পারসেপশান ক্লিয়ার করুন
মিজান বিন মজিদ :
সাধারণত ঘটমান বহুল চর্চিত বিষয় এড়িয়ে যাই। যাই,কারণ লেবুর কার্যকরিতার মতনই চিপলে তেতোই বেরুবে…। আমার শিক্ষকতা জীবনের শুরুটা কোচিংয়ে হলেও,সেইখানে বরং আরাম পেয়েছি! মনের মতন করে কথা বলতাম…।
কাতালগঞ্জে বিটি কোচিংয়ের ক্লাস,আহহা…। ছাত্রছাত্রীগুলান ছিলো নিবেদিত,আন্তরিক, উৎসুক আর কিউট! অনেক মা এসে আমার খোঁজ করতেন, মিজান স্যার কোনজন? কেন? উনি মায়ের কথা বলেন তো,তাই তাকে দেখতে ইচ্ছে হয়।
একবার অচেনা নম্বরের অজানা কণ্ঠস্বর…এইটা মিজান স্যারের নম্বর না? জি বলছি,আপনি কে বলছেন? আমি একজন মা বলছি। নাম বলেন,পরিচয় দেন। না,আমি একজন মা বলছি! আপনি তো মায়ের কথা ক্লাসে ক্লাসে বলেন,ছাত্রছাত্রীদের বোঝান মায়ের গুরুত্ব পিতার পিতৃত্ব।আমি তেমনই এক মা বলছি,রাখবেন আমার কথা! জি রাখবো। আমার ছেলেকে বাসায় এসে সময় দিতে হবে।
কোচিং ক্লাসের আধিক্যের কারণে বাসায় যেতে চাইতাম না। তারওপর টাকা চাইতাম বেশি! তবুও এই মায়ের অভিনব আব্দার রক্ষা না করে পারিনি। রাবাবের মায়ের আব্দার মেনেই তার পুত্রকে পড়িয়েছিলাম। মায়ের কথা,মায়েদের কথা মানতে হয়। রাবাবের বাবা হলেন, চবি সমাজতত্ত্বের খ্যাতিমান অধ্যাপক ড.ওবায়দুল করিম। তাঁকে স্বচক্ষে দেখি নি,আজতক! পিতাদের বিশাল কর্মব্যপ্তির জন্যে মায়েরাই Room করে দেন!
ভাইরাল হওয়া ছবি স্টোরিতে দিয়েছিলাম,ভেবেছিলাম আমার মতামত ক্লিয়ার! এখন মনে হচ্ছে আরও বলার বাকি। বাসায় গিন্নি শুনছিলেন,একজন আলেমের আলোকপাত। আলেমের বয়ানও একপেশে মনে হলো। তাই পারসেপশান নিয়ে নামতেই হলো আলাপে।
ডেইলি স্টারের ছবিতে কেউ দেখছেন বোরকা-হিজাব,কেউ দেখছেন আফগান-মৌলবাদ। কেউ হাহাকারে মরছেন,কেউ ধর্মীয় আহ্লাদে আটখানা। আমি এইসব দেখিনি। যত লেখা পড়েছি,তার আগেই আমার এই ছবি নিয়ে পারসেপশান হলো….
” সিনানের আবদারে তার মায়ের সাড়া। যে কোন মা’ই তার সন্তানের আহ্লাদ,আব্দার,অনুরোধ-অনুযোগ শুনে তার আলোকে সাড়া দেন/দেয়।” এই সাধারণ সরল স্বাভাবিক জিনিসের মধ্যে অত জ্ঞান কী করে খোঁজেন আপনারা! পারেনও!!!
অন্যসব আলোচনাকে এড়িয়ে ‘মাতৃত্ব’কে বুঝুন।মা হওয়া মানে কী বাচ্চা প্রসবেই সীমাবদ্ধ? মায়ের কর্তব্যসীমানা নিয়ে কী ভেবেছেন কখনোসখনো। মরহুমা মা রৌশন আরা বেগম প্রতিবার বাড়ি থেকে বেরুবার সময় ডান হাতে তাঁর মুখের লালা মাখিয়ে দিতেন…আর বলতেন, “আঁর হুতেরে আল্লাহ’র হাওলায় দিলাম।” বোঝেন এর ওজন?
ডিজিটাল ধামাকার মধ্যে মাকে খোঁজার বোঝার সময় কৈ তাই না! এই যে দারুণ লাগছে আপনাকে তার শেকড়টা গেঁড়েছে কে? আহারে মানবপ্রপঞ্চ! ‘উধাও নদীর মুগ্ধ বালক তুমি’ না বুঝলে সুন্দর না জানলে সুন্দরত’মা’কে…।
প্রতিটি মানুষ একেক পারসেপশানে দুনিয়া মাপে। দুটো কথা সোজা বাংলায় মনে রাখলে আপনি আপনার পারসেপশানে ক্লিয়ার হয়ে যাবেন
১. আপনার আগমন ও প্রস্থানের কার্যকারণ পরম্পরা।
২. চিন্তার ধারা কী স্বয়ংক্রিয় না ধার করা।কঠিন মনে হতে পারে। তবুও এই দুটো কথার ব্যঞ্জনা ব্যাখ্যা ও পারম্পর্য অন্বেষণ অত্যাবশ্যক। কাকের মতন ময়ুরনৃত্য শিখতে যাবেন না। আবার প্রচ্ছদে ‘কবুল’ করে কালারের দোষ দিবেন না!
সিনানের উচ্ছলতা আর তার মায়ের স্বতঃস্ফুর্ততাকে ধ্যানজ্ঞান করি,অন্যসব থিওরি চুলায় যাক!
প্রতি / এডি /রন