলেটের সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য অনন্তকাল ধরে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে।
আমাদের দেশে পর্যটনের মৌসুম শীতকাল। এ সময় বেড়ানোর ধুম পড়ে চারদিকে। কিন্তু সিলেটে সারাবছরই নানা কারণে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত মানুষের ভিড় লেগে থাকে।
তবে শীত মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে সিলেট, কারণ শীত মৌসুমে সিলেটের সৌন্দর্য আলাদা রূপ ধারণ করে।
আর সিলেটের এ সৌন্দর্যকে আরো মনোরম করে তুলেছে, সুন্দরবন খ্যাত রাতারগুল। যেটি বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন । বছরে ৪ থেকে ৫ মাস পানির নিচে ডুবে থাকে এই বন। বর্ষায় এর সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। এসময়ই দেশি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে বনটি। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বাকি সময়টুকুতে কোমর জলে ডুবে থাকা বনটির সৌন্দর্যও নেহায়েত কম নয়।
বনে ঘোরার একমাত্র মাধ্যম ডিঙ্গি নৌকা। তবে বর্ষা এবং ‘কোমর পানির’ মৌসুমে বেড়ানোর মধ্যে যে পার্থক্যটা তা এখানে না এলে বুঝা মশকিল। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ বনটি মূলত সাপের জন্য বিখ্যাত। হঠাৎ চোখে পড়ে যেতে পারে গাছে পেঁচিয়ে থাকা কোনো সাপ। আবার কপাল ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে একদল বানরের সাথে। এছাড়া টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ির মতো নানান প্রজাতির পাখিতো বনের ভেতরে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকছেই।
কোথায় এই সুন্দরবন:
সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বন অবস্থিত। প্রথমে গাড়ির পথ। তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে বনের কাছাকাছি গিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে বনে ঢুকতে হবে।
যাবেন যেভাবে:
রাতারগুল যাওয়ার দুটি পথ আছে। সিলেট এয়ারপোর্টের পেছনের বাইপাস রোডে ফতেহপুর হয়ে হরিপুর দিয়ে যাওয়া যায়। আবার জাফলং দিয়েও যাওয়া যায়। জাফলং দিয়ে যেতে হলে গোয়াইনঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যায়। ভাড়া নেবে ১২০০-১৫০০ টাকা। সেখান থেকে ডিঙ্গি নৌকায় রাতারগুল। ভাড়া নিবে ৫০০-৮০০ টাকা। এই পথের বিশেষত্ব হলো, নৌকায় যেতে যেতে আপনার সঙ্গী হবে দূরের মেঘালয়ের পাহাড়। আর চারিপাশের ছিমছাম মনোরম পরিবেশ।
এছাড়া আরেকটি তুলনামূলক সহজ পথ রয়েছে। সিলেটের আম্বরখানা মোড় থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে মোটরঘাট যাওয়া যায়। যেতে সময় লাগবে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা । সেখান থেকে নৌকা রিজার্ভ করেও রাতারগুল যেতে পারবেন। তবে যেদিক দিয়েই যান না কেন, আপনাকে সিলেট হয়েই যেতে হবে।
রাতারগুলে থাকা-খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যাওয়ার সময় হালকা কিছু খাবার সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। আর থাকার জন্য সিলেটেই ফিরে আসতে হবে।
আরো কিছু অল্প কথা:
দুপুর টাইমে বনে না যাওয়াই ভালো। যদি যাওয়া হয়, তবে রোদের জন্য ছাতা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে খুব সকালে গেলে অনেক পাখি দেখতে পাওয়া যায়। পাখির কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশটাই মনে হবে প্রাণবন্ত। আর সকালে আবহাওয়াটাও ঠাণ্ডা থাকে। তাছাড়া শেষ বিকেলের দিকেও যাওয়া যেতে পারে।
পরিবহন:
রাজধানীর সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসি-নন এসি বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে উত্তরা থেকেও এনা পরিবহনের বাসে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন। বর্ষা মৌসুমে রাতারগুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, কবির আবেগ-অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে এভাবে…
ডিঙ্গি নৌকা চলতে গিয়ে
শুনবে পানির সুর,
সকাল থেকে সন্ধ্যা হবে
পাবে না তার কূল।
উদাস হয়ে চলতে গেলে
বাতাসে ভাসে চুল,
নজর কাড়ে চোখ ঘোরালে
রূপসী রাতারগুল।