কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘নদ্দিউ নতিম’ রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম।
যে তিনটি কারণে নাটকটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং তীব্র আগ্রহের জন্ম দিয়েছে, সেগুলো হলো:
প্রথমত- বাংলাদেশের মূলধারার নাটকে ‘নদ্দিউ নতিম’ই প্রথম নাটক যেখানে একজন শিশু একটি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। দ্বিতীয়ত- বর্তমান সময়ে একজন মানুষ অন্য একজনকে হত্যার জন্য নিজেকে আত্মাহুতি দিচ্ছে। এই নাটকে দেখা যায় একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে বাঁচাতে একজন কবির নির্বিকার আত্মাহুতি। অর্থাৎ অন্যকে হত্যা করতে নয় বরং বাঁচাতেই আরেক মানুষের জীবন উৎসর্গ, যা এই সময়ের জন্য এক অনন্য আদর্শ হিসাবে পরিগণিত। তৃতীয়ত- এই নাটকে একটি কাল্পনিক পরিবারের কাহিনি মঞ্চস্থ হয় যা একটি বাস্তব পরিবারের সদস্যরা অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তোলে।
নাটকটির সহযোগী নির্দেশক আনিসুল হক বরুণ, সেট ও লাইট ডিজাইন ফয়েজ জহির, পোশাক সোনিয়া হাসান, আবহসঙ্গীত আর্য
মেঘদূত, আলোক নিয়ন্ত্রণে গর্গ আমিন ও আবহসঙ্গীত নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ফারজানা ইয়াসমিন ও সোহেল খান।
বাংলাদেশে নিরন্তর থিয়েটার চর্চায় সংযুক্ত নতুন পালকের নাম ম্যাড থেটার। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের উদ্বোধনী
প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ম্যাড থেটারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই ম্যাড থেটার তার সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে বিদেশের মাটিতে ২টি প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যা বিপুলভাবে দর্শক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে এবং ভারতের পত্রিকাগুলো তাদের অভিনয় ও প্রযোজনার মান নিয়ে ছিল প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কাহিনি সংক্ষেপ: মতিন একজন কবি। মনে মনে নিজেকে কল্পনা করে নেয়- সে একজন উজবেক কবি। নিজেই সে নিজেকে স্বপ্ন দেখে- ধবধবে ফর্সাগায়ের রং, পরনে জোব্বার মতো একটা পোশাক, লম্বাটে মুখ, চোখ তীক্ষ্ণ। মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিন উদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। মতিনের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে থাকে সহপাঠিনী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও ভাবাবেগে মতিন ডুবে যায় না, সে বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। মতিনের একদিন চোখে পড়ে পত্রিকার পাতায় তিন লাইনের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন- একজন সার্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসাবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়। বেতনের আকর্ষণীয় ক্ষমতায় মতিন তার কবি সত্ত্বাকে সাময়িক স্তিমিত রেখে কমল নামের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চার টিউটর পদে অভিসিক্ত হয়। মতিনের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হওয়ায় তাকে টিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চাটি কবিকে ভুলে না। বাচ্চাটি কবির সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। কবি চলে গেছে। বাচ্চাটি জেদ ধরে- সে কথা বলবেই বলবে। এক পর্যায়ে সুযোগ হয় কবির সাথে কথা বলার। কমল মতিনের সঙ্গে তার জীবনের একটি সিক্রেট শেয়ার করে, যে সিক্রেটের জন্য মতিনকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াতে হয়। হাসপাতালের এক হিমশীতল ঘরে সে শুয়ে থাকে। তার কাছে মনে হয়, সে যেন অনন্তকাল এভাবেই শুয়ে ছিল।
কী সেই সিক্রেট যার জন্য কবিকে জীবন দিতে হলো? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা নদ্দিউ নতিম দেখার আমন্ত্রণ রইল।
প্রসঙ্গ: ম্যাড থেটার-
মানুষের অবচেতনে এক ধরনের সূক্ষ্ম পাগলামি কাজ করে। এই পাগলামি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রথাগত যুক্তি বুদ্ধির দেয়াল ভেঙে নতুন সমীকরণ আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যারা এই পাগলামি ব্যবহার করতে পারে তারা প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। সেই সম্ভাবনাকে থিয়েটারের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য ম্যাড থেটার।
ম্যাড থেটার প্রযোজনা ১- ‘নদ্দিউ নতিম’।
রূপান্তর ও নির্দেশনা: আসাদুল ইসলাম।
হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের নাট্যরূপ।
সহযোগী নির্দেশক: আনিসুল হক বরুণ
সেট ও লাইট: ফয়েজ জহির
পোশাক: সোনিয়া হাসান
আবহসঙ্গীত: আর্য মেঘদূত
৩০ অক্টোবর ২০১৫- প্রথম প্রদর্শনী।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ