প্রকৃত সুপারহিরো সোয়াত : মনিরুল
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
রাজধানীর কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জর পাইকপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যাণ্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সিটিটিসি ইউনিটপ্রধান বলেছেন, ‘আমাদের ইউনিটের সোয়াত সদস্যরা যেভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও কর্তব্য পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দেন, তখন গর্বিত হই! আমাদের বোম ডিসপোজাল ইউনিট সদস্যরা যখন আনইউজয়াল গ্রেনেড কিংবা বোমা নিষ্ক্রিয় করেন, দূর থেকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি ছেলেগুলোর কি জীবনের মায়া নেই!’
তিনি নিজের অবদানকে অন্যান্য জুনিয়র সহকর্মীদের চেয়ে পিছিয়ে রেখেছেন। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছেন, তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মনিরুল। তিনি বলেছেন, ওই দুই অভিযানে প্রকৃত সুপারহিরো সোয়াত এবং পার্শ্বনায়ক বোম্ব ডিস্পোজাল টিম।
সোমবার মধ্যরাতে দেওয়া মনিরুল ইসলামের স্ট্যাটাসটি প্রতিক্ষণ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো –
“বন্ধুগণ,
আমি অতি সাধারন মানুষ, দোষে-গুনে মানুষ। কিছু কিছু গুন যে আমার নাই তা নয়, তবে ক্রুটি-বিচ্যূতির পরিমানটাই বেশী। তবুও কেন যেন আপনারা অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন, হয়তো আমার ক্রুটি-বিচ্যূতির বিষয়টি উপেক্ষা করেন। আবার অনেকে আমাকে অসীম সাহসী, সুপারম্যান হিসাবেও হয়তো ভুল করেন। আমি ভীতু না হলেও কারনে অকারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়ার মত অতটা সাহসী নই। যতটা সম্ভব নিরাপদে থাকার চেষ্টা করি। প্রায় ২১ বছর ধরে পুলিশের চাকুরী করলেও প্রায় সাড়ে সাত বছর ডিবি এবং কাউন্টার টেরোরিজম এ কাজ করছি।
সময়টা নিতান্ত কম নয়, আবার সবটাই যে খুব মসৃন গেছে তাও নয়। অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি, অনেক সহকর্মীর সাহসী পদক্ষেপের কারনে আমরা রক্ষা পেয়েছি, মানুষ রক্ষা পেয়েছে। আমার সহকর্মীরা অনেক সময় যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নেন তা দেখে আমি ঈর্ষাবোধ করি, মনে হয় ইস আমি যদি এতটা সাহসী হতে পারতাম! আমাদের ইউনিটের SWAT সদস্যরা যেভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও কর্তব্য পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দেন, তখন গর্বিত হই! আমাদের Bomb Disposal Unit সদস্যরা যখন Unusual Grenade কিংবা বোমা নিস্কিয় করেন, দূর থেকে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি ছেলেগুলোর কি জীবনের মায়া নেই!
কল্যানপুর এবং নারায়নগঞ্জ পাইকপাড়া-দুটো অপারেশনে SWAT সদস্যরা যে মাত্রার ঝুঁকি নিয়েছে তাতে মনে হয় ওদের চাইতে অনেকবেশী প্রশিক্ষিত অন্যকোন দেশের SWAT কিংবা Commando সদস্যরা নিজের জীবনকে এতটা সস্তা হয়তোবা নাও মনে করতে পারতো! আমার মনে হয়, কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’ এর মত এত ঘিঞ্জি এলাকার পোড়ো বাড়ির ৫ তলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকোন দেশের কমান্ডোরা এতদ্রুত সফল অভিযান করতে পারতো না।
অন্য অনেক দেশের এই ধরনের হামলা মোকাবিলার প্রক্রিয়া বিশ্লেষন করলে বোঝা যায় কতটা ঝুঁকি এই ছেলেগুলো নিয়েছে। পাইকপাড়ায় অভিযানে অন্যদেশের কমান্ডো আনলে তারা পুরো এলাকা খালি করে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মহড়া দিয়ে, পুরো এলাকার পানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে কি এলাহী কান্ডটাই না করতো। কিন্তু SWAT’র সদস্যরা নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে অটোমেটিক রাইফেল আর গ্রেনেডের সামনে তিনতলায় অপারেশন করলো ভাবলে হৃদকম্পন হয়!
সিনিয়র কর্মকর্তা হওয়াটা একটা প্রিভিলেজ বটে! এতোটা ঝুঁকি নিতে হয় না! এসি গাড়িতে চড়ে ঘটনাস্হলে উপস্থিত হই। বুঝে কিংবা না বুঝে অনেক দূরে সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আর হেলমেট পড়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করি! ক্যামেরায় আমার ছবি যায়, সবাই মনে করে আমি নায়ক, কিন্তু আসল নায়করা অন্তরালেই থেকে যায়। আমি কল্যাণপুর আর পাইকপাড়া অভিযানের আসল নায়ক, প্রকৃত সুপারহিরো SWAT Team আর পার্শ্বনায়ক Bomb Disposal Unit কে তাদের অদম্য সাহসিকতা আর রণকৌশলের জন্য প্রানঢালা অভিন্ন্দন জানাতে চাই! Hats off, SWAT! I’m proud of you guys!!!”
প্রতিক্ষণ/এডি/আরএম