ড্রেকো – পূর্ব কথা
আমাকে বেশ কয়েকজন বলল ড্রেকোদের নিয়ে লিখতে, ড্রেকো ব্যাপারটা কি একটু পরিস্কার করে বলেন শুনি। এই সাব্জেক্টে তো বাংলায় কোন বই নাই। আর বাঙ্গালিদের মধ্যে আমার মত এক্সট্রা-অরডিনারি ট্যালেন্ট যারা আছে তারা বড়জোর সিডনি শেল্ডান জাতীয় বেস্ট সেলার থ্রিলার বা নভেল ছাড়া কিছু পড়েনা। বিদেশে যারা বেড়ায়, আমার বন্ধু চয়নের মত, এরা টু পাইস কামায় আর ধুমায়ে মেয়েছেলেদের পিছনে খরচ করে দেশে বিদেশে। যেকোনো আড্ডা-ফাড্ডাতে এরা ফ্লোর নিয়ে নেয় খুব সহজে আর খুব চার্মিং হয়। আর বিদেশে যারা অনেকদিন থাকে, তারা বদলায় অন্যভাবে; এক ধরনের প্রাগ্মাটিক স্মার্টনেস এদের মধ্যে এসে যায়। দেশের জন্য মন কাঁদে। সারাক্ষণ মনে হয় দেশের গাল্ভাঙ্গা রোগা টিংটিঙে মানুষগুলার জন্য যদি কিছু করা যেত। প্রথম জেনারেশান মাইগ্রান্টরা অ্যামেরিকা বা ইংল্যান্ড গেলে ওদের কালচারে সাধারণত ঢুকতে পারেনা। তাই এরা নিজেদের একটা ছোট্ট বাংলাদেশ বানায়ে ফেলে তার মধ্যে বাস করতে থাকে। অনেকে খুব ধার্মিক হয়ে যায়, আর অনেকে ইন্টেলেকচুয়াল। অনেকে ওদের সেক্সুয়াল ফ্রিডমটা এঞ্জয় করে, পরে কর্পোরেটিজম, বাড়িগাড়ি কিনে অন্য বাঙ্গালিদের সাথে একটা ঠাণ্ডা শো-অফ যুদ্ধে মেতে যায়। এগুলা খুব টিপিকাল জিনিষ। ঘুরে ফিরে দেখা যায় সবাই মনে মনে ভাবে বাঙ্গালিদের থেকে দূরে থাকাই ভাল, আফটার অল, আমাদের ক্লাস কনশাস্নেসস খুব প্রবল, কিন্তু তারপরও, আবার একটা নতুন বাঙ্গালির খোঁজ পেলে খুব ভাল লাগে, অন্তত কিছুদিন।
তো এর সাথে ড্রেকোদের কি সম্পর্ক ভাই, আপনি হয়ত ভাবছেন। ব্যাপার হল গিয়ে, আমি যদি ড্রেকোদের নিয়ে একটা ডকু-ফিচার করার মত মাল হতাম, তাহলে অ্যাদ্দিনে ফেমাস-টেমাস হয়ে টু পাইস কামায়ে ফেলতাম। কিন্তু বিধি বাম — আমার সোউল মিশন বলে আমাকে ডন হোয়ানের মত অদৃশ্য থেকেই কাজ করতে হবে, আর ব্যাপারটা খুবই কুল। এনিওয়ে, আমার পয়েন্টটা হল, আমরা বাঙ্গালিরা একধরণের সারভাইভাল সেন্ট্রিক জাতি হয়ে গেছি বা হয়ত সব সময়েই ছিলাম। আমাদের চিন্তা ভাবনা অল্প কিছু এক্সেপশান ছাড়া খুব সীমিত, এটা মোটামুটি সবাই মানবেন। আর ঠিক এই কারণেই আমরা সাত জন্মে ড্রেকোদের নাম শুনিনি। কারণ আমাদের চিন্তার জগত খুবই খুবই ছোট। এটা বললে আমরা খুব অপমানিত বোধ করি, কারণ আফটার অল, আমরা বিরাট পণ্ডিত জাতি। এটা আমাদের ফেসবুকের স্ট্যাটাস-ফ্যাটাস দেখলেই তো বোঝা যায়। তো যাই হোক, আমাদের প্রত্যেকের একটা কনশাসনেস বাবল আছে — এই বাবলের ভিতরে যা আছে তা আমাদের মোটামুটি জানা, কিন্তু এই বাবলের বাইরে আমাদের চিন্তা যেতে পারে না। আমাদের জানার গণ্ডি এই কনশাসনেস বাবলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই ব্যাপারটা প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গত ১০ থেকে ৮০ বছরে পৃথিবীতে একটা ব্যাপার ঘটেছে যেটাকে বলে এ কোয়ান্টাম লীপ অফ কনশাসনেস। মানুষের জানার পরিধি হঠাত করে বেড়ে গেছে। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, এই পরিবর্তনটা বাঙ্গালিকে এফেক্ট করেনি। আমার আশেপাশে সবাইকে দেখি, অ্যান্ড আই মীন সবাইকে — ওই ৩০-৪০ বছর আগে আমরা যা কপচাতাম, একটা ইনফেরিওর লেভেলে আমাদের এখনকার জেনারেশান ওই পুরাণ বাতই জাবর কেটে যাচ্ছে। থোড় বড়ি খাঁড়া – খাঁড়া বড়ি থোড়। খামাখা খামাখা খামাখা …
আমাদের যে পলিটিকাল নাটক — র সিয়াইএ এমাই৬ আর মোসাদের চরম নষ্টামির পায়ের তলায় আমরা দলিত মথিত সর্বহারা হয়ে আছি — এর সামান্যতমও আমাদের ঘটে ঢোকে না। আমরা সকাল বিকাল জামাত শিবির ইস্লামিস্টদের পচাই। একটা বাজে ঘটনা ঘটলে আমাদের মগজ ধোলাই মিডিয়া ঢোল পিটাতে থাকে ‘ইস্লামিক টেররিজম’ — সাথে সাথে আমার প্রগ্রেসিভ ফেসবুক বন্ধুদের অ্যান্টি-ইসলাম স্ট্রীকটা বের হয়ে আসে। হিন্দু-মুস্লিম নির্বিশেষে সবাই ফান্ডামেন্টালিস্টদের ধিক্কার দিতে থাকে। আর এই পুরা নাটকটা পর্দার আড়াল থেকে যারা সাজায়, তাদেরকেই আমি ড্রেকো বলি। চলবে……
মাহিন আহমেদ
গবেষক এবং লেখক
ই মেইল[email protected]
এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই