জাপানে ইসলামের ইতিহাস
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
সূর্যোদয়ের দেশ জাপান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সমুদ্রবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাপান পৃথিবীর সর্বপূর্বে অবস্থিত। শিল্পে, সমরে, শক্তিতে সবদিক থেকেই জাপান বেশ উন্নত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে জাপানিরা এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। জাপানে এক সময় ইসলাম ও মুসলমানের অস্তিত্ব তেমন খুঁজে না পেলেও বর্তমানে বাড়ছে মুসলমানের সংখ্যা।
জাপানে ইসলামের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। ইসলামী ইতিহাসের প্রথম ও মধ্যযুগে এখানে কোনো মুসলমানের আগমন কিংবা কোনো দাওয়াতি তৎপরতার কথা জানা যায়নি। বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মের মত জাপানে ইসলামের পদচিহ্ন একই রকমের না হলেও অষ্টম শতাব্দী থেকেই এখানে ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায়। মেইজি শাসনামলে (১৮৬৮-১৮৯০) জাপান যখন বিশ্বব্যাপী তাদের উপস্থিতির অংশ হিসেবে ওসমানীয় সাম্রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য ও তথ্য বিনিময় মিশন শুরু করে তখন থেকেই তারা ইসলামের স্পর্শে আসতে থাকে। এ সময় থেকেই জাপানে মুসলমানদের প্রবেশের নানা তথ্য মেলে।
ইতিহাসবিদদের মতে, উসমানী খেলাফতের সময় সুলতান আবদুল হামিদ সর্বপ্রথম ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে নৌপথে তার জাহাজ আল-তগরুলে এক সৌজন্যমূলক মিশন জাপানে পাঠিয়েছিলেন। ওই প্রতিনিধি দলই সর্বপ্রথম জাপানে ইসলামের আলো ছড়ায়। তবে ট্র্যাজেডি হলো, এ প্রতিনিধি দল যখন তুরস্কে ফিরে যাচ্ছিল, তখন জাপানেরই সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের আঘাতে জাহাজটি ডুবে যায়।
ছয়শ’ নয়জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন জীবিত ছিলেন। আর বাকী সবাই নিহত হন। জাপানের লোকদের ওপর এ দুর্ঘটনার গভীর প্রভাব পড়ে। চব্বিশ বছর বয়সী উচ্চশিক্ষিত এক যুবক তুরজিরু ইয়ামাডায় দুর্ঘটনায় এত বেশি প্রভাবিত হন যে, তিনি দুর্ঘটনাকবলিত পরিবারের লোকদের জন্য সারাদেশে চাঁদা সংগ্রহের অভিযান চালান। ৫৪০ জন মৃতের পরিবারের জন্য বিরাট একটি অঙ্ক সংগ্রহ করে তিনি জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে সে অর্থ সহকারে তুরস্কে যান।
এ সময় সুলতান আবদুল হামিদ তুরজিরুকে ডেকে নিয়ে দু’বছর তুরস্কে অবস্থান করে এখানের সেনা অফিসারদের জাপানি ভাষা শেখানোর প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তিনি তুর্কি অফিসারদের জাপানি ভাষা শেখানোর পাশাপাশি নিজেও তুর্কি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম সম্পর্কেও জ্ঞানার্জন শুরু করেন। কিছুদিন পরে তিনি মুসলমান হয়ে নিজের নামের সঙ্গে ‘সিঙ্গিতুস’ শব্দ যোগ করেন। জাপানি ভাষায় এর অর্থ ‘চাঁদ’। এটাও জানা যায় যে, তিনি তার ইসলামী নাম রেখেছিলেন ‘আবদুল খলিল’। তার মাধ্যমে জাপানে ইসলামের বেশ প্রচার ঘটে।
জাপানে মুসলমানের সংখ্যা কত তার সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এই সংখ্যা ৭০,০০০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার বলে মনে করা হয়। মুসলমানদের ১০ শতাংশই জাপানি বংশোদ্ভূত। জাপানে লোকসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭০ লাখ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসেবে গত বিশ বছরে জাপানে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০১১ সালে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশিতে দাঁড়িয়েছে।এসব বিদেশি শ্রমিকের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মুসলমানও রয়েছেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলমানদের সম্পর্কে গৎবাঁধা যে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করা হচ্ছে তার প্রভাব পড়েছে জাপানেও। জাপানে মুসলমান ও মসজিদের ওপর পদ্ধতিগতভাবে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।পুলিশ মসজিদে গুপ্তচর নিয়োগ করেছে। লোকজনের বাসাবাড়িতেও নজরদারি করা হচ্ছে। তারা ৭০ হাজার লোকের তথ্য সংগ্রহ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে গোয়েন্দা ক্যামেরা স্থাপন করেছে। সূত্র: আলজাজিরা
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল