চার বছরেও শেষ হয়নি ৪৮ ঘন্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হলো আজ। তবে এতদিনেও এ ঘটনার তদন্ত করে খুনিদের চিহ্নিত বা গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাবসহ সরকারের একাধিক সংস্থা। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রথমে স্থানীয় থানা, পরে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তবে অবাক করা বিষয় হলেও সত্য যে, ঘটনার দুইমাস পর তদন্তের বিষয়ে উচ্চ আদালতে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন ডিবির কর্মকর্তারা। এরপর র্যাব এই মামলার তদন্ত ভার পায়।
প্রায় সাড়ে তিনবছর ধরে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান বা র্যাব। মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার জন্য নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশও রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৯ বার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনো এই তদন্তের কোনো কিনারা হয়নি।
চারবছরেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কিনারা না হওয়ায় হতাশ তাদের স্বজনরাও। হতাশ মেহেরুন রুনির ভাই, মামলার বাদী নওশের আলম। তিনি বলছেন, আমরা তো আসলে কোন আশা দেখি না। বরং প্রতিদিনই হতাশা বাড়ছে। কেন এতদিনেও মামলার রহস্য জানা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন আমাদেরও। হয়তো যারা তদন্ত করছে, তাদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে। আর সেটি না হলে, হয়তো প্রভাবশালী কেউ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সেজন্য ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে।
নওশের আলম বলছেন, মামলাটির তদন্ত আদৌ হচ্ছে বলেই মনে হয় না। চার বছরেও কোন প্রকার আপডেট আমাদের কাছে নেই। আমরা জানতেও পারি নাই কিছু হয়েছে কি না।
তিনি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে একসময় যোগাযোগ করতাম। তাদের সাথে ছিলামও। তিন চার মাস আগে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, আমরা কিন্তু জানি না। র্যাব কিছু বলেও না আমাদেরকে। যার জন্য হতাশা থেকে আর কিছু জিজ্ঞাসাও করা হয় না।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ৪০টি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা অর্ধশত আলামতের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষাগার থেকে পাওয়া প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, দুটি পৃথক ডিএনএ নমুনার সঙ্গে যাদের ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া যাবে তারাই ঘাতক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ডিএনএ নমুনার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, দুটি ডিএনএ নমুনা বহনকারীই ঘাতক। ঐ দুই ডিএনএ নমুনা জাতীয় ডিএনএ ভান্ডারে থাকলে, তার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানেই থেমে আছে মামলার সব তদন্ত। এরপর দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ কারণে কারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল, কী কারণে তাদের খুন করা হলো- এসবের কোনো কূলকিনারা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। ঘটনার রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২, রশিদ লজ অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে সাগর ও রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যার ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু ৪৮ মাস পার হয়ে গেলেও, এই হত্যা রহস্য এখনো অমীমাংসিত। ধরা পড়েনি হত্যাকারীরাও।
এই দম্পতির একমাত্র সন্তানটি এখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বাবা মায়ের নানা স্মৃতির কথা সে প্রায়ই বলে। নিষ্পাপ এই শিশুটির বাবা-মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়তো একদিন হবে, হয়তোবা না। তবে আজকালের কলুষিত এই রাজনীতিতে আর কোনো শিশু যেন এমনভাবে তার বাবা-মাকে না হারায় এটাই সবার কামনা।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি