ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। পর্দা কাঁপানো এই ঢালিউড কন্যার ছবি মানেই রোমান্টিক গল্প আর সিনেমা হলে নারী দর্শকদের উপস্থিতি। একের পর এক সুপার হিট ছবি উপহার দিয়ে শিশির সিগ্ধ নায়িকা শাবনূর পেয়েছেন ঢালিউডের রাজকুমারীর খেতাব। ঢালিউড যাত্রার শুরুটা শুভকর ছিলো না শাবনূরের জন্য। খ্যাতনামা পরিচালক এহতেশামের চাঁদনি রাতে ছবির মাধ্যমে শাবনূরের অভিষেক ঘটলেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যার্থ হয় ছবিটি। এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের সাথে জুটিবদ্ধ হয় তুমি আমার ছবিতে। আর এই ছবির ব্যাবসায়িক সাফল্যই পাল্টে দেয় শাবনূরের ঢালিউড যাত্রার সব হিসাব নিকাশ।
তোমাকে চাই, জীবন সংসার, চাওয়া থেকে পাওয়া, আনন্দ অশ্রু প্রভৃতি ছবির মাধ্যমে একটু একটু করে ঢালিউডের অপ্রতিদদ্বী নায়িকা হিসেবে মেলে ধরতে শুরু করেন নিজেকে। সালমান শাহের মৃত্যুর পর কিছুটা ছন্দ পতন ঘটলেও রিয়াজের সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে আবারো হাঁটতে শুরু করেন নিজ গন্তব্যে। বিয়ের ফুল, ভালবাসি তোমাকে, নারীর মন, কাজের মেয়ে, এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে, পৃথিবী তোমার আমার, মোল্লাবাড়ির বউ, প্রেমের তাজমহল শাবনূর -রিয়াজ জুটির বক্স অফিস কাঁপানো ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। মান্না, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সাথে জুটিবদ্ধ হয়েও শাবনূর দর্শকদের উপহার দিয়েছে দর্শকনন্দিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র। এরমধ্যে স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, বউ শাশুড়ির যুদ্ধ, প্রেমের জ্বালা, আমার প্রাণের স্বামী, এক টাকার বউ, বলবো কথা বাসর ঘরে উল্লেখ্যযোগ্য।
সরাসরি পাঠকদের ভোটে মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কারও ১০ বার পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। ২০০৫ সালে দুই নয়নের আলো চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ঘরে তুলেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। চলচ্চিত্রের মন্দা অবস্থার মধ্যেও শাবনূরের একচেটিয়া সাফল্যের এই গতি মন্থর হয়ে হয়ে আসে শাবনূরের বিয়ে, মুটিয়ে যাওয়া, অস্ট্রেলিয়া স্থায়ী হওয়া- না হওয়ার ঘটনায়। পুত্র সন্তানের জন্মের পর, অনেকটাই চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যেতে থাকেন দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত এই অভিনেত্রী। সর্বশেষ পাগল মানুষ ছবির অসমাপ্ত কিছু কাজ ও বিজ্ঞাপনচিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ঘোষণা দিয়েছিলেন আবারো চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার। কিন্তু ঘোষণা দিলেও নতুন কোন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হননি শাবনূর।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের গল্প নির্ভর একটি চলচ্চিত্রের পান্ডুলিপি শাবনূরের পছন্দ হলেও স্বামী, সংসার ও পরিবার নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় এই ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধ হবেন কিনা এই নিয়ে রয়েছেন, দ্বিধা দন্দে। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শাবনূর জানায়,
চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য লম্বা সময় ও পরিকল্পনা করে কাজ করতে হয়। আর এই যথাযথ পরিকল্পনা ও সময়টা বের করা আমার জন্য এই মুহূর্তে একটা কঠিন ব্যাপার। তাই একজনকে সিডিউল দিয়ে তার শুটিং পরে করার মানুষ আমি নই। এজন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হব কিনা তা নিয়ে কিছুটা বিচলিত অবস্থার মধ্যে রয়েছি। তবে চলচ্চিত্রে ফেরার ইচ্ছে অবশ্যই আছে। তবে এখন থেকে যেনতেন বাজেট, গল্প ও অদক্ষ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে নেই। আর এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলে অবশ্যই সবাইকে অবগত করব।’
সর্বশেষ, ২০১৩ সালে কিছু আশা কিছু ভালোবাসা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিলো শাবনূরকে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের বিদেশ, অবুঝ ভালোবাসা ও এমনোতো প্রেম হয় চলচ্চিত্র। কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে চুক্তিবদ্ধ হলেও, নতুন ছবিতে কাজ শুরুর ব্যাপারে রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। শাবনূর ভক্ত ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা আবারো চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন তিনি। দক্ষ অভিনয় শৈলীর মাধ্যমে মাত করবেন এদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের হৃদয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস. আর. এস