প্রতিবন্ধী নিউটন ও আইনস্টাইন!

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ৩, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:০১ অপরাহ্ণ

hqdefault

আজও বিজ্ঞানের জগতে শীর্ষ স্থান দখল করে আছেন স্যার নিউটন ও আইনস্টাইন। অথচ তাঁরা নাকি প্রতিবন্ধী ছিলেন! কথাটা শুনলেই মনে খটকা লাগে। কি করে সম্ভব?

বলতেই পারেন, তাঁদের হাত-পা, চোখ-কান সব তো ঠিকই ছিল। তবে প্রতিবন্ধী কি করে হলেন । হ্যা ঠিকই ধরেছেন, শরীরের দিক দিয়ে তারা প্রতিবন্ধী ছিলেন না,  তাঁরা ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী। বিশ্বাস হচ্ছে না তো্।

কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও কথাটা সত্য। জ্ঞানের রাজ্যের এই দুই রাজার মানসিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এটা ট্রিনিটি কলেজের মনোবিদ্যার প্রফেসরের দাবী । প্রফেসর মিখাইল ফিটৎজেরাল্ড মতে, নিউটন ও আইনস্টাইন সহ বহু বিজ্ঞানী, মনীষীর মাঝে ‘এসপার্জার’ নামক প্রতিবন্ধীতার লক্ষণ দেখা যায়।

এই ‘এসপার্জার’ হল এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা, যা প্রকাশ পায় সামাজিকতায় অনগ্রসরতা, বিশেষ বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ ইত্যাদির মাধ্যমে। এজন্য দেখা যায় আইনস্টাইনকে প্যটেন্ট অফিসে কাজ করতে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার যোগ্যতা তার মাঝে ছিলনা।

আইনস্টাইন জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য। আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। সবচেয়ে বিখ্যাত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলবিজ্ঞান ও তড়িচ্চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিল এবং আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অসম গতির ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

অন্যদিকে নিউটন প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৬৮৭ সনে তার বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয় যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, আর তার গবেষণার ফলে উদ্ভূত এই চিরায়ত বলবিজ্ঞান পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগতে একক আধিপত্য করেছে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সাথে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণার পেছনে সামান্যতম সন্দেহও দূরীভূত হয়।

মানসিক প্রতিবন্ধকতা কারণে তাঁরা সামাজিক কর্মকান্ডে বিমুখ ছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁদের এই সমস্যাই তাঁদেরকে এনে দিয়েছিল প্রচুর গবেষণা করার সুযোগ, যার জন্যই তাঁরা অবস্থান করে নিয়েছেন বিজ্ঞানের ইতিহাসের পাতায়। ফিটৎজেরাল্ড ঠিকই বলেছেন, “মানসিক প্রতিবন্ধকতার অনেক পজিটিভ দিকও আছে।”

 

প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G