পাহাড়ে বইছে বৈসাবির আমেজ

প্রকাশঃ এপ্রিল ১১, ২০১৭ সময়ঃ ২:৪৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:১২ অপরাহ্ণ

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি:

ফাইল ছবি

পাহাড়ে শুরু হলো প্রাণের উৎসব বৈসাবি। পাহাড়-হ্রদ আর অরণ্যের শহর রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। চাকমাদের ভাষায় এ উৎসবকে বিজু, ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক এবং মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় বিষু এবং অহমিয়াদের ভাষায় বিহু নামে আখ্যায়িত করা হয়। তিন জনগোষ্ঠীর প্রাণের এই উৎসবের নামের আদ্যাক্ষর নিয়েই এই উৎসবকে বলা হয় বৈসাবি উৎসব।

তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিনকে মূল বিজু এবং তৃতীয় দিনকে নুয়াবঝর বা গোজ্যা-পোজ্যা দিন বলা হয়। আর ত্রিপুরারা প্রথম দিনকে হারিকুইসুক, দ্বিতীয় দিনকে বুইসুকমা এবং তৃতীয় দিনকে বিসিকাতাল নামে অভিহিত করে থাকে।

এই বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে তিনদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে বিরাজ করে এক অসাধারণ উৎসবের আমেজ। পাহাড়ের বাসিন্দারা মহা সমারোহে পালন করে সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি। বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে রাঙামাটি স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। গতকাল অনুষ্ঠিত হয় কাবাডি, খো খো, বলি খেলা, তুমরু খেলা। এছাড়া বুধবার সকাল ৬টায় রাজবাড়ী ঘাটের নদীতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।এদিকে,শহরের ত্রিপুরা পল্লী গর্জনতলীতে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো ও বয়স্কদের বস্ত্র দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। অপরদিকে, ১৫ এপ্রিল কাউখালীর বেতবুনিয়াতে মাঠে জল উৎসব উদযাপন কমিটির আয়োজনে জল উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

ত্রিপুরাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসবের মধ্যে সবচে আকর্ষণীয় এবং প্রধানতম উৎসব হলো বুইসুক বা বৈসুক। চৈত্র মাসের শেষের দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিনসহ মোট তিন দিন পালন করা হয় এই উৎসব। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিনের প্রথম দিনকে ত্রিপুরারা হারি বুইসুক এবং শেষ দিনকে বুইসুকমা বলে থাকে। আর নববর্ষের প্রথম দিনকে তারা বলে বিসিকাতাল। উৎসবের প্রথম দিন ত্রিপুরা ছেলে-মেয়েরা ফুল তোলে। ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। কাপড়-চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে। ঝুঁড়িতে ধান নিয়ে তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মোরগ-মুরগীকে ছিটিয়ে দেয়। গৃহপালিত সব প্রাণিকে খুব ভোরে ছেড়ে দেয়। পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পড়ে ছেলে-মেয়েরা গ্রামের ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায়। ছেলে-মেয়েদের বিচিত্র পিঠা আর বড়দের মদ ও অন্যান্য পাণীয় পান করানো হয়। বৈসুক শুরুর দিন থেকে গরয়া নৃত্য দল গ্রামের প্রত্যেক উঠোনে নৃত্য করে। এই আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক নৃত্যকে ত্রিপুরারা ‘গরয়া নৃত্য’ বা ‘খেরেবাই নৃত্য’ বলে থাকে।

ফাইল ছবি

বৈসাবি উৎসবের ‘সা’ আদ্যক্ষরটি অন্যতম পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব থেকে নেয়া। মারমাদেরও অন্যতম সামাজিক উৎসব হলো সাংগ্রাই। মারমারা সাধারণত মষীসনের চান্দ্র মাস অনুসারে এই দিনটি পালন করে থাকে। বছরের শেষ দুই দিন এবং নববর্ষের প্রথম দিন পালিত হয় এই উৎসব। সাংগ্রাই উৎসব উদযাপনের সময় মারমা যুবক-যুবতীরা পিঠা তৈরির জন্য চালের গুড়া তৈরি করে। মারমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান পানি খেলা বা জলকেলি। এই খেলার সময় এক জায়গায় পানি ভর্তি রেখে যুবক-যুবতীরা একে অপরের দিকে পানি ছুঁড়ে মারে। স্নিগ্ধতায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে। এছাড়াও এই দিন মারমারা বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় বাণী শ্রবণ করে। ঘিলার বিচি দিয়ে ঘিলা খেলা এইসময় মারমাদের একটি প্রিয় খেলায় পরিণত হয়। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সাংগ্রাই উৎসব পালন করা হয় বলে ধারণা করা হয় সংক্রান্তি শব্দ থেকেই সাংগ্রাই শব্দটি এসেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের প্রধান উৎসবের নাম বিজু। বিজু তাই এখানে এনে দেয় এক অন্যরকম অনূভূতি আর মোহনীয় আবেশ। উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমারা বলে ফুলবিজু। এদিন বিজুর ফুল তোলা হয় এবং ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়।পরে সে ফুল দিনান্তে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বিজুর সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি বেড়াতে যায়। তারা সবাই বয়স্কদের সালাম করে এবং ঘরের হাঁস-মুরগীকে ধান-চাল ছিটিয়ে খাওয়ায়। এইসময় ঘরে ঘরে রান্না করা হয় পাঁজন নামের এক বিখ্যাত খাবার। হরেক রকম সবজি আর তরকারির সমন্বয়ে রান্না করা খাবার সবার প্রিয় খাবার হয়ে উঠে।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G