চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের প্রতি নিহতদের পরিবারের ক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার গঙ্গাদাসপুর গ্রামে খুনের ঘটনায় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতদের পরিবার।
জানা যায়,গতকাল সোমবার রাতে সরকারি ১১৬ বিঘা খাস জমির নিয়ন্ত্রণের জের ধরেই খুন হয় নিরীহ দুই ভূমিহীন। জমির নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে প্রভাবশালী এক পরিবারের ভাড়াটে খুনিদের উপর্যপুরী গুলি- বোমা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন তারা।
প্রসঙ্গত,এর আগেও ঐ পরিবারের বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১২ সালে প্রাণ ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যান গ্রামের প্রায় ৫০টি ভূমিহীন পরিবার।স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসের পর গত বছরের ২৪ জুলাই পুনরায় গ্রামে ফেরেন ভুক্তভুগী ঐ পরিবারগুলো। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি বিনিময়ে লাশ হতে হলো নিরিহ মোহাম্মদ আলী ও সাবাবুদ্দিনকে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার পর থেকেই প্রভাবশালী পরিবারটি অব্যাহত হুমকি দিতে থাকে তাদেরকে।বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি।
তারা জানান, সোমবার ৭টা ৪ মিনিট। ভূমিহীন পরিবারগুলো কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় বোমা হামলা। চালানো হয় কয়েক রাউন্ড গুলি। তারা যখন প্রাণ ভয়ে দিক-বেদিক ছোঁটাছুঁটি করছে ঠিক তখনিই হামলা চালানো হয় মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বাড়ির সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এরপর একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান জানান, মালেক মোল্লার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের বোমা ও গুলির শব্দ গোটা গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। তারা অসহায়দের বাড়ি-ঘরে তান্ডব শুরু করে। তাদের তান্ডবে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মোহাম্মদ আলী। আহত হয় নারীসহ আরো ৬ জন। আর যশোর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মারা যায় সাহাবুদ্দীন মন্ডলও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামীলীগ নেতা সীমান্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মালেক মোল্লা ও তার পোয্যদের হামলা ও হুমকির কারণে ২০১২ সালে প্রাণ ভয়ে গ্রাম ছাড়েন ভূমিহীন প্রায় ৫০টি পরিবার। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সেই সময় লেখালেখির পর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দারের প্রচেষ্টায় ৪ বছর পর গত বছরের ২৪ জুলাই আবারো গ্রামে ফেরেন ওই পরিবারগুলো।
গঙ্গাদাসপুরের বাসিন্দা আর এক ভূমিহীন ছোটন জানায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়ে আমরা গ্রামে ফিরি। কিন্তু মাস খানেক পর আবারো হুমকি দিতে শুরু করে মালেক মোল্লা ও তার ছেলে মিল্টন। বিষয়টি বারবার আমরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি। তারমত গ্রামের অনেকের দাবি পরিবারগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে প্রাণহানিকর এ ঘটনা ঘটতো না। এই নিয়ে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ নিহতের পরিবারগুলোর।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, ঐ পরিবারগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু আকস্মিক হামলার কারণে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। তদন্ত চলছে, অভিযুক্তদের কোন ছাঁড় নেই বলেন তিনি।
তাদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের কোন গাফিলতি ছিলো কিনা এমন প্রশ্নেরও উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মালেক মোল্লা ও তার ছেলে মিল্টনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা দুই জনই অভিন্ন ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তারা বলেন, আমরা রাজনৈতিক হয়রানী ও অপ্রচারের শিকার। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য জানতে পারবে।
মঙ্গলবার গঙ্গাদাসপুর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোটা গ্রাম শোকে কাতর। ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে কাজ করছে অজানা এক আতঙ্ক। অনেকে আবরো গ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে গঙ্গাদাসপুর গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এছাড়াও গ্রামে র্যাব পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি