তদন্তে আনসারুল্লাহর চিঠিই পুলিশের ভরসা
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ দেশের ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গত ১৬ জুন হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় এখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঠানো চিঠির উপর নির্ভর করেই তদন্তের কাজ করছে পুলিশ।
জুন মাসের ১৬ তারিখে ঢাবি ভিসির অফিসে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩’ এর প্যাডে হত্যার হুমকি দিয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি চিঠি আসে। ভিসিকে দেয়া চিঠিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাফর ইকবালসহ ২৫ জনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
চিঠিতে প্রেরকের স্থানে কিছু লেখা না থাকলেও প্রাপকের জায়গায় ঢাবি ভিসির নাম লেখা ছিল। তবে চিঠিটিকে যাচাই-বাছাই না করেই একে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঠানো চিঠি’ ধরেই তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্যেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর ঢাবি ভিসিকে একজন সিকিউরিটি গার্ড দেয়া ছাড়া ঘটনা তদন্তে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তের গতি দেখে চিঠিতে হত্যার হুমকিপ্রাপ্ত বিশিষ্টজনেরা একে পুলিশের আন্তরিকতার অভাব বলে দায়ী করেছেন।
ঘটনার তদন্তের দায়ভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দক্ষিণ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হাসান আরাফাত। ২৫ জনকে কারা হুমকি দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। তারা চিঠির উপরে নিজেদের নাম লিখেছিল।’
এদিকে হুমকি প্রদানকারীদের আটকের বিষয়ে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা হাসান আরাফাত জানান, হুমকিপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রোফাইল যাচাই বাছাই করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কোন সন্দেহের ব্যক্তি আছে কিনা সে বিষয়টি জেনেছি আমরা। এঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি। তবে আমরা কয়েকজনকে সন্দেহও করেছি। তদন্তের স্বার্থে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
তবে পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) পর্যায়ের এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন, হুমকির ঘটনাটি ক্লুলেস। পুলিশ এখনো তদন্তের কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা।
এদিকে তদন্তে ধীর গতি সম্পর্কে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমি মনে করি তদন্তে পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। যদি আন্তরিকতা থাকে তাহলে এতো দিনে এর একটা ফল পাওয়া যেত।
ঢাবির প্রোক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী বলেন, এটি একটি কঠিন ইস্যু, তাই তদন্তে একটু সময় লাগছে। হয়তো ডিবি পুলিশ ধীরে সুস্থে বিশদভাবে তদন্ত করছেন।’
তদন্তে ধীরগতি নিয়ে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, আমি মনে করি তদন্ত দ্রুতগতিতে ও ভালভাবে করা হোক।’
এবিষয়ে ডিবির ডিসি মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, তদন্ত ভালভাবেই চলছে। তালিকাভুক্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি আসামিদের দ্রুত আটক করতে পারবো।
চিঠিতে সাংবাদিক আবেদ খান, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও শ্যামল দত্ত, শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবীর, মফিদুল হক, রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ইমরান এইচ সরকার প্রমুখের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১২ আগস্ট বুধবার সিলেটে আরও ১৯ জনকে হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমে চিঠি পাঠায় কথিত ‘ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন’ নামের একটি সংগঠন। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. জাফর ইকবাল, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আব্দুর রহমানসহ গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ব্লগারদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/তাফসির