ধর্মীয় কাজে বাধা দানের পরিণতি
ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য এবং পৃথিবীতে তাঁর বিধান কায়েম করার জন্য। এ লক্ষ্যে মানবতার সঠিক পথের দিশারী হিসাবে এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন (আহমাদ, ত্বাবারানী, মিশকাত হা/৫৭৩৭)।
তাঁরা যুগে যুগে মানুষকে সত্য-সুন্দরের পথ, কল্যাণের পথ, হেদায়াতের পথ প্রদর্শন করেছেন। সে পথে মানুষকে পরিচালনার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
কিন্তু মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় ও তার কুমন্ত্রণায় হক্বের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কখনোবা এ পথে মানুষ যাতে আসতে না পারে সেজন্য বাধা সৃষ্টি করেছে। ফলে ঐসব মানুষও শয়তানের ন্যায় অভিশপ্ত হয়েছে, জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের কীটে পরিণত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে হক্বের পথে, আল্লাহর পথে তথা দ্বীনের পথে বাধা দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বীনের কাজে বাধা দানে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা :
দ্বীনে হক্বের কাজ মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশ। এ নির্দেশ বাস্তবায়নে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) তাকে বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি দ্বীনী কাজে বাধা প্রদান করতে মহান আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ বলেন, তোমরা পথে-ঘাটে একারণে বসে থেকো না যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে হুমকি দিবে, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের’ (আ‘রাফ ৭/৮৬)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বেরিয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোকদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর আল্লাহর পথে তারা বাধা দান করত। বস্ত্ততঃ আল্লাহর আয়ত্বে রয়েছে সে সমস্ত বিষয় যা তারা করে’ (আনফাল ৮/৪৭)।
দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করা শয়তানী কাজ :
দ্বীনের পথে বাধা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মূলতঃ শয়তানী কাজ। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে শয়তান এ কাজ করে আসছে। প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম (আঃ) থেকে অদ্যাবধি শয়তানের এ কাজ অব্যাহত আছে। শয়তানের সাথে সাথে কিছু মানুষও দ্বীনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে’? (মায়েদাহ ৫/৯১)।
আল্লাহর পথে বাধা দান ইহুদী-নাছারাদের কাজ :
আল্লাহর দ্বীনে বাধা দেওয়া ইহুদী-নাছারাদের কাজ। তারা একদিকে নবী-রাসূলগণকে অস্বীকার করতো, অপরদিকে কেউ কেউ আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, হে কিতাবধারীগণ! কেন তোমরা আল্লাহর পথে ঈমানদারদেরকে বাধা দান কর, তোমরা তাদের দ্বীনের মধ্যে বক্রতা অনুপ্রবেশ করানোর পন্থা অনুসন্ধান কর, অথচ তোমরা এ পথের সত্যতা প্রত্যক্ষ করছ। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবগত নন’ (আলে-ইমরান ৩/৯৯)।
আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া মুনাফিক্বী :
মুনাফিকদের অন্যতম আচরণ হচ্ছে বাহ্যিক দিকে এক রকম অন্তরে ভিন্ন। তারা প্রকাশ্যে আল্লাহর পথে থাকার অভিনয় করলেও প্রকৃত পক্ষে দ্বীন থেকে অনেক দূরে থাকে।
আল্লাহপাক বলেন, ‘আর যখন বলা হবে, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো, যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, তারা আপনার কাছ থেকেও সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে’ (নিসা ৪/৬১)।
দ্বীনের পথে বাধা দান করলে বহু কল্যাণকর জিনিস থেকে বঞ্চিত হ’তে হয় :
ইহুদীরা আল্লাহর দ্বীনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। ফলে তাদের জন্য অনেক কল্যাণকর বস্ত্ত হারাম করা হয়, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বস্ত্ততঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্ত্ত, যা তাদের জন্য হালাল ছিল, তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন’ (নিসা ৪/১৬০)।
অনুরূপভাবে এখনও কেউ আল্লাহর দ্বীনে বাধা দিলে সেও কল্যাণকর বহু জিনিস থেকে বঞ্চিত হবে।
প্রতিক্ষন/এডি/আকিদুল