নান্দনিক সংগ্রহশালা জাতীয় জাদুঘর

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৮, ২০১৬ সময়ঃ ৩:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:১১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

59231255শাহবাগ মোড়ে পিজি হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের নিকটে অবস্থিত একটি ৪ তলা ভবন। এই ভবনটিই বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর। এই জাদুঘর বাংলাদেশ ও বিশ্বের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্ণী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোন বাঙ্গালী যদি তার অতীত ইতিহাস জানতে চায় অথবা নিজ চোখে দেখতে চায় বিশ্ব ঐতিহ্যের কিছু নিদর্শন তবে অবশ্যই তাকে আসতে হবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শরণে।

বংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক শুরু ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বরে। তবে ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায়, জাতীয় জাদুঘরের শুরুটা আসলে অনেক পুরনো। সেই ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৩ সালের  ২০ মার্চ  তৎকালীন সচিবালয়ে, যেখানে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল, সেখানে দুই হাজার রুপি তহবিল নিয়ে ঢাকা জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ঢাকা জাদুঘরের অফিশিয়াল যাত্রা শুরু হয় একই বছরের ৭ আগস্ট যা উদ্বোধন করেন বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। আর এই ঢাকা জাদুঘরই বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যা এদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শণ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষণায় সব সময় কাজ করে চলেছে।

জাতীয় জাদুঘরের প্রাঙ্গনে ঢুকলেই দেখা যায় দু পাশে অসংখ্য সবুজ গাছপালা। এই গাছপালার অপরূপ সৌন্দর্য যে কোন দর্শনার্থীর মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। জাদুঘরের প্রবেশ দ্বারের দুই পাশে রয়েছে দুইটি ঐতিহাসিক কামান, এরপর জাদুঘরের ৪ তলা বিশিষ্ট ভবনে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে অপূর্ব নভেরা ভাস্কর্য।

জাতীয় জাদুঘরের রয়েছে ৭টি বিভাগ। এগুলো হলো ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগ, জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা বিভাগ, সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগ, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ, সংরক্ষণ রসায়নাগার বিভাগ, প্রশাসন, অর্থ ও নিরাপত্তা বিভাগ।

এবার আসুন দেখে নিই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তার ৪টি তলায় দর্শনার্থীদের জন্য কী কী সংরক্ষণ করে রেখেছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রথম তলায় আছে একটি সমৃদ্ধ গ্যালারি, টয়লেট, অডিটরিয়াম এবং অফিস। মজার ব্যাপার হচ্ছে জাদুঘরে প্রথম তলায় টিকেট চেক করা হয় না, দ্বিতীয় তলায় ওঠার সময় দর্শনার্থীদের টিকেট চেক করা হয়।

জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় উঠলে প্রথমেই চোখে পড়ে বাংলাদেশের বিশাল একটি মানচিত্র। এছাড়া এ তলায় রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ভূ-তাত্ত্বিক, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্র। বাংলাদেশের জীবজগত, বনাঞ্চল, এ দেশের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, বাংলাদেশের শিলা-খনিজ, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন প্রভৃতি সংক্রান্ত নিদর্শনাবলী এবং বাংলাদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনামলের বিভিন্ন মুদ্রা ও স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায়।

তৃতীয় তলায় রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত বিশাল সংগ্রহ। এছাড়া অস্ত্রশস্ত্র, চীনামাটির শিল্পকর্ম, পুতুল ও বাদ্যযন্ত্র, বস্ত্র ও পোশাক-পরিচ্ছদ প্রভৃতি সংক্রান্ত প্রদর্শনী দ্রব্য রয়েছে তৃতীয় তলায়।

তৃতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলায় যেতে চোখে পড়ে জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার কিন্তু আগে থেকে অনুমতি নেওয়া না থাকলে সেখানে সাধারণ দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারে না।

জাদুঘরের চতুর্থ তলায় স্থান দেওয়া  বিশ্বের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। এই তলায় চোখে পড়ে কোরিয়া, জাপান, চীন, ইতালি প্রভৃতি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন সংবলিত বিভিন্ন পুতুল যারা আবার সংশ্লিষ্ট দেশের পোশাক পড়ে আছে। এছাড়া আরো রয়েছে নানা রকম মুখোশ, সীল, চিত্রকর্ম ইত্যাদি। লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম লাস্ট সাপার বা পাবলো পিকাসোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম গুয়ের্নিকার মাস্টার পিসগুলোর ডিজিটাল প্রিন্ট আউট করে বাধাই করে রাখা হয়েছে জাদুঘরের সর্বশেষ তালাতেই।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল করিম জানান, বর্তমানে তাদের সংগ্রহে আছে প্রদর্শন করার মতো প্রায় ১০ লাখ দ্রব্য। কিন্তু স্থানাভাবে এর মধ্য থেকে মাত্র ১০ হাজার দ্রব্য তারা প্রদর্শন করতে পারেন। যদি জাদুঘর ভবনটি ২০ তালা পর্যন্ত সম্প্রসারন করা যেত তবে সংগ্রহের সকল দ্রব্য প্রদর্শন করা যেত। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন একই দ্রব্য তারা প্রদর্শণ করেন না। একেক দিন একেক দ্রব্য তারা দর্শনার্থীদের সামনে উন্মুক্ত করে দেন। তাই বলা চলে জাতীয় জাদুঘর প্রতিদিনই নতুন নতুন সাজে সেজে থাকে।

জাতীয় জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য খুবই কম। সার্কভূক্ত দেশের ১২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য ২টাকা, বাংলাদেশসহ সার্কভূক্ত যে কোন দেশের ১২ বছর থেকে উপরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ১০ টাকা। তবে সার্ক ব্যতীত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।  অবশ্য প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীরা কোন প্রবেশমূল্য ছাড়াই জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় জাদুঘরের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনেও জাদুঘর বন্ধ থাকে। এমনিতে শীতকালে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্তু শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।  শুক্রবারে জাদুঘর খোলা থাকার সময় বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পরিদর্শন করা যায়। আর গ্রীষ্মে জাদুঘর শুক্রবা্রে খোলা থাকে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

তাহলে আর দেরি কেন? পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে আসুন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে। দেশীয় ও বৈশ্বিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া আপনার মন রাঙ্গিয়ে দেবে একথা হলফ করে বলা যায়।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G