প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নির্ণয়

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ সময়ঃ ২:০৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৩১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

rog1বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সঠিক রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের যথেষ্ট অভাব রয়েছে এবং একই সঙ্গে রোগ নিরাময় কেন্দ্রের খরচও অনেক। যে দেশের বেশিরভাগ মানুষ গরিব এবং তিনবেলা খাবার জোটানোই তাদের জন্য কষ্টকর তাদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের খরচ জোগানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

তাই প্রাকৃতিক উপায়ে উপসর্গ দেখে রোগের প্রাথমিক নির্ণয় একটি কার্যকর পদ্ধতি। এ সম্পর্কে আমাদের সবারই ধারণা থাকা প্রয়োজন:

ডায়াবেটিস : অতি প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত ডায়াবেটিস হচ্ছে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এটি হতে পারে ইনসুলিন নামক হরমোনের উৎপাদনের সমস্যা অথবা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে। ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয়। বারবার পানি পিপাসা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, শরীর দুর্বল লাগা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। সকালের প্রথম প্রস্রাব একটি স্বচ্ছ পাত্রে রেখে রোদে দিলে যদি ৪ ঘণ্টার মধ্যে তলানি (প্রায় ৭০ ভাগ) জমে, তবে বুঝতে হবে এটি ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের লক্ষণ। খোলা জায়গায় প্রস্রাব করলে পোকামাকড় প্রস্রাবের কাছে যদি আনাগোনা করে তাহলে এ লক্ষণ বোঝা যাবে। বিশেষ করে পিপীলিকা জাতীয় প্রাণী আসা, ডায়াবেটিস মেলিটাস নির্দেশ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- তুলসী পাতা, করোল্লা, জামরুল, মেথি, মেহগনি, নয়নতারা, ডুমুর, জামবীজ ইত্যাদি অত্যন্ত উপকারী।

জন্ডিস :  আসলে জন্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। তবুও আমরা প্রচলিত ভাষায় জন্ডিসকে রোগ হিসেবে মূল্যায়ন করি। জন্ডিস হতে পারে কোনো জীবাণুর সংক্রমণে অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে। এ রোগে রক্তে মোট বিলোরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীর ফ্যাকাসে হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া, শরীর খুব ক্লান্ত লাগা, চোখের রং হলদে ভাব হয়ে যাওয়া, চর্বিজাতীয় বা গুরুপাক জাতীয় (বিরিয়ানি, কাবাব, কোর্মা, টিকিয়া, ফাস্টফুড ইত্যাদি) খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা এবং হজম না হওয়া, জিহ্বার রং হলুদ ভাব হয়ে যাওয়া, খাবারে অরুচি দেখা দেয়া এসব উপসর্গ থাকলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়া ভূঁই আমলা, অর্জুন ছালের গুঁড়া, কালোমেঘ ও ঘৃতকুমারীর রস সকাল-বিকাল খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়। পেঁপে, কলা, স্যুপ, বিভিন্ন ফলের জুস এবং দই জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।

গ্যাস্ট্রাইটিস বা পাকস্থলীর প্রদাহ :

rogসাধারণত সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়া, গুরুপাকজাতীয় খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত ভোজন গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের কারণ। খাবারে বেশি পরিমাণে মসলা ও তেলের ব্যবহার গ্যাস্ট্রাইটিসের সৃষ্টি করে। গলা ও বুক জ্বালাপোড়া করা, টক টক ঢেঁকুর ওঠা, বমি বমি ভাব ও বমি করা, খাওয়ার আগে বা পরে পেট ব্যথা করা, পেট ফেঁপে যাওয়া, টকজাতীয় খাবার এসিডিটি বৃদ্ধি করে এসব উপসর্গযুক্ত রোগীদের নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।

পেপটিক আলসার :

দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রাইটিস থাকলে তা কালক্রমে পাকস্থলী ও অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি করে। আর সেই ক্ষতকেই আমরা পেপটিক আলসার অথবা ডিওডেনাল আলসার বলি। খাবার আগে বা পরে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এমনকি মাঝে মধ্যে বমি হওয়া, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা পেট থেকে পিঠ পর্যন্ত ব্যথা, মলের রং পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া (কালচে রঙের মল হতে পারে)। গ্যাস্ট্রাইটিস ও গ্যাস্ট্রিক আলসারে আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, ষষ্ঠিমধু, খয়ের, মঞ্জিষ্টা, হলুদ, আদা, গোলমরিচ, ইসবগুল, বাবলাগাম ইত্যাদি খুবই কার্যকর।

হৃদরোগ : স্থূলতা, হাইপারটেনশন, হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া, ডায়াবেটিস, জন্মগত বা বংশগত রোগ।  এই সব রোগের কারণে হৃদরোগ হয়ে থাকে। বুকে ব্যথা (মনে হবে কেউ সূচালো সুই দিয়ে হৃৎপিণ্ডে খোঁচা দিচ্ছে), নাড়ির গতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি  পাওয়া শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বাভাবিকতা শরীরের রং ধূসর বা নীলাভ হয়ে যাওয়া, চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। রসুন, পেঁয়াজ, মাছ, জলজ উদ্ভিদ, বাদাম, কালোজিরার তেল, জয়তুন তেল, সূর্যমুখীর তেল, অর্জুন ছাল, ডালিম, সয়া প্রোটিন, স্ট্রবেরি, গোলাপ ইত্যাদি হৃদরোগ প্রতিরোধে উপকারী। গুরুপাক জাতীয় খাবার (বিরিয়ানি, টিকিয়া, কাবাব, ফাস্টফুড), লাল মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ইলিশ মাছ ইত্যাদি খাদ্য শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে বিধায় এগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত।

প্রতিক্ষন/এডমি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G