পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল না গিরিশের
শারমিন আকতার
বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবে। ইচ্ছে ছিল কাউকে আর চুরি করতে দেবে না, মারতেও দেবে না। তবে তার এ ইচ্ছে আর সত্য হল না। দীর্ঘদিন কিডনী সমস্যায় ভোগার পর মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা গেলেন জয়পুরের সেই এক দিনের পুলিশ অফিসার গিরিশ শর্মা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন; একদিনের পুলিশ অফিসার। গত বছরের ৩০ এপ্রিল একদিনের জন্য গিরিশকে পুলিশ কমিশনার করা হয়েছিল। তার শেষ ইচ্ছাকে সম্মান করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন গিরিশকে এ সুযোগ করে দিয়েছিল। যদিও গিরিশের পক্ষে এ অনুরোধটি করেছিল ‘মেক এ উইশ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।
তবে এ ধরণের উদ্যোগের পেছনে এক কঠিন সত্য লুকিয়ে ছিল। গিরিশ শর্মা কিডনির দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হবে। মৃত্যুপথযাত্রী এই শিশুর ইচ্ছার কথা জেনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন একদিনের জন্য তাকে পুলিশ কমিশনারের সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তার বয়স ছিল ১০।
এই সংগঠনটি জানায়, গিরিশ দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত। হরিয়ানার এই বালকের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় একটি হাসপাতালে। তার পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছার কথা সংগঠনটি পক্ষ থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এটি পূরণে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
জয়পুরের পুলিশ কমিশনার জংগা শ্রীনিবাস রাও বলেন, ‘গিরিশের ইচ্ছার কথা শোনার পর আমরা তার ইচ্ছা পূরণের সিদ্ধান্ত নিই’।
একদিনের জন্য যখন গিরিশকে পুলিশ কমিশনার বানানো হয়েছিল, তখন সে বলেছিল, পুলিশ হতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি চোর ধরতে চায়, কারণ চোরেরা সমাজে খারাপ কাজ করে’।
এই ইচ্ছাপূরণ হওয়ার পর কিডনির কঠিন অসুখ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় হাসপাতালে। জীবনের প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভে যেতে লাগলো গিরিশের। তবুও তার বিশ্বাস ছিল অটল; বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার। এদিকে শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মায়ের কিডনি নিয়ে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলেন ডাক্তাররা। তাতেও কাজ হয়নি।
অবশেষে ছেলেকে দিল্লির এইমসে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা, খাবার বিক্রেতা জগদীশ শর্মা। কিন্তু গত বুধবার রাতে চিকিৎসকরা পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেওয়ায় গিরিশকে নিয়ে জয়পুর ফিরে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেন, বাড়িতে মায়ের কোলে শেষ নিশ্বাসটা যেন ফেলতে পারে সে। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি।
পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্ন রেখে, বাড়ি থেকে অনেক দূরে দিল্লির হাসপাতালে সে রাতেই মারা যায় ছোট্ট গিরিশ।
=======