জাপাতে শক্তি সঞ্চয়ের ঢেউঃ দেশব্যাপী সাংগঠনিক টিম গঠন
কাজী লুৎফুল কবীরঃ
জাতীয় কাউন্সিলের পর দলকে শক্তিশালী করতে কোমর বেধেঁ মাঠে নেমেছে জাতীয় পাটি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সবখানে লেগেছে শক্তি সঞ্চয়ের ঢেউ। আর তাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রাখতে উঠে-পড়ে লেগেছেন পার্টির মহাসচিব।
এরইমধ্যে দলের শীর্ষনেতাদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী গঠন করা হয়েছে সাংগঠনিক টিম। জেলা-উপজেলা, পৌরসভা-ইউনিয়ন ও মহানগর এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে দেয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। দলকে তৃণমূলে ঢেলে সাজাতে জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং সম্প্রতি পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আহবানকে সামনে রেখেই চলছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সে আলোকে ৩০০ আসনে যোগ্য প্রার্থী ঠিক করতে মাঠে নেমেছেন দলের শীর্ষ নের্তৃত্ব। শক্ত প্রার্থী খুঁজে পেতে সহযোগীতা নেয়া হচ্ছে দলের তৃণমূল নেতাদের। আর সে কারণে সাংগঠনিক টিমসহ সবাইকে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা।
সাংগঠনিক টিমগুলোকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। হুশিয়ারী জানিয়ে বলা হয়েছে এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক টিম বাতিল বলে গণ্য হবে। দেয়া হবে না কোন প্রকার ছাড়। পরবর্তীতে পার্টির চেয়ারম্যানের সম্মত্তি নিয়ে অন্য টিমকে দেয়া হবে সাংগঠনিক দায়িত্ব। টিমগুলোকে জেলা-উপজেলা,পৌরসভা,মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটি গঠনে সাহায্য-সহযোগিতা এবং পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে সাংগঠনিক জটিলতা দেখা দিলে,উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে কেন্দ্রের সম্মত্তি সাপেক্ষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
সাংগঠনিক এই কার্যক্রম সারাদেশে একযোগে সম্পন্ন করা হবে বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিক্ষণকে তিনি বলেন,নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য প্রার্থী সন্ধান এবং দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে এই সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গঠিত সাংগঠনিক টিমগুলোর নের্তৃত্বে আছেন দলের শীর্ষনেতারা। সাথে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় তরুণ নেতাদের। পাশাপাশি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে প্রত্যেক জেলার কেন্দ্রীয় সদস্যরা সাংগঠনিক টিমের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, সামনের দিনগুলোতে বিরোধী দল হিসেবে বড় ধরনের শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রয়োজন হবে। জনগণ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছে দাবি করে তিনি বলেন,নির্বাচন বলুন অথবা অন্য যে কোন গণতান্ত্রিক পদক্ষেপের জন্য দলকে শক্তিশালী করতেই সাংগঠনিক এই কার্যক্রম।
মীর আসুদ বলেন,নির্দেশ অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করতে দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষনেতা এই প্রতিবেদকে জানান,আসলে এরশাদকে দেখাতেই সাংগঠনিক কার্যক্রমের তোড়জোর। প্রকৃত অর্থে বড় ধরনের কিছু হবে বলে মনে হয় না। কথা হয় পার্টির নব নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান, এক সময়ের রাজপথের তুখোর ছাত্রনেতা,এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের অগ্র সৈনিক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুর সঙ্গে।
তিনি বলেন,শীর্ষনেতারা আন্তরিকতার সাথে জেলা-উপজেলার মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে করতে পারলে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা খুব বেশী কঠিন হবে না। তবে যেসব জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাঠামোগত সমস্যা আছে,সেসব ক্ষেত্রে দলের নির্দেশিত সময়ের মধ্যে তৃণমূল কমিটি গঠন খুব সহজ হবে না। দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক টিমের নামে একজনকে পাঁচ-ছয়টি কমিটিতে রাখার অর্থই হলো মূলতঃ পিকনিক পিকনিক খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়,বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির অপর শীর্ষনেতা।
এ বিষয় ইকবাল রাজু বলেন,দলকে গতিশীল করতেই এই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে রাজনীতির প্রতি মানুষের যে অনীহাভাব সে অবস্থায় এটা কিছুটা কঠিন, তা তো বলাই যায়। দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, শুধু গতানুগতিক কাঠামো তৈরীর করার উদ্দেশ্যে নয়,জনগণের জন্য সঠিক রাজনৈতিক একটি ব্ক্তব্য নেয়া গেলে,স্বপ্ল সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শতভাগ সফলতা না আসলেও মোটাদাগে সাফল্য আসবে অবশ্যই। তবে জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি ম্যাসেজ থাকতে হবে।
তিনি বলেন,পার্টিকে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল নাকি সরকারী দল, নাকি বেসরকারী দল কোনটি? সে বিষয়ে পরিচ্ছন ম্যাসেজ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে পারলেই পল্লীবন্ধুর উন্নয়নের পক্ষে জনশ্রোত আবারো তৈরী করা সহজ হবে বলে বিশ্বাস করেন প্রবীন এই রাজনীতিবিদ।
সাংগঠনিক টিমের কার্যক্রম নিয়ে টেলিফোনে প্রতিক্ষণের সঙ্গে কথা বলেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন,তৃণমূলসহ দলের সকল স্তরে শক্তি অর্জন করে দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির পতাকাতলে নিয়ে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্যই এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,স্বল্প সময় বড় ধরনের তৎপরতা অবশ্যই সম্ভব, যদি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী বিশেষ করে শীর্ষনেতারা আন্তরিকতা,সততা এবংনিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ঐক্যবদ্বভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নেন। এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব সাংগঠনিক টিম গঠনে কোন অনিয়ম দেখা গেলে কঠোর হাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
তিনি বলেন,সারাদেশে আগেই দলের একটি সাংগঠনিক অবস্থান আছে। জেলা-উপজেলাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও রয়েছে। কোথাও হয়তো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। আবার কোথাও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ধে অস্থবিরতা তৈরী হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউনিয়ন পর্যায়ে সফলভাবে কমিটি গঠন করা। পাশাপাশি জেলা উপজেলায় পার্টি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা।
জাপা মহাসচিব বলেন,এর মধ্যদিয়ে পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাতে করে একক নির্বাচনের প্রয়োজন হলে,তা যেন কোন ধরনের দূর্বলতার মুখে পড়তে না হয়।