ঘুরে আসুন স্বপ্নময় স্বপ্নপুরী
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতিক্ষণ ডটকম:
বিনোদন ও পিকনিকের জন্য এক অসাধারণ ও অনির্বাচনীয় কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। সেখানে একবার গেলে বার বার যেতে মন ছটফট করে। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ৫২ কিলোমিটার এবং ফুলবাড়ি উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের গহীন বনজঙ্গল ও মজা পুকুর সংস্কার করে প্রায় ১শ’ একর জমির উপর নির্মিত স্বপ্নপুরী নির্মিত হয়েছে।
স্বপ্ন নয়, অথচ স্বপ্নের মতো সুন্দর নিরিবিলি এক নয়নাভিরাম মোহন-মায়াবী স্বপ্নময় ভুবন। বেসরকারি পর্যায়ে এই বিনোদন কেন্দ্রটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। বছরের প্রতিটি দিনই শত শত মানুষ এখানে পরিবার- পরিজন নিয়ে আসে বিনোদনের জন্য। তবে শীত মওসুম শুরুর সাথে সাথে পুরোদমে শুরু হয় পিকনিক পার্টির ভিড়। বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার- মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা ভ্যান, টেম্পো এমনক পায়ে হেঁটেও বিনোদন প্রিয় মানুষ আসেন এখানে। স্বপ্নপুরীকে মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো সাজানোর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদী। ইতোমধ্যে ২০/২৫টি চলচ্চিত্র, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হয়েছে এখানে।
স্বপ্নপুরীতে এসে পৌঁছলে স্বাগত জানাবে স্বপ্নপুরীর গেটে দন্ডায়মান দুটি বিশাল আকৃতির পরীর প্রতিকৃতি। এ দুটি পরী তাদের দু’ডানা প্রসারিত করে ও একহাত উঁচু করে গেটের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গেট পেরিয়ে পথের দু’ধারে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। তারপর চোখে পড়বে পথের দু’ধারে সারি সারি দেবদারু গাছ। দেবদারু গাছের দু’পাশে নারিকেল গাছের সারি। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে পড়বে, সেই গানটি-
“এ পথ যদি আর শেষ না হয়,
তবে কেমন হতো, তুমি বল তো।”
এখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ, পাহাড়, লেক, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি ও ফুলের সমারোহ, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, ইটখোলা, কৃত্রিম ঝর্ণা, ঘোড়ার রথ, হংসরাজ সাম্পান, শালবাগান, খেলামঞ্চ, নামাজঘর। কুঞ্জ, ভাস্কর্য, ডাকবাংলো, মাটির কুটির, বাজার প্রকৃতিতে বাংলাদেশের মানচিত্র। যেন এক মোহন-মায়াবী স্বপ্নিল ভুবন।
কয়েক ভাগে বিভক্ত করা এই স্বপ্নময় জগতের পথ চলতে চলতে দেখা যায়, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা ঘাড়গুঁজো বসে থাকা অবসন্ন কৃষকের ভাস্কর্য। সেখানে সারিবদ্ধ চেয়ার, টুল বসানো আছে। হংসরাজ সাম্পানে চড়ে স্বচ্ছ নীল পানির লেকে হারিয়ে যাবেন কিছুক্ষণের জন্য স্বপ্নের জগতে। সাম্পানে যেতে যেতে দেখা যাবে কোথাও একাকী দাঁড়িয়ে আছে নারী, মাথা নিচু করে বসে আছে হতাশাগ্রস্ত যুবক অথবা ফুটে আছে বিশালকৃতি কচুপাতা।
এছাড়াও রয়েছে কৃত্রিম পশু দুনিয়া। প্রবেশ পথে দুটি ড্রাগন সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেয়ালে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় হিংস্র প্রাণীদের প্রতিকৃতি। এরপর দু’এক পা ফেলতেই চমকে উঠবেন; সামনেই পথ জুড়ে হাঁ করা এক নর-করোটি দেখে! এই নর-করোটির মুখের ভেতর দিয়েই মূল পশু দুনিয়ার পৌঁছতে হবে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে, কৃত্রিম পাহাড় ও ঝর্ণা। ঝর্ণার পানি গড়িয়ে একটি ছোট জলাশয়ে পড়ছে। লেকের পাশে রয়েছে ২৫০০ বর্গফুট বিস্তৃত বাংলাদেশের মানচিত্র, যা ইট-সিমেন্ট দিয়ে সুন্দরভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই স্বপ্নময় স্বপ্নপুরীতে ইচ্ছা করলেই দু’একদিন থাকাও যাবে। এ জন্য রয়েছে নিশিপদ্ম, নীলপরী, সন্ধ্যাতারা, রজনীগন্ধা মেঠোঘর এবং ভিআইপি কুঞ্জ নামের পাঁচটি মনোমুগ্ধকর বাংলো। অবসর যাপনের জন্য এসব বাংলোগুলো ভাড়া দেয়া হয়। এখানে অল্প দামে খাবারের সুব্যবস্থা আছে।
স্বপ্নপুরীতে শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক, রয়েছে দোলনা ও চরকিতে ঘোরার ব্যবস্থা। রয়েছে ঘোড়ার ওপর চড়ে ঘোড়া চালনা, সুদৃশ্য ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘোড়ার গাড়ির উপরে রয়েছে সুদৃশ্য রঙিন ছাতা, যা চলার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে। এছাড়াও রয়েছে অফিস চত্বরে কেনাকাটার জন্য বাজার, রেস্টুরেন্ট।
রয়েছে রান্নার সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাড়া চুলা। চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিলসহ ডেকোরেশনের সব জিনিস ভাড়া পাওয়া যায় এখানে। আছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব সড়কপথে ৪১৪ কিলোমিটার এবং রেলপথে ৪৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া খুলনা ও রাজশাহী থেকে সড়কপথ ও রেলপথে দিনাজপুর আসা যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাস ছাড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এ পথে ভাল বাস সার্ভিস হলো- হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এসএ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন। । এছাড়া আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে নেমে এখানে আসা যায়।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল