দড়ি শিল্পে কাজ করে শত পরিবারের ভাগ্য ফিরেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে চলে দড়ি তৈরীর কাজ। আর এ ক্ষুদ্র পেশায় নিয়োজিত হয়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। দড়ি তৈরীর উপার্জন থেকেই চলছে তাদের জীবন-জীবিকা। সন্তানরা যাচ্ছে স্কুলে। দেখছে শিক্ষার আলো।
বলছিলাম টুয়াখালীর বাউফল উপজেলার জুগিপাড়া গ্রামের প্রায় শত পরিবারের জীবন জীবিকার গল্প।
মদনপুরার জুগিপাড়ার ৩৫টি ঘরের প্রতিটির দরজায় ১টি মেশিন ঘর। ৩ হাত স্কয়ারের একটি শেড ঘরের মধ্যে কাঠের মেশিন। শেড ঘরসহ মেশিন স্থাপন করেত প্রয়োজন হয় তিন-চার হাজার টাকা। ঘরটি প্রতি বছর সংস্কার করতে হয়। মেশিন ঘর থেকে বাইরে রয়েছে সুতার লাইন। মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত আঁশে লোহার এটি বড় প্লেটের সঙ্গে ৩টি হুক লাগানো। যাকে সুতাধর বলা হয়।
দড়ি তৈরির প্রধান কাঁচা উপকরণ হচ্ছে চটের বস্তা। প্রতি কেজি চটের মূল্য ৫০ টাকা। এ চট ঢাকার ইমামগঞ্জ থেকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর আমদানি করেন এথানকার দড়ি কারখানার মালিকরা। চট খোলার পর যে কাঁচা পণ্য তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় মুট।মুট পাকিয়ে করচা হয়। মুট নিজেরা তৈরি করেন।
গ্রামে দরিদ্র পরিবারের মাধমে মুট তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি মুট তৈরি করতে মজুরি দেয়া ৫ টাকা। ১ দিনে ১০ থেকে ১২ কেজি মুট তৈরি করা যায়। করচা পাকিয়ে দড়ি তৈরি করা হয়। দড়ি দু-ধরনরে চিকন দড়ি ও মোটা দড়ি। চিকন দড়ির পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৮০ টাকা ৯০ টাকা এবং মোটা দড়ির মূল্য প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। খুচরা বিক্রি প্রতি কেজি ২০ টাকা বেশি নেয়া হয়।
বৈশাখ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দড়ি বেশি বিক্রি হয়। কারণ এ দড়ি ইলিশ জালসহ গৃহের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। মদনপুরার পাশাপাশি কেশাবপুরা ইউনিয়নের তালতলি ও মদনপুরা ইউনিয়নের দ্বীপাশা গ্রামেও দড়ি তৈরি হয়।
অনিমা রানী, যুমনা রানী দু’জনেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। লেখাপাড়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস দড়ি তৈরির কাজে সহযোগিতা করা। অর্চনা রানী একজন সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন কর্মী। তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে দড়ি তৈরি করে থাকেন। অর্চনা রানী জানান, জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দড়ি দেখছি। শিশুকাল থেকেই বাবা-মার হাতে দড়ি দেখছি। কাজ করছি, তাই দড়ির কাজ নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। এটাকে আটকে রাখতে চাই। দড়ি শিল্প দিয়ে আমাদের মতো হাজার হাজার পরিবার আয়ের পথ হোক। এটাই প্রত্যাশা।
ক্ষুদ্র পেশার সম্ভাবনাময় দড়ি শিল্প সারা দেশে গড়ে উঠতে পারে। দড়ি শিল্প নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকজন জানান, দড়ি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প পেশা। প্রতিটি উপজেলায় গড়ে উঠতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের জন্য চাহিদা মেটাতে পারে। দড়ি শিল্পে কাজ শুরু করার সময় প্রয়োজন ৫০ হাজার টাকা। মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার দড়ি পণ্য উৎপাদন করে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
স্থানীয় সংস্থাসহ জাতীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দড়ি শিল্পীদের ঋণ দিলে এ পেশা অনেক সমৃদ্ধ হতে পারবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। হ্রাস পাবে বেকারত্ব।
প্রতিক্ষণ/এডি/শিপন