নাসায় বাংলাদেশি তরুণী

প্রকাশঃ আগস্ট ৬, ২০১৬ সময়ঃ ২:১০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:২০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক:

alalll

আনিকা নূরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেরই জল-হাওয়ায়। ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ২০১২ সালে সপরিবারে আমেরিকায় উড়াল। এই চার বছরেই মাতৃভূমির জন্য তিনি বয়ে এনেছেন অনন্য সম্মান। মার্কিন মাহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কাজ করেছেন তিনি।

শুরুর কথা:

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী থেকে এসএসসি শেষ করেন আনিকা নূর। ২০১২ সালে রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়ে জুলাইয়ে ইমিগ্রেশনে পুরো পরিবার চলে যান আমেরিকায়। পাঁচজনের পরিবারের বাসা ভাড়া থেকে খাবার সবকিছু তাকেই উপার্জন করতে হয়েছে।

আনিকা নূর বলেন, ‘যখন আমেরিকায় এলাম তখন আমার বয়স ১৯। এসেই জবে ঢুকে গেছি। অড জব যাকে বলে। এদিকে এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে, জিপিএ-৫ পাইনি। অন্যদিকে ভার্সিটি অ্যাডমিশন নিচ্ছি না। জিদ চেপে গেলো মনে। ভার্সিটির অ্যাডমিশনও নিলাম, সাথে ফুলটাইম জব। হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হলো, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে হলো। নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা। এর মধ্যে SAT দিলাম। স্কলারশিপ নেই, তাই লোন নিলাম হাই ইন্টারেস্ট রেটে। এর মধ্যে আমার হাজব্যান্ড এর জব হলো অন্য স্টেটে। এবার ফ্লোরিডা থেকে কলোরাডো। আমি তখন ভয়ংকর সমস্যায়, ফান্ড নেই কিন্তু অনেক টাকা লোন হয়ে গেছে। দেখলাম স্কলারশিপ ম্যানেজ করতে হবে, না হলে পড়াশোনা বন্ধ।’

আনিকা বলেন, এরপর তিনি ভলান্টারি কাজ শুরু করেন। আমেরিকায় যাদের বৈধভাবে বসবাসের কাগজপত্র নেই, তাদের অংক আর ইংরেজী শেখানো। এই কাজ দেখিয়ে আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন থেকে ১০ হাজার ডলার স্কলারশিপ পান।

স্বপ্নের নাসায়:

nasa

নিজের জবানিতে আনিকা বলেন, ‘একদিন আমার ভার্সিটির নিউজ বোর্ডে নাসার একটা বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। একটা প্রজেক্ট বানাতে হবে যেটা মহাকাশে যাবে। এই কাজটাতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। টিম গঠন করলাম। প্রোগ্রামিং শিখলাম, ইলেকট্রনিক্স শিখলাম। আমার ফিল্ড ছিল বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। নাসার সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখা শুরু করলাম। দেখলাম ওরা ফাঙ্গি (ফাঙ্গাস) পাঠিয়েছে মহাকাশে- যেটার ৬০% সারভাইভ করেছে। আমরা এর পরবর্তী ধাপ চিন্তা করলাম। ফাঙ্গি নিজের খাবার নিজে বানাতে পারে না। আমরা ভাবলাম, ফটোসিনথেসিস করে, এমন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। নাসাতে এই প্রস্তাব দিলাম। তারা এটা গ্রহণ করে বড় একটা ফান্ড দিলো।’

আনিকা বলেন, চার মাস সময়কালের একটা গবেষণা নাসাতে পাঠান। ‘হট এয়ার বেলনে’ সেটা এক লাখ ফিট দূরত্বের মহাকাশে পাঠানো হলো। একটা সার্টিফিকেট পেলেন, সঙ্গে আরেকটা স্কলারশিপ। নাসার ওয়েবসাইটে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি নাসার ‘রকঅন’ ওয়ার্কশপে চান্স পান।

আনিকার জবানিতে, ‘আমাদের কাজ ছিল সাউন্ডিং রকেট এর জন্য কিছু যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেছে নাসা। এটা ৭ দিনের একটা ওয়ার্কশপ ছিল। কিন্তু এটা অনেক কঠিন ছিল। কারণ, আমরা জানতাম না যে, কী করতে হবে। সবচেয়ে অবাক করা মূহুর্ত ছিল যখন তারা বললো যে, আমরা রকেট বানানো দেখবো এবং রকেটের বডিতে স্বাক্ষর করতে পারবো। আসলে খুবই মূল্যবান মূহুর্ত এটা। আরো চমক অপেক্ষায় ছিল। রকেটে ১১ গ্রাম ওজনের মধ্যে কোন স্মারক (স্যুভেনির) পাঠানোর অনুমতি দেয়া হলো আমাকে। বাংলাদেশের একটা ফ্ল্যাগ দিলাম, আমেরিকার একটা ফ্ল্যাগ দিলাম আর পরিবারের একটা ছবি।’

২৪ জুন সকাল ৬:০৫টা:

nasa2

আনিকা বলেন, আটলান্টিকের ঠিক পাশে রকেট উৎক্ষেপন করা হয়েছে। ১৫০০ ফুট দূর থেকে আমরা সেটা দাঁড়িয়ে দেখেছি। মহাকাশে প্রায় ৬ লাখ ফুট দূরত্বে পাঠানো হয়েছে রকেটটি। মাত্র ১০ সেকেন্ড আমরা দেখতে পেরেছি রকেটটা। এটা আমার জীবনের সেটা ১০ সেকেন্ড। নাসা এখন আমার কাছে ঘোরের মতো হয়ে গেছে। উৎক্ষেপন করা রকেট আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখানকার সব ডাটা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া হয়েছে। আনন্দের ব্যাপার হলো, আমরা গবেষণা করে যা যা তৈরি করেছিলাম মহাকাশে তার সবগুলোই কাজ করেছে। নাসার একমাত্র নোবেল বিজয়ী John C Mather আমাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আনিকা বলেন, সেখানে মজার একটা কাজ করেছি। কয়েকজনকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শুনিয়ে দিয়েছি। যথেষ্ট পাগলামি, যথেষ্ট মজা করেছি। বাংলাদেশের নামও শোনেনি এমন কিছু মানুষের কাছে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য বিশেষ ব্যাপার ছিল।

প্রতিক্ষণ/এডি/একে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G