তুষার মানব
পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণি আছে । কোন কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে কালের বিবর্তনে কোনটি আবার বিলুপ্তির পথে । আর কিছু কিছু প্রাণি আজও মানুষের আলোচনায় আছে শুধুমাত্র ‘রহস্য’ হয়ে ।
প্রকৃত পক্ষেই এদের কোন অস্তিত্ব আছে কিনা কিংবা কোন কালে অদৌ ছিলো কিনা সেই রহস্যের মিমাংসা হয়তো কখনোই করা সম্ভব হবে না। তারপরও এদের নিয়ে আলোচনা চলবে চলবে গবেষণাও । এমনি একটি রহস্যময় প্রাণি হচ্ছে ইয়েতি ।
“ইয়েতি” নামটা এসেছে তিব্বতি ভাষা থেকে; বাংলা করলে অনেকটা হয় “পাথুরে ভাল্লুক”! হিমালয়ের মানুষরা আগে বলতো, ইয়েতিরা নাকি সারাক্ষণ বিশাল একটা পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, আত্মরক্ষা নয়তো শিকার করার জন্য। আর শিস দেয়ার মতো এক রকম শব্দ করতো। আর ওই পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই হয়তো ওদের নাম দিয়েছিলো পাথুরে ভল্লুক বা ইয়েতি। ইয়েতিদের একেকটা পায়ের ছাপ লম্বায় ৩৩ সেমি, চওড়ায় ২৫ সেমি! ধারনা করা হয় তিব্বত, নেপাল ও ভুটান এর হিমালয় গুলোতে এদের বসবাস।
হিমালয়ের দুর্গম তুষারাবৃত উচ্চ প্রদেশের এক ধরণের মানবাকৃতি প্রাণী ইয়েতি বা তুষার মানব। নানা ভাবে এদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা এখনো এদের প্রকৃত পরিচয় নির্ণয় করতে পারেননি। তাই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তুষার মানবেরা এখনো একটি রহস্যাবৃত প্রশ্ন হয়ে আছে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বত, নেপাল ও ভুটান রাজ্যে সরকারী ভাবে ইয়েতি বা তুষারমানবের অস্তিত্বের স্বীকৃতি মেলে। নেপালে তুষারমানব মেতি বা ইয়েতিনামে পরিচিত। হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চল যারা পাড়ি দিয়েছে তারা হিমালয়ের উপত্যকা অঞ্চলের পর্বতবাসীদের মুখে ইয়েতির অনেক অদ্ভুত গল্প শুনেছে। এমনকি শেরপাদের সমাজে বিশ্বাস প্রচলিত আছে ইয়েতি দেখলে মৃত্যু অনিবার্য। জানা গেছে দানবাকৃতি ইয়েতিরা নাকি প্রায়ই উচ্চ অঞ্চল থেকে উপত্যকার জনবসতিতে নেমে এসে হানা দেয় এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে যায়। এজন্য পর্বতবাসীদের কাছে ইয়েতি এক আতঙ্ক ।
সমতলের মানুষের কাছে ইয়েতির বিশ্বাসযোগ্য খবর প্রথম পৌছায় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে। নেপালের প্রথম ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বি.এইচ. হডসন হিমালয় অঞ্চলের অজ্ঞাত এক প্রাণীর বর্ণনা দেন যে, এটি নাকি মানুষের মতো সোজা হয়ে হাঁটে, সারা শরীর লম্বা চুলে ঢাকা এবংকোন লেজ নেই।
মি. হডসনের বিবরণে তখন খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে ইয়েতি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এরপর ১৯৫৪ সালে এক লোক তো ইয়েতির গায়ের লোমই নিয়ে চলে আসলো। আর বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন ওটা কোনো ভাল্লুকের লোম তো নয়ই, অন্য কোনো পরিচিত প্রাণীর লোমও নয়!
১৯৫৩ সাল। স্যার এডমন্ড হিলারি আর শেরপা তেনজিং নোরগে জয় করলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। আর তারপর অকপটে স্বীকার করে নিলেন, পথে তারা ইয়া বড়ো বড়ো অনেকগুলো পায়ের ছাপ দেখেছেন।
আর এই পায়ের ছাপগুলো কিন্তু প্রমাণ হিসেবে নিতান্ত ফেলনা নয়। এই পায়ের ছাপগুলো নিয়ে ভালো রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। আর তা করে দেখে গেছে, এগুলো কোনো বানানো পায়ের ছাপও নয়, কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপও নয়। অন্য কোনো প্রাণীরই পায়ের ছাপ এতো বড়ো হতে পারে না। পরীক্ষা করে দেখা হয় একেকটা পায়ের ছাপ লম্বায় ৩৩ সেমি, চওড়ায় ২৫ সেমি!
১৮৩২ সালে। সেই বছর হজসন নামে এক ভদ্রলোক নেপালের হিমালয় ঘুরে এসে লেখেন, তার গাইডরা নাকি এক বিশালাকার ঘন লোমে পুরো শরীর ঢাকা এক অদ্ভূত জন্তু দেখেছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল হিমালয় অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত ইয়েতির কোন মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়নি। ইয়েতিদের সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা ও প্রমাণ পাওয়া গেলেও এদের প্রকৃত পরিচয় এখনো অজ্ঞাত রয়েছে।
“ইয়েতি” কি সত্যি বিদ্যমান ? নাকি শুধুই প্রাচীন লোকগাথার অংশ ? এই প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই ।
তবে এ সম্পর্কে ইউকিপিডিয়াতে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। দেখতে ক্লিক করুন https://en.wikipedia.org/wiki/Yeti
প্রতিক্ষণ/এডি/বিএ