টুকরো করে ধোলাইখালে বিক্রি হবে দুটি বিমান !

প্রকাশঃ জুলাই ২১, ২০১৭ সময়ঃ ২:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৪৮ অপরাহ্ণ

চলাচলের অযোগ্য দেখিয়ে বাংলাদেশ বিমানের এ-৩১০-৩০০ মডেলের দুটি এয়ারবাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবিকৃত অবস্থায় বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবার বাধ্য হয়ে বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ বিমান সংস্থাকে। বাংলাদেশ বিমানে এখন এ বিমান দুটিকে ল্যান্ডিং গিয়ার, ইঞ্জিন এবং বডি ও সিটসহ অন্যান্য অংশ ভাগ করে আলাদা আলাদা বিক্রির কথা ভাবছে।

বিমানদুটিকে বিক্রি করা যাচ্ছে না, এ খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ দুটি বিমানকে কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগ্রহী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা উড়োজাহাজ দুটি কেটে টুকরো করে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে নিতে চান। বাংলাদেশ বিমান তাতেও রাজিও হয়েছে।

এর আগে ডিসি-১০ এয়ারক্রাফট এভাবে কেটে পানির দামে বিক্রি করা হয়েছিল। ডিসি-১০’র স্থানও হয়েছিল ধোলাইখালের ভাঙ্গারির দোকানে। এয়ারবাস দুটির অবস্থাও খুবই খারাপ। কোনোভাবেই উড়োজাহাজ দুটি অবিকৃত রেখে বিক্রি করা সম্ভব নয় বলে জানা গেছে।

বিমানের পরিচালক প্রশাসন মমিনুল ইসলাম বলেন, বিমানের ডিসি-১০ যেভাবে বিক্রি করা হয়েছিল, এ দুটি এয়ারবাসও একই কায়দায় বিমান থেকে ফেইজ আউট করে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে প্রথমেই বিক্রি করা হবে এয়ারবাস দুটির খোলনলচে ও স্পেয়ার পার্টস। দ্বিতীয় ধাপে বিক্রি করা হবে ইঞ্জিন। সর্বশেষ ল্যান্ডিং গিয়ারের জন্য ডাকা হবে আলাদা দরপত্র।

তিনি বলেন, উড়োজাহাজ দুটির উড্ডয়ন মেয়াদ গত বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শেষ হয়। এরপর এগুলো উড্ডয়ন উপযোগী রাখতে হলে ডি-চেক (বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ)করাতে হতো। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হতো। পুরনো ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এয়ারক্রাফট দুটির পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। প্রতি ফ্লাইটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হতো। এসব কারণে ডি-চেকের আগেই ব্যয়বহুল এ উড়োজাহাজ দুটি বহর থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, দুটি এয়ারবাসের এয়ারফ্রেম ও ল্যান্ডিং গিয়ার বিক্রির জন্য ৭ জুলাই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিমান। দরপত্রে এয়ারফ্রেম ও ল্যান্ডিং গিয়ার ‘যেখানে, যে অবস্থায় আছে’ভিত্তিতে বিক্রির কথা বলা হয়।

বিমানের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক সম্ভার) মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই দরপত্রে বলা হয়, এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ দুটির (নিবন্ধন নং যথাক্রমে এস২-এডিএফ//এমএসএস-৭০০ এবং এস২-এডিকে//এমএসএন-৫৯৪) দুটি এয়ারফ্রেম ও দুই লটে মোট ছয়টি ল্যান্ডিং গিয়ার বিক্রি করা হবে।

এর মধ্যে তিনটি ল্যান্ডিং গিয়ার সচল রয়েছে। উড়োজাহাজ দুটি ক্রয়ে আগ্রহীদের ১০ আগস্টের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে।

এর আগে পুরো উড়োজাহাজ বিক্রির জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। এ কারণেই এখন এয়ারবাস দুটি কেটে একেকটি অংশ আলাদাভাবে বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

এছাড়া বিমানের প্রকৌশল বিভাগের অদক্ষতা, সোনা চোরাচালানিদের বিমান কাটাছেঁড়া, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চেক লিস্ট অনুযায়ী যথাযথ মেরামত না করার কারণে এয়ারবাস দুটি বিমানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে বহর থেকে এয়ারবাস দুটি ফেজ আউট (বহর থেকে বাদ) করা হয়।

এর আগে ডিসি-১০ বিক্রি হয়েছিল সোয়া দুই কোটি টাকায়। প্রথমে বিক্রি হয় ইঞ্জিন, যার প্রতিটিতে ৭৫ হাজার ডলার দর মিলেছে। একটি ডিসি-১০ বিমানে তিনটি ইঞ্জিন থাকে।

সে হিসাবে শুধু একটি ডিসি-১০ এর ইঞ্জিন বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকি অংশ যেমন বডি, সিট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সব একসঙ্গে ৪২ লাখ টাকা বিক্রি হয়। অর্থাৎ একটি ডিসি-১০ নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

বিমানকর্মীরা বলেছেন, ৩০০ কোটি টাকার একটি ডিসি-১০ বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র সোয়া ২ কোটি টাকায়। একই করুণ পরিণতি ঘটার আশঙ্কা আছে এয়ারবাস দুটির ভাগ্যে।

এত সস্তায় বিমান কিনে কী কাজে লাগানো যায়? এ সম্পর্কে ড. সাফিকুর রহমান বলেন, এর আগে রাফি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডিসি-১০ নিলামে কিনে নেয়। তারা নিজেদের কারখানাতেই উড়োজাহাজের বডি ও অন্যান্য অংশ যেমন অ্যালুমনিয়াম ও কপার গলিয়ে কেজি দরে বিক্রি করেছে। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল না।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G