পৃথিবীর অন্যতম সুইসাইড স্পট ‘আওকিঘারা’
আমাদের রহস্যময় পৃথিবীতে রহস্যের কোনো সীমা নেই। সময়ে অসময়ে বিভিন্ন ভাবে এই প্রাকৃতিক রহস্যগুলো উদ্ভাবন হয়েছে আবার এমন অনেক রহস্য রয়েছে যেটিকে উদ্ঘাটন করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান ধুম্র জাল। তবুও থেমে নেই রহস্যের প্রতি মানুষের কৌতুহল।ঘটনা হোক ছোট অথবা বড়, স্বভাবতই পুরো বিষয়টির শেষ না দেখে কেউই থেমে থাকেন না। কিন্তু এর মাঝেও আজ আপনাদের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার রহস্য প্রকাশ করতে চাই। পেছনে মাউন্ট ফুজি। তার ঠিক নীচেই ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ ভূমি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এ এক অপার সৌন্দর্য। কিন্তু প্রাকৃতিক এ নৈস্বর্গের আঁড়ালেই লুকিয়ে আছে মৃত্যুর হাতছানি। জাপানে মাউন্ট ফুজির পায়ের কাছে এই যে বিস্তৃত জঙ্গল, তার নাম আওকিঘারা ফরেস্ট। কোঁকড়ানো ও মোচড়ানো গাছ পালায় পূর্ণ এ ফরেস্টটি। প্রতি বছর এখান থেকে একাধিক লাশ, দেহাবশেষ উদ্ধার করে এইখানকার পুলিশ । এই জঙ্গলটি পৃথিবীর অন্যতম সুইসাইড স্পট হিসেবে কুখ্যাত। শুধু কি দেহ বা দেহাবশেষ? তা নয়। পুলিশের বক্তব্যে, জঙ্গলের গভীরে কঙ্কালের ভিড় লেগে রয়েছে। গাছ এবং জংলার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে তারা। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। বলা বাহুল্য, এটিই জাপানের সবথেকে ভুতুড়ে জায়গা। ইতিমধ্যেই এই জঙ্গল নিয়ে ছবিও নির্মান করেছে হলিউড। তবে জঙ্গলে কোনো ভাবেই শ্যুটিং করার অনুমতি মেলেনি।
কিন্তু কেন এই জঙ্গলকেই আত্মহত্যার জন্য সবাই বেছে নেন কেন? জাপানিদের বক্তব্য, ১৬ বর্গমাইল দীর্ঘ এই জঙ্গলে অশরীরীদের বসবাস । আর তারাই ডেকে আনেন জীবিত মানুষকে। সেই অশরীরীর ডাকও নাকি জঙ্গলের ভেতর থেকে শোনা যায়। মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী বলছে? বলা হয়, ফুজির পায়ের কাছে নিজেকে বলিদান দেওয়ার রীতি হয়তো কখনও ছিল। আর সেখান থেকেই এই ধারা চলে আসছে। আগে যা ছিল আত্মবলিদান, পরে তা-ই পাল্টে আত্মহত্যায় দাঁড়িয়েছে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গড়ে ৩০ জন করে বছরে আত্মহত্যা করতেন। কিন্তু ২০০৪ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটাই বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮-এ। ২০১০ সালে ২৪৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, এর মাঝে ৫৭ জন মারা যান। আত্মহত্যা ঠেকাতে প্রশাসন জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছেন এবং তাতে লিখা রয়েছে, ”আপনার জীবন মূল্যবান”, ”আত্মহত্যার আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলুন”, ”প্রিয়জনের মুখগুলো দয়া করে মনে করুন”- গোত্রের কথাবার্তা লেখা রয়েছে তাতে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাসিব