চলমান আন্দোলন অস্ত্র দিয়েই দমন করা হবে

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৯:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৩ অপরাহ্ণ

bbcনিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে বলেছেন, অস্ত্র দিয়েই এ সন্ত্রাস দমন করা হবে এবং শিগগিরই দেশের পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।

তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, অস্ত্র বা শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের সুযোগ নেই।

রোববার ঢাকায় বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি সংলাপের তারা এসব কথা বলেছেন।

এবারের পর্বে মূলত বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতির গন্তব্য, সহিংসতার দায় এবং সমাধানের সম্ভাবনার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সারাদেশেই সব মানুষের জন্য আতঙ্ক ও উদ্বেগের বিষয় যে সহিংসতা চলছে এবং ক্রমাগতভাবে তা বাড়ছে। সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোন নিশানা দেখা যাচ্ছেনা। উভয় রাজনৈতিক শক্তিই এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী”।

এ প্রশ্নের জবাবে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “সংকটটা রাজনৈতিক। দেশের সাধারণ মানুষ এ সংকট তৈরি করেনি। এটা রাজনৈতিক সংকট আর তাই রাজনৈতিক ভাবেই এর সমাধান করতে হবে। দু প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে, আর তা হলো- আমরা স্বাভাবিক জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই”।

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার কারণেই চলমান রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়েছে। মূলত সংকটের জন্য সরকার দায়ী। কারণ তারাই এ সংকটের সূচনা করেছে। তবে যারা রাজনীতি করছেন তারা সবাই কমবেশি দায়ী”।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা এখন আর নেই। এখন পরিস্থিতির জন্য আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। তারা ভুল করেছে নির্বাচনে না গিয়ে তার খেসারত জনগণ কেন দেবে?

তিনি আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দল তার চরিত্র পাল্টিয়ে তাদের সাথে সমঝোতার কোন প্রশ্ন উঠে না। তাদের রাজনৈতিক চরিত্র আর নেই। তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। সরকার কঠোর হাতেতা দমন করবে। এ দায়িত্ব সরকারের। শীগগিরই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে”।

১/১১ র দিকে যাত্রা ?

এক দর্শক চান, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের অনমনীয় অবস্থান কি বাংলাদেশকে আবার ১/১১ র মতো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ?

এ প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “মারাত্মক অনিশ্চয়তা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যারা গুম খুনের সাথে জড়িত তারা দেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে”।

কামরুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পিতভাবে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এ সহিংসতা করা হচ্ছে। এটা কোন আন্দোলন নয়। আমরা সন্ত্রাসীদের নির্মূলের চেষ্টা করছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই তা হবে”।

একজন দর্শক বলেন, “এতো দমন পীড়ন কেন হচ্ছে বিএনপির উপর”? আরেকজন দর্শক বলেন, “সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?”
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “ দেশের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ভর করবে দলগুলোর উপর। ১/১১ কোন সমাধান নয়”।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “উভয় পক্ষ নমনীয় না হলে একপক্ষ সহিংসতা আর অন্য পক্ষে পুলিশী রাষ্ট্র করবে। এটার অবধারিত পরিণতি হবে পরস্পরকে নির্মূল নয়, বরং তারা আত্মহননের দিকে চলে যাবে”।

তিনি আরও বলেন, “একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে। আবার এখন বলা হচ্ছে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আর বিএনপির কি হবে জানিনা কিন্তু দেশের গণতন্ত্রের ভাগ্য নিশ্চিহ্ন করার দিকে নেয়া হচ্ছে”।

অভিযান নাকি আলোচনা ? সমাধান কোন পথে ?

আলাউদ্দিন নামে এক দর্শক জানতে চান, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেই কি বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান নিহিত, নাকি রাজনীতিবিদরা আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারবেন” ?

এ প্রশ্নের জবাবে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “রাজনৈতিক সংকটের সমাধান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী করতে পারবে না, দলগুলোকেই করতে হবে”।

কামরুল ইসলাম বলেন, “এ সমস্যা রাজনৈতিক নয়। এটা রাজনৈতিক সংকট নয়। এটা সন্ত্রাস অরাজকতা। এটা জনদুর্ভোগ। আলোচনার মাধ্যমে এর মীমাংসা করা যায় না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা দিয়েই এর সমাধান করতে হবে”।

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “ অত্যাচার নির্যাতন পাকিস্তান বাহিনীর চেয়ে বেশি কেউ করেনি। কিন্তু টিকতে পারেনি। এখন যারা বিএনপিকে সন্ত্রাসী বলতে চায় একদিন তারাই বিলীন হয়ে যাবে”। সংকটের সমাধান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ আমি আশাহীন নই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দেখে দেশের অবস্থা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ নিবেন”।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপিকে জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে। আওয়াম লীগকে এরশাদকে ত্যাগ করতে হবে। এরপর সমঝোতার জন্য জাতীয় সংলাপ কিভাবে করা যায় সেটি দেখতে হবে।

স্থায়ী সমাধান দরকার ?

সাইফুল ইসলাম শিমুল নামে এক দর্শক জানতে চান, নির্বাচন নিয়ে গভীর সংকটের মুখোমুখি হওয়ার যে একটি অবস্থা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের সাময়িক পথ না খুঁজে সবার কি উচিত এখনই একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া ?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এখন যা চলছে সেটি ক্ষমতা কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব। সমাধানের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমূল ঢেলে সাজাতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, স্থায়ী সমাধান হচ্ছে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা। জামায়াতের কারণেই বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। তবে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের সাথে আলোচনা হতে পারে না। কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে।

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। তার আশা প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজনৈতিকভাবেই সমাধানের উদ্যোগ।

প্রতিক্ষণ/এডি/জামিল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G