নৌভ্রমণে চাঁদপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সকাল দশটা, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটাই মাত্র ক্লাস ছিল। চার বন্ধুর আড্ডায় ঠিক হলো ঢাকার কোলাহল ছেড়ে নিরিবিলি পরিবেশে যাওয়ার। কোথায় যাওয়া যায়? একজন প্রস্তাব করলো, লঞ্চে চেপে কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসি। অমনি ছুটে চলা। সদরঘাট থেকে চাঁদপুর।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল! প্রচন্ড ভীড় ঠেলে এম.ভি বোগদাদীয়া-৫ লঞ্চ এ উঠলাম। অনেক কষ্ট করে প্রথম শ্রেনীর ৩ টি টিকেট ম্যানেজ করলাম ( আমরা সফর সঙ্গী ছিলাম মোট ৪ জন), পরে আরেকটি টিকেট নিলাম ডেক এর।
লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে যাত্রা করলো দুপুর ১২টায়। সদরঘাটে সারি সারি লঞ্চ পেছনে রেখে আমাদের লঞ্চ ছুটে চলেছে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। প্রথমে বুড়িগঙ্গার দু’পাড়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে বুড়িগঙ্গা ছেড়ে মেঘনা নদীতে চলে এসেছি টেরই পাইনি। মেঘনা নদীতে লঞ্চ পৌঁছার সাথে সাথেই বর্ষায় ভরা যৌবনের মেঘনার ঢেউ যেনো আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। উত্তাল ঢেউ এর বুক চিরে এম.ভি বোগদাদীয়া লঞ্চ ছুটে চলেছে তার আপন গন্তব্যে, যেনো একটুও থামার অবকাশ নেই। পদ্মা-মেঘনার মোহনায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট।
বেলা সাড়ে তিনটায় লঞ্চ এসে পৌঁছলো চাঁদপুর ঘাটে। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে দুটি রিক্সা করে আমরা রওয়ানা দিলাম চৌধুরী ঘাটলা (ব্রীজ মোড়), সেখানে আগে থেকে আমাদের জন্য হোটেল বুকিং দেয়া ছিল। হোটেলে পৌঁছার সাথে সাথেই শুরু হলো অভিরাম বৃষ্টি। বৃষ্টি যেনো আর থামতে চাচ্ছেনা। পরিকল্পনা ছিল বিকেল বেলা একটু “টোডা” ঘুরে আসবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আর যাওয়া হলনা। সারা বিকেলই হোটেলে বসে থাকতে হলো।
পরের দিন সকাল বেলা বের হলাম টোডা’র উদ্দেশ্যে। শহরের কালিবাড়ী মোড় থেকে প্রথমে গেলাম মাছ ঘাটে (যেখানে ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার পর এখানেই নিয়ে আসে)। মাছঘাট পুরাতন রেল ষ্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। মাছ ঘাট থেকে হেটে হেটে গেলাম টোডা, খুব বেশী দুরে নয়। টোডা থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর মিলনস্থল খুব কাছ থেকেই দেখা যায়। তাই এই জায়গা একটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে পদ্মার চর ঘুরে আসা যায় জনপ্রতি ২০ টাকায়। রিজার্ভ নৌকা ২০০-২৫০ টাকা। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় বিকেল ঘনিয়ে এলো।
ঢাকায় ফিরতে হবে ইচ্ছা থাকা সত্বেও পদ্মার চরে যাওয়া হয়নি। টোডা থেকেই হস্তচালিত নৌকা ভাড়া করলাম ব্রীজ মোড় যাওয়ার জন্য। রওনা দিলাম আবার লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে। বেলা ২টায় ছাড়বে এমভি মেঘনা রানী। এ যাত্রায়ও পেলাম প্রথম শ্রেনীর একটি টিকেট তাও আবার ১৪০ টাকার টিকেট ১৮০ টাকায়। সিট না পেলে কোনো সমস্যা নেই। সাড়ে ৩ ঘন্টা ৪ ঘন্টার ভ্রমণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনায়াসেই পার করা যায়। পদ্মা মেঘনার বুকে মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে দেখতেই চলে আসা যায় চাঁদপুরে।
যেভাবে চাঁদপুর যাবেন: সদরঘাট থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পর লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ঠিক একই ভাবে চাঁদপুর থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ভাড়া: ডেক-এ জনপ্রতি ১০০ টাকা, চেয়ার ১৪০ টাকা, কেবিন ৫০০-১৫০০টাকা। ঢাকার ভ্রমণপ্রেমী ব্যস্ত মানুষ, যাঁরা সময়ের অভাবে দূরে কোথাও যেতে পারছেন না, তাঁদের জন্য ঢাকার আশপাশেই চমৎকার একটি জায়গা চাঁদপুর।