প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা শিক্ষার চর্চা, ধরণ ও একটি মূল্যায়ন
গত দুই দশকে দেশে যেভাবে গণমাধ্যম বিকশিত হয়েছে তা এক কথায় অকল্পনীয়। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ক্ষুদ্র এই দেশে বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪৩টি (চলমান এবং প্রচারের অপেক্ষায়), রেডিওর সংখ্যা ১৬টি, অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা ১০২৪ টি (যারা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছে)। এছাড়া দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকার সংখ্যা রয়েছে ভুরি ভুরি। এর সর্বশেষ ও প্রকৃত সংখ্যাটি তথ্যমন্ত্রণালয় এবং পিআইবি-ই বলতে পারবে।
তবে এটা ঠিক, দেশে গণমাধ্যমের বর্তমান সংখ্যা এবং তথ্য প্রবাহের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে; এখানে একটি নিরব বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। কিন্তু একই সাথে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সংবাদের কনটেন্ট, প্রচারের ধরণ, নিউজ ট্রিটমেন্ট, উদ্দেশ্য, সংবাদের রূপ-রং এবং বাণিজ্য; মোটকথা রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়টি অনেকক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
হাতেগোনা কয়েকটি মাধ্যম ছাড়া বাকিরা কি সাংবাদিকতার ইথিকস মেনে ঠিকমতো নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করতে পারছে? সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসে গেছে। দেশে এত এত গণমাধ্যম; কিন্তু দক্ষ ও যোগ্য সংবাদকর্মী কি তারা পাচ্ছে? কেন পায়নি? এছাড়া এতগুলো গণমাধ্যম-ই আমাদের দরকার আছে কিনা?কিংবা গণমাধ্যমগুলো টিকে থাকার জন্য বিজ্ঞাপনের বাজারের পরিসর যতটুকু হওয়া প্রয়োজন তা আমাদের আদৌ আছে কিনা? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর নীতি নির্ধারকদের খোঁজা প্রয়োজন। তা না করলে এর নেতিবাচক ও ভয়ানক যে বিষয়গুলো আমাদের সামনে চলে আসবে সে বিষয়ে আমরা অবগত আছি কিনা? এ প্রশ্নগুলো নিয়ে আরেকদিন আলোচনা হবে, আজ সে বির্তকে যাচ্ছি না।
যে প্রশ্নটি এ মুহুর্তে আমার কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় তা হলো; যেভাবে গণমাধ্যম বিকশিত হচ্ছে সেভাবে পেশাদার দক্ষ সংবাদকর্মী কি গড়ে উঠতে পারছে? না পারলে এর কারণ কী? এই সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ধরণটি কেমন এবং এর থেকে প্রাপ্তি-ই বা কতটুকু? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জানা প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশের ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৪ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ চালু রয়েছে। প্রতিবছরই এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হচ্ছে অনেকে। পাস করে বের হওয়া এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কত ভাগ সাংবাদিকতা পেশায় আসছে? যারা আসছে না তারা কেন আসছে না? আর যারা সাংবাদিকতা করছে তারা সফলতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা? নাকি পেশা বদল করে ফেলছে? সাংবাদিকতা পেশার উৎকর্ষ সাধনে এসব বিষয়ে সুর্নিদষ্ট পরিসংখ্যান বা গবেষণার সর্বশেষ ফলাফলটি সংশ্লিষ্টদের কাছে থাকাটা খুবই প্রয়োজন ও যৌক্তিক বলে মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কর্মরত সাংবাদিক হিসেবে উপরোক্ত বিষয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা ও কেস স্টাডি তুলে ধরে বিষয়টি সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই।
সাংবাদিকতা করবো- এই মনোভাব নিয়েই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানার্জনের জন্য চবি সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হই এবং ভালো রেজাল্ট নিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অন্য কোনো পেশায় না গিয়ে গত ১২ বছরে কাজ করেছি দৈনিক পত্রিকা, রেডিও, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যানেলে। কেবল টেলিভিশনেই পার করেছি ৭ বছর।
বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই এ পেশায় এসে হাঁপিয়ে উঠেছেন। শেষ পর্যন্ত পেশা বদল করে অন্য পেশায়ও চলে গেছেন। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন, কী এর মূল কারণ? শুধুই কি চাকুরীর নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা? না, এর বাইরেও একটি কারণ আছে; যা অনেকে বলতে চান না, এড়িয়ে যান। সেই কারণটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকতা পেশার যে চ্যালেঞ্জ; তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা। থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালের সমন্বয় করতে না পারার কারণে তীব্র হতাশা। এছাড়া প্র্যাকটিক্যালি ফিল্ডে কাজ করার অনভ্যস্ততা ও পেশাগত চাপ সামাল দিতে না পারাটাও অন্যতম কারণ। এ পেশায় যে পরিমাণ ডেডিকেশন প্রয়োজন তা আর কোনো পেশায় আছে বলে আমার মনে হয় না। সবকিছু মিলিয়ে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করা অনেক সিনিয়র এবং জুনিয়রকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে দেখেছি। কিন্তু কেন তিনি ব্যর্থ? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি তাকে ৪ বছরের অনার্স আর ১ বছরের মাস্টার্সে সাংবাদিকতা শিক্ষার মূল ভিতটুকু গড়ে দিতে পারেনি? নাকি একজন সাংবাদিককে প্র্যাকটিক্যালি ফিল্ডে কাজ করার জন্য যে পেশাগত চাপ ও চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, সে চ্যালেঞ্জের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেননি। সে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার সময় এসে গেছে।
কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কেস স্টাডি তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে-
কেস স্টাডি ১: তামিম (ছদ্ম নাম)। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। একাডেমিক রেজাল্টও ভালো। বাংলাদেশ বেতারে অনুবাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন কয়েকদিন হলো। তার কাজে সহ-সম্পাদক এবং সহকারী পরিচালক(বার্তা)বেশ বিরক্ত। অনুবাদ মোটামুটি মানের হলেও নিউজের ইন্ট্রো, নেক, বডিতে বরাবরই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তামিম। শিরোনাম কেমন হবে, ইন্ট্রো কেমন হবে, কেমন শব্দ বা ভাষা ব্যবহার করলে রিপোর্টটি শ্রুতিমধুর হবে, একটু নিউজ সেন্স খাটিয়ে ভেবেচিন্তে লিখলেইতো হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও তামিম পারছে না। ভাবতে ভাবতেই তার দেরি হয়ে যায়। সে কেন পারছে না? ৭টার সংবাদে অনএয়ার দিতে পারবেতো? এখন কী হবে? এরকম নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা কর্তৃপক্ষের। এসব কারণে ৪দিন ধরে বেশ ঝাঁড়ির ওপরে আছেন তামিম। ৫ম দিন আমার নিজের কাজ শেষ করে সহ-সম্পাদকের অনুরোধে তামিমের কাজটুকু করে দিতে হল।বেতারের সহকারী পরিচালক(বার্তা)বলেন, ‘দুজনেইতো সাংবাদিকতা বিভাগের; ও পারলে তামিম কেন পারবে না? ডিপার্টমেন্ট কি হাতে কলমে কিছুই শেখায়নি’? উনাকে বোঝালাম, সবার ব্যাসিক এক না। কিন্তু সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী পারবে না-এটা উনি মানতে নারাজ। ৬ষ্ঠ দিনে ছেলেটি আরো মারাত্নক ভুল করলো। বেতারে সকাল ৭ টার নিউজে তাকে অনুবাদ করতে দেয়া ৩টি নিউজের একটিও যায়নি।নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ করতে হল বুলেটিন। এবার তাকে নানা কথা শুনিয়ে অপদস্ত করা হল। অত:পর অপমানের ভয়ে ৭ম দিনে তামিম আর অফিসে এল না। একদিন রাস্তায় দেখা। বলল,‘ভাইয়া আমি সাংবাদিকতা করবো না, অন্য জব ট্রাই করছি’।
কেসস্টাডি ২: ইকবাল রাজু(ছদ্মনাম)। সাংবাদিকতায় মাস্টার্স শেষ করে একটি পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে জয়েন করেছে। এক অ্যাসাইনমেন্টে তার সাথে দেখা। উৎসাহও দিলাম। অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে হাউজে যেতেই রাজুর একের পর এক ফোন। আমি তখন একটি দৈনিকে কাজ করি। নিউজ টাইপ করছি। সে ফোনে জানতে চাইল কে কী বলেছে? কোনটা গুরুত্বপূর্ণ? কোনটা আগে হবে? কোনটা পরে হবে? শিরোনাম কী দিলে ভালো হয়? প্রাইম টাইমে নিজের ব্যস্ততা স্বত্ত্বেও তাকে কিছু পরামর্শ দিলাম। এরপর টানা ৭/৮ দিন তার ফোন। নিজে নিউজ লিখবো নাকি তাকে বলবো; তারপরও যতটুকু সম্ভব বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। পরবর্তী ১৫/২০ দিন তার আর কোনো ফোন নেই। ভাবলাম প্রতিদিনতো আর আমার সাথে একই অ্যাসাইনমেন্টে পড়ে না। তাই হয়তো ফোন দেয়নি। এর কিছুদিন পর একটি রেস্টুরেন্টে দেখা। কী খবর জিজ্ঞেস করার আগেই সে জানালো সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছি। খুব দু:খ আর ক্ষোভের সাথে জানালো, যদি ফাস্ট ইয়ার থেকেই ফিল্ডে এনে প্র্যাকটিক্যাল এসব বিষযের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো, তাহলে এতটা নাকানি-চুবানি খেতে হতো না। দিনের পর দিন ঝাঁড়ি খেয়ে চাকুরীটাও ছাড়তে হতো না। রাজু এও বললো, একদিন তার নিউজ হয়নি বলে তাকে নিউজরুমে খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। তখন সে ক্ষেপে গিয়ে সহ-সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদককে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করে বেরিয়ে আসে; আর অফিসমুখো হয়নি। জিজ্ঞেস করলাম এখন কী করবে? উত্তরে বললো, ভাবছি সাংবাদিকতা করব কিনা? উল্লেখ্য, পরে আরো বছরখানেক একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সে। শেষ পর্যন্ত অন্য পেশায় চলে গেছে।
কেসস্টাডি ৩: একটি অনলাইন পত্রিকায় ইকোনমি বিটে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে ৫/৬ জন। আমি তখন ঐ পত্রিকায় শেয়ারবাজার বিট করি। প্রার্থীরা সবাই সাংবাদিকতা বিভাগের হওয়ায় সম্পাদক আমাকে ডেকে পাঠালেন। এসে দেখি একজন আমার বিভাগের সিনিয়র; বাকীরা জুনিয়র। আমাকে বলা হলো, ‘তাদেরকে একটা অ্যাসাইনমেন্টে পাঠাও। ফিরে এসে রিপোর্ট লিখবে। তুমি দেখে আমাকে জানাবে কাকে কাকে নেয়া যায়’। মহাবিপদে পড়লাম। কারণ সবাই আমার চেনাজানা। যাহোক সবাই ফিল্ডে গেল এবং অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে ফিরে এল। তাদের রিপোর্ট লেখার জন্য সময় দেয়া হল ২৫ মিনিট। সিনিয়র ভাইটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করলো, বাকিরা এক ঘন্টায়ও শেষ করতে পারেনি। কারণ তারা কী লিখবে, কীভাবে লিখবে বুঝতে পারছে না। এছাড়া টাইপস্পিডও মারাত্মক স্লো। পরিচিত হওয়ার কারণে নিজেরই অপমান লাগছে; এখন সম্পাদককে কী বলবো? হঠাৎ সম্পাদকের আবির্ভাব। তিনি এসে বললেন, ‘এখনও যারা শেষ করতে পারেনি তাদের আর লেখার দরকার নেই। যে শেষ করেছে তার রিপোর্টটা দেখে আমাকে জানাও’। দেখলাম উনার শিরোনাম, ইন্ট্রো কিছুই হয়নি। ভাবলাম জার্নালিজমের মানসম্মান বাঁচানো দরকার।দ্রুত সব দেখে ভুলগুলো এডিট করে দিলাম। এরপর সম্পাদকের হাতে দিতেই তিনি খুশি হয়ে গেলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে ওকে নেয়া যায়, কী বলো’? আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। দু:খজনক হলেও সত্যি, এরপর প্রায়-ই দেখেছি সম্পাদকের সামনে ঐ বড়ভাই কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আর সম্পাদক মনের ঝাল মিটিয়ে ঝাঁড়ি দিচ্ছেন। আমাকে একদিন বলেই বসলেন, ‘ওর পরীক্ষার উত্তরপত্র তুমি লিখে দাওনিতো’? আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, ‘না’। `তাহলে পারে না কেন? এত জটিল রিপোর্ট করতে পারলো অথচ সহজ রিপোর্টটাই করতে পারছে না’। আমি কথা না বাড়িয়ে সরে গেলাম। এরপর একদিন আবিষ্কার করলাম সম্পাদকের ঝাঁড়ি থেয়ে খেয়ে গত তিন মাসে ঐ ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাকে ভরসা দিলাম-পরামর্শ দিলাম। কিন্তু তার এক কথা; তাকে দিয়ে সাংবাদিকতা হবে না। ৪র্থ মাসে হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, ‘ছোট ভাই অনেক করেছো আমার জন্য। ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হবো, কিন্তু সাংবাদিকতা আমার জন্য নয়’। এরপর আর অফিসে আসেননি তিনি। বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছেন ঐ বড় ভাই।
কেসস্টাডি ৪: বেতার, পত্রিকা এবং অনলাইনে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার পর তখন একটি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করছি। ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে দ্বিতীয় বছরেই একটি বিটের মূল দায়িত্ব পেয়েছি। সেসময় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে খুব ভালো রেজাল্ট করা ৫ জন যোগ দিলেন ঐ চ্যানেলে। প্রধান বার্তা সম্পাদকের রেফারেন্স; তাই চাকুরীটা খুব সহজে হয়ে গেল তাদের। প্রথমদিন সবাইকে উভ লিখতে দেয়া হলো। কিন্তু তারা কেউ সঠিকভাবে লিখতে পারলো না। ডেপুটি নিউজ এডিটর আমাকে তাদের ভুলগুলো ঠিক করে দিতে বললেন। এরপর টানা ২ সপ্তাহ আমাদের বিভিন্ন বিটের রিপোর্টারদের সাথে অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো হল তাদের এবং ফিরে এসে রিপোর্ট কীভাবে লেখা হয় তারা তা দেখলো বেশ মনোযোগ দিয়ে। আরো ২ সপ্তাহ কেটে গেল। ১ মাস পর প্রত্যেক নতুন রিপোর্টারদের অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো হলো। ফিরে আসার পর প্যাকেজ লিখতে দেয়া হলো। কীভাবে লিখবে তাও বুঝিয়ে দেয়া হলো। অবাক করা বিষয়, প্যাকেজ কী লিখবে..লিংকটা-ই কেউ ঠিকমতো লিখতে পারলো না! তাদের এভাবে ব্যর্থ হতে দেখে ডেপুটি নিউজ এডিটর মারাত্মক ক্ষেপে গেলেন। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়লেন। এরপর প্রধান বার্তা সম্পাদককে ডেকে নালিশ করলেন। তখন তিনি এসে দেখলেন তার সুপারিশপ্রাপ্তদের বেহাল দশা! অত:পর আমাকে বললেন, ‘ভাই ৭ টার নিউজ ধরাতে হবে। মাত্র ১ ঘন্টা ২০ মিনিট সময় আছে। এদের দুটি প্যাকেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ; তোমাকেই লিখে দিতে হবে’। আমার কাজ শেষ, বাসায় ফেরার তাড়া। কিন্তু কী আর করা, সম্পাদকের অনুরোধ তাই লিখে দিতে হল। এরপর যখন রিপোর্টটি নিয়ে ঐ দুজন ভয়েস রুমে গেল; একজন পে-অফ এ গিয়ে তার নামের উচ্চারণটা ঠিকমতো করতে পারছে না। প্রথম অক্ষর ‘ক’ কিন্তু সে উচ্চারণ করছে‘খ’। ভয়েস রুম থেকে কমপ্লেইন এলো; তার ভয়েস গেল আটকে। আরেকজনের ভয়েসে আঞ্চলিক টোন থাকায় তার ভয়েসও আটকে দেয়া হলো। অফিস থেকে বের হয়ে আমি তখন গাড়ির অপেক্ষায়। প্রধান বার্তা সম্পাদকের ফোন, ‘ভাই আমার, জানি তোমার ডিউটি শেষ, কিন্তু আমাকে উদ্ধার কর, ওদেরকে দিয়ে হবে না। ৭ টার নিউজে নিশ্চিত ধরা খাবো। ভয়েসটা দিয়ে যাও প্লিজ’। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তাদের দুটি প্যাকেজ ৭টার নিউজে আমার ভয়েসেই অনএয়ার হলো। এতে দুজনই বেশ বিব্রতবোধ করছিলো। উল্লেখ্য, নানা ঘাত-প্রতিঘাত সইতে না পেরে এই ৫ জনের ১ জন প্রথম মাসে; বাকী ২ জন তৃতীয় মাসে চাকুরী ছাড়লো। টিকে গেল ২ জন। কিন্তু শুদ্ধ উচ্চারণে ভয়েস দিতে না পারার অপরাধে একজনকে ডেস্কে দিনের পর দিন উভ রিপোর্ট করতে দেয়া হলো। আর নিউজ সেন্স না থাকার কারণে আরেকজনকে টিভির স্ক্রল লেখার দায়িত্ব দেয়া হলো। এদের দুজন দীর্ঘ ৯ মাস হতাশা নিয়ে কাজ করে গেল। একদিন টিভি চ্যানেল ছেড়ে তারা দুজনে একসাথে যোগ দিলো ব্যাংকে। অফিসে এলো মিষ্টি নিয়ে। প্রধান বার্তা সম্পাদক মিষ্টি খেতে খেতে বললেন, ‘ভালো করেছো, সাংবাদিকতা আসলে তোমাদের জন্য নয়’!
কেসস্টাডি ৫: একটি টিভি চ্যানেলে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছি গত ৫ বছর ধরে। ক্রাইমের একটি অনুসন্ধানী প্রোগ্রাম করার পাশাপাশি একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছি। গত ৩ বছরে আমার অনলাইন পত্রিকার সংবাদকর্মীদের নিয়ে ভালো-মন্দ দু’ধরনের অভিজ্ঞতাই হয়েছে। শুধু এটুকু বলবো, আমি নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরই সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়েছি। তারা ঠিকভাবে থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালের সমন্বয় করতে পেরেছে কিনা; আমি সে আলোচনায় যাবো না। তবে কাউকে তাচ্ছিল্য না করে শেখানোর চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা থেকে হারিয়ে যাবার যে প্রবণতা দেখেছি, তা এখানে হতে দিতে চাইনি। এ কারণে পত্রিকার সাপ্তাহিক মিটিং রুমকে পরিণত করেছি রিপোটিং এর ক্লাসরুমে। রিপোর্টিংয়ের বিভিন্ন ধরণ ও কৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে বোর্ডে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিছুদিন পর ফলাফল দেখে আমি বিস্মিত। তারা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। যাদের নিজের হাতে রিপোটিং শিখিয়েছি, তাদের অনেকে এখন চ্যানেলেও কাজ করছে। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা আসছে তারা বেশ দ্রুত শিখে নিতে পারছে। তবে দু:খজনক হলেও সত্যি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা এসেছে ব্যাসিক দূর্বল থাকার কারণে তাদের অবস্থা আসলেই ভয়াবহ। হেডলাইন এবং ইন্ট্রোর পার্থক্য তারা অনেকেই জানে না। ইন্ট্রোতে যা লেখে হেড লাইনেও তা হুবহু দিয়ে দেয়। এছাড়া ভাষাগত সমস্যা ও বানানের ক্ষেত্রেও মারাত্মক দুর্বল। কোনো অ্যাসাইনমেন্টে পাঠালে সেই নিউজ সাব-এডিটরদেরই লিখে দিতে হয়। এক কথায়, নিউজ সেন্স নেই বললেই চলে। অনেক শেখানো পড়ানোর পরও সুযোগ পেলেই কাট-কপি করতে চাওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ রকমের। তারপরও এভাবেই চলছে। এবার থামানো দরকার। এ কারণে বর্তমান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকতা ডিগ্রির পাশাপাশি, ৪/৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকাকে বাধ্যতামূলক করেছি। এবার দেখছি সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ে বাইরের বিভাগের লোকজন বেশি আবেদন করেছে। এতেই বুঝলাম সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে প্র্যাকটিক্যাল নলেজকে সম্পৃক্ত করতে না পারার যে ব্যর্থতা তার অন্যতম দৃষ্টান্ত এটি।
উপরের কেসস্টাডিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, দেশে সাংবাদিকতা শিক্ষার যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে; তা থেকে দক্ষ ও যোগ্য জনবল বের হচ্ছে না। ফলে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪/৫ বছর পড়ে সাংবাদিকতার ডিগ্রি নিচ্ছে; তাদের বেশিরভাগই সাংবাদিকতার মূলধারাতেই টিকতে পারছে না। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আবার ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়; তবে ব্যতিক্রমকে কখনও উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো যায় না।
যারা অন্য কোনো বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছে, তারা ফিল্ডে গিয়ে প্র্যাকটিক্যালি কাজ করে শিখবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করে এসেছেন, তারা কেন কর্মক্ষেত্রে এসে নতুন করে সাংবাদিকতা শিখবেন? এই প্রশ্নটি বিভিন্ন গণমাধ্যমের শীর্ষ পদে থাকা কর্তাব্যক্তিদের। তাদের এরূপ বক্তব্য অমূলক নয়।
একজন শিক্ষার্থী যদি সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষ থেকে প্র্যাকটিক্যালি ফিল্ডে গিয়ে কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় এবং তা তৈরি করতে হয়; এই ধাপগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারতো; তাহলে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে এতটা হিমশিম খেতে হতো না, অপদস্তও হতে হতো না। এই যে ব্যর্থতার গ্লানি; এই দায়ভার কার? ঐসব শিক্ষার্থীর, শিক্ষকের নাকি শিক্ষাপদ্ধতির?
একজন ডাক্তারের নামের আগে পরে অনেক ডিগ্রী আছে। কিন্তু তিনি রোগী দেখে রোগ নির্ণয় করতে পারেন না; কী ঔষধ লিখতে হবে তাও জানেন না। এমন ডাক্তারের সার্টিফিকেটের কি কোনো মূল্য আছে? ঠিক তেমনি সাংবাদিকতায় যারা শুধু থিওরি মুখস্ত করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হয়েছেন, প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞানের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়ে উঠেনি; বাস্তবে তাদের অবস্থাও ঐ ডাক্তারের মতোই।
মূলত শিক্ষাপদ্ধতির ত্রুটিই তামিম-রাজুদের সাংবাদিকতা পেশার ব্যাপারে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। এতটাই যে, একদিন সাংবাদিক হবার স্বপ্ন নিয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন এ বিভাগে; তারা এখন সাংবাদিকতা পেশা থেকে অনেক দূরে পালিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চান। অন্য পেশায় চলে যেতে চান। যারা ভালবেসে এ পেশায় এসেছিলেন তাদের এই অবস্থা; আর যারা(সিংহভাগ)আসেননি তাদের কথাতো বলাই বাহুল্য?যদি জরিপ করা হয়, সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কেন এ পেশায় আসছেন না; আর যারা এসেছেন, তারাই বা কেন টিকে থাকতে পারছেন না; তাহলে আমি নিশ্চিত এই সেক্টরের প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ত না করার বিষয়টি অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসবে।
এ বিভাগের কয়েকজনকে দেখেছি, বেশ ভালো লেখেন এবং নিউজসেন্সও খুব প্রখর; তবে অন্য পেশায় আছেন। তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ড সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায়, সাংবাদিকতা পেশায় আসার সাহস করে উঠতে পারেননি।
শিক্ষা পদ্ধতিতে কী এমন সমস্যা, যে কারণে প্র্রাকটিক্যালি ফিল্ডের সাথে যোজন যোজন দুরত্ব তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করে অনেকে ভিন্ন পেশায়ও ভালো করছে। কিন্তু আমি মনে করি এতে বিভাগের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কিছু নেই। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীরা যদি কর্মক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে; তবে সেটাই হবে বিভাগের প্রকৃত অর্জন। আমি মনে করি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রতিবছর কতজন সাংবাদিকতা পেশায় যাচ্ছে এবং তারা কেমন করছে; সে বিষয়ে মনিটরিং করে বিভাগের সফলতা-ব্যর্থতারও মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।
সাংবাদিকতা বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কর্মরত সাংবাদিক হিসেবে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রয়োজনবোধ করছি। যে অভিজ্ঞতাগুলো উঠে এসেছে তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগেরই একটি অভিন্ন চিত্রমাত্র।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্সে যোগাযোগসহ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পত্রিকা, রেডিও, অনলাইন ও টেলিভিশন সাংবাদিকতার থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো হয়ে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহারিক বিষয়গুলো পড়ানোরই প্রয়োজন বোধ করে না ঐ বিভাগ। সুতরাং তাদের বিষয়ে আর কী বা বলার আছে? যারা ব্যবহারিক বিষয়গুলো পড়াচ্ছেন, বরং তাদের দিকেই দৃষ্টি দেওয়া যাক:
পত্রিকার ক্ষেত্রে: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার তত্ত্বীয় বিষয়গুলো যতটা যত্নসহকারে পড়ানো হয়, ঠিক ততটাই অযত্ন আর অবহেলা নিয়ে পড়ানো হয় ব্যবহারিক ক্লাসগুলো। এমনভাবে ক্লাস নেওয়া হয় যেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো আগ্রহ বা আকর্ষণই তৈরি হয় না ব্যবহারিক ক্লাসের প্রতি।
এছাড়া পাঠদান পদ্ধতিও গতানুগতিক এবং সেকেলে। যেমন: ক্লাসে রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলা অথবা দুর্ঘটনার কোনো জোটিংস (টোকা)লিখতে দেয়া হয়(কোনো পত্রিকার একটা রিপোর্টকে এলোমেলো করে দেয়াটাই জোটিংস)। এরপর শিক্ষার্থীদের বলা হয় সংবাদ কাঠামো অনুযায়ী (ইন্ট্রো, নেক, বডি)সাজিয়ে লিখতে। এছাড়া আর কোনো নির্দেশনা থাকে না। সবাই যে যার মতো লিখে শিক্ষককে দেখান। তিনি পত্রিকার রিপোর্টের সাথে মিলিয়ে দেখেন কতটুকু হলো কিংবা হলো না। এই হচ্ছে পত্রিকার রিপোটিং এর ব্যবহারিক ক্লাস। জোটিংস বিষয়টি অনেকটা বাচ্চাদের পাজল গেমস মেলানোর মতো। মজার বিষয় হচ্ছে, এই জোটিংস দিয়ে আজ অবদি কেউ কখনও পত্রিকা রিপোটিং শিখতে পারেনি। বাস্তবমুখী শিক্ষার জন্য এটা একেবারেই অবাস্তব একটা পদ্ধতি।
পরিবেশ রিপোটিং, আদালত রিপোটিং এমনকি ক্রাইম রিপোটিং- সবক্ষেত্রেই এই ‘জোটিংস’লেখার একঘেয়েমী পদ্ধতি অনুসরণের কারণে; ‘রিপোটিং’এর মতো একটি চমৎকার বিষয়ের প্রতি সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই কোনো ভালোলাগা বা আকর্ষণ তৈরি হয় না। অথচ বছরের পর বছর রিপোটিং এর ক্লাস এভাবেই হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। পরীক্ষা পাসের জন্য নিতান্ত বাধ্য হয়ে সবাইকে এই জোটিংস গলাধ:করণ করতে হলেও; বাস্তবে ফিল্ডে রিপোটিং এ যারা কাজ করছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন; রিপোটিং শেখার ক্ষেত্রে এই জোটিংস কোনো কাজে আসেনি।
এর পরিবর্তে যদি প্রত্যেক শিক্ষার্থী সরেজমিনে ফিল্ড থেকে রিপোর্ট এনে শিক্ষককে জমা দিতো। তারপর, পরের দিনের পত্রিকাগুলোতে ঐ রিপোর্ট কীভাবে লেখা হয়েছে; শিক্ষার্থীর ভুলগুলো কী ছিল, কোন বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল, কীভাবে লিখলে তার রিপোর্টটা আরো সুন্দর হতে পারতো; এসব বিষয়ে আলোচনা করা হতো; তাহলে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো হতো বেশ শিক্ষণীয় ও প্রাণবন্ত। এছাড়া প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডের সাথে সরাসরি শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততাও তৈরি হতো। ফলে রাজনৈতিক রিপোটিং, অর্থনৈতিক রিপোটিং, সেমিনার রিপোটিং, খেলার রিপোটিং থেকে শুরু করে আদালত রিপোটিং পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসই হয়ে উঠতো আকর্ষণীয়।
ফিচার পড়ানোর ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের সাথে বাস্তসম্মত সম্পৃক্ততা তৈরি হয়নি। ফিচার এর জন্য বিদেশি লেখক হেলেন পেটারসনের বই-‘রাইটিং এন্ড সেলিং ফিচার আর্টিকেল’কে মানদন্ড ধরা হলেও বাস্তবে এদেশে কোনো পত্রিকা সেই স্টাইল বা স্ট্রাকচার অনুসরণ করতে দেখা যায় না। ফিচার কী? ফিচারের বৈশিষ্ট্য কী? কীভাবে আগ্রহের ত্রিবলয় দিয়ে পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখতে হয়; এসব বিষয়ে থিওরিতে যথেষ্ট আলোচনা হলেও বাস্তবে কখনও কোনো শিক্ষক ক্লাসে একটা ফিচার লিখে শিক্ষার্থীদের সামনে একটি আদর্শ ফিচারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন এমন কথা শোনা যায়নি। ফিচার ক্লাসের অন্যতম ব্যর্থতা এটি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, স্বভাবগত এবং ভাষাগত সৃজনশীলতার সাথে বাস্তবে দেখে ও অনুভব করে ফিচার লিখতে হয়। কিন্তু সে সুযোগও শিক্ষার্থীরা পায় না। যেমন: আকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথ ধরে যে কখনও সাজেকের চূড়ায় পৌঁছেনি, সবুজ ঘাসের মাঝখানে বসে নীল আকাশে কল্পনার ছবি আঁকেনি; সে কীভাবে সাজেক নিয়ে ফিচার লিখবে? অথচ তাই লিখতে হয়। অনেকটা চাঁদের বুড়ির সুতা কাটা গল্পের মতো।
অনুসন্ধানী রিপোটিং(ডেপথ রিপোটিং), সংসদীয় রিপোটিং আর ব্যাখ্যামূলক রিপোটিং – কী, কেন, ধরণ, বৈশিষ্ট্য এসব তত্ত্বীয় আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কখনও এর বাইরে গিয়ে ‘কীভাবে’ ফিল্ড থেকে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট বের করে আনতে হয়, রিপোর্ট করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়; তা কখনও দেখিয়ে দেয়া হয় না। অথচ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে হাতে কলমে ফিল্ড থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যদি অনুসন্ধানী রিপোটিং এর ব্যবহারিক ক্লাসগুলো করা যেতো, তাহলে শিক্ষার সাথে বাস্তবতার যৌক্তিক মেলবন্ধন তৈরি হতো।
সংসদীয় রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রেও বাস্তবমুখী শিক্ষাটি জরুরী। সংসদে যেতে না পারলেও টেলিভিশনে সংসদ অধিবেশনের ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপস দেখানোর পর (মন্ত্রী, এমপি, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য)গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের অংশ থেকে কীভাবে একটি সংসদ রিপোর্ট করতে হয়; সে বিষয়টি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট লিখতে দিলে সবাই হাতে-কলমে সংসদীয় রিপোর্ট লেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতো।
এরপর আসা যাক পেজ মেকআপ এর বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের কাছে এটা হচ্ছে সবচেয়ে বোরিং ক্লাস। কলাম ইঞ্চি মেপে কাঁচি দিয়ে পত্রিকার নিউজ ও ছবি কেটে টেপ দিয়ে আর্ট পেপারে জোড়া লাগানোর এক অযৌক্তিক পদ্ধতি। পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে যারা কাজ করেছেন, তারা জানেন পেজ মেকআপ কম্পিউটারে বসে করতে হয়। বাস্তবে এরকম কাটাকুটির কোনো বিষয়ই নেই। অথচ বছরের পর বছর এ পদ্ধতিতেই পেজ মেকআপ ক্লাস হচ্ছে এবং পরীক্ষাও এ নিয়মে চলছে। (উল্লেখ্য, বর্তমানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটারে পেজ মেকআপ শেখাতে শুরু করেছে)।
অনলাইনের ক্ষেত্রে: অনলাইন সাংবাদিকতার ধারাটা বাংলাদেশে একবারে নতুন বলা চলে। পত্রিকাকে যদি তাড়াতাড়ির সাহিত্য বলা হয়; তাহলে অনলাইন সাংবাদিকতাকে বলতে হবে অতি তাড়াতাড়ির সাহিত্য। এখানে মুহূর্তের খবর মুহূর্তেই দিতে হয়। সুতরাং কার আগে কে কত আপডেট নিউজ দিতে পারছে প্রতিযোগিতা সেখানেই। এই সেক্টরেও দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এখনকার ব্যস্ত মানুষরা কাজের ফাঁকে ফেসবুকে ঢুকে অনলাইন পত্রিকা পড়ে নিজেকে আপডেট রাখে।
অনলাইন পত্রিকায় তাৎক্ষণিকতা এত বেশি যে, প্রতিমুহুর্তেই অসংখ্য চ্যালেঞ্জ একসাথে নিতে হয়। তাই ভুল ভ্রান্তির সুযোগ বেশি, শোধরানোর সুযোগ কম। কারণ একটি নিউজের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেযার দেয়ার সাথে সাথে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কোনো ভুল তথ্য দেয়া হলে তা সংশোধনের আগেই কয়েক লাখ পাঠক তা পড়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, ভালো লাগলে তা শেয়ার দিয়ে আরো অনেক মানুষকে পড়ার সুযোগ করে দেয়। আর সঠিক তথ্য পরিবেশনের দায়বদ্ধতার কারণে এই সেক্টরে দক্ষ জনবলের কোনো বিকল্প নেই। তাই অন্যান্য মাধ্যমের মতো এখানেও মূল ভূমিকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগেরই রাখতে হবে। উল্লেখ্য, সাত-আট বছর আগেও অনলাইন সাংবাদিকতা কোর্সটি ছিলো না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে নতুন এই মাধ্যমটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বর্তমানে এই কোর্সটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। তবে বরাবরের মতো এক্ষেত্রেও ব্যবহারিক শিক্ষার যে সীমাবদ্ধতা তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের যথাযথ ধারণা দিতে হলে হাতে কলমে ফিল্ড থেকে শুরু করে কন্ট্রোল প্যানেল পর্যন্ত কীভাবে নিউজটি আপলোড দিতে হয়, ট্রিটমেন্ট দিতে হয় তা শেখানো প্রয়োজন। সেকারণে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগগুলোর নিজস্ব নিউজ পোর্টাল থাকাটাও জরুরী। যেন শিক্ষার্থীদের সব কিছু ধরে ধরে শেখানো যায়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সে লক্ষ্যে নিজেদের অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করেছে।
বেতারের ক্ষেত্রে: বেতার সাংবাদিকতার প্রায়োগিক বিষয়গুলো একরকম উপেক্ষা করা হয় সাংবাদিকতার ক্লাসে। কিছু গতানুগতিক থিওরি যেমন- বাংলাদেশ বেতারের ইতিহাস, কোন বিল্ডিং থেকে বেতারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বেতারের ভূমিকা, বেতারের সামাজিক প্রভাব, বাংলাদেশ বেতারের বিজ্ঞাপন নীতিমালা ইত্যাদি কিছু তত্ত্বীয় বিষয় ছাড়া এ বিষয়ে কোনো ব্যবহারিক ক্লাস হয় না।
বেতারের জন্য একটি রিপোর্ট কীভাবে লিখতে হয়? কীভাবে ভয়েজ দিতে হয়? কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্যটি বেতার উপযোগী উপযুক্ত শব্দ ও ভাষা প্রয়োগে কীভাবে একটি প্যাকেজ লিখতে হয়? লিংকে বা সিংকে কোন অংশটুকু যাবে? কীভাবে যাবে? সাউন্ড মিক্সিং পদ্ধতিটা কী- এসব ব্যবহারিক বিষয়ে কখনও কোনো ক্লাস হয়নি।
বেতারের জন্য একটি ব্যক্ত্বিত্ব সাক্ষাৎকার কীভাবে নিতে হয়; তা কখনও সরেজমিনে দেখানো হয় না। সাংবাদিকতার মোট ৫ বছরের কোর্সে বেতারের প্র্যাকটিক্যাল বিষয় সম্পর্কে একরকম অন্ধকারেই থাকে শিক্ষার্থীরা। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শেখানোর জন্য স্টুডিও ল্যাব পর্যন্ত নেই।
টেলিভিশনের ক্ষেত্রে : টেলিভিশন সাংবাদিকতা নিয়ে বাংলায় তেমন কোন বই নেই। যে কয়টা বই আছে তাতে শুধু তত্ত্বীয় আলোচনা, প্র্যাকটিক্যাল দিকগুলো নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। আর তাই বরাবরাই টেলিভিশন সাংবাদিকতায় প্রায়োগিক দিকগুলো অধরাই থেকে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যয়নের পর প্র্যাকটিক্যালি মাঠে কাজ করতে এসে এ বিষয়টি হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছি।
মূলত যারা সেসব বইয়ের লেখক এবং যাঁরা ঐ বই অনুসরণ করে আমাদের পাঠদান করেছেন তারা নিজেরাও কখনও টেলিভিশন সাংবাদিকতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। যে কারণে থিওরেটিক্যাল সাংবাদিকতা ও প্র্যাকটিক্যাল সাংবাদিকতার মধ্যে একটি দুরত্ব তৈরি হয়েছে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে টেলিভিশন সাংবাদিকতার কোর্সটি পড়িয়ে তাঁরা নিজেরা যেমন অন্ধকারে ছিলেন, তেমনি বাস্তবতার সাথে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দূরত্ব তৈরি করেছেন।
মোটকথা, থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালের মধ্যে সংযোগটি হয়নি। পরবর্তীতে অনেক সময় নিয়ে ফিল্ডে কাজ করে বিষয়টি শিখতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সাংবাদিকতায় পড়া শিক্ষার্থীদেরতো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল না !!
যে সময়টায় ফিল্ডে গিয়ে এক্সক্লুসিভ কোন সংবাদ বের করে আনার কথা ছিল, সে সময়টাতে তাকে থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালের মধ্যে সংযোগ ঘটানোতে মনোনিবেশ করতে হচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত এ পেশায় আসা নতুনদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে প্রচন্ড ক্ষোভ এবং হতাশা। তাদের ক্ষোভ এবং হতাশা পরবর্তী যে বিরল অভিজ্ঞতা তা নিয়েই এ পেশার সাথে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। যারা এ বিরূপ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারছেনা তারা ছিটকে পড়ছে সাংবাদিকতা পেশা থেকে।
টেলিভিশন সাংবাদিকতার প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে এ বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরী বলে আমি মনে করি।
বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে টেলিভিশন সাংবাদিকতার ব্যবহারিক কোনো ক্লাস হয়না বললেই চলে। থিওরি ক্লাসই যেন সব। এসব ক্লাসে – স্যাটেলাইট কী, ক্যাবল নিউজ গ্যাদারিং কী, উভ, উভ+সিংক কী, প্যাকেজ কী, টেলিভিশন সাংবাদিকের গুণাবলী, সংবাদ উপস্থাপকের গুণাবলী, নিউজ প্রোডিউসারের কাজ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম ও কাজ ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান দেয়া হয়। কিন্তু টেলিভিশনের জন্য একটি প্যাকেজ কীভাবে লিখতে হয়? লিংক কীভাবে লিখতে হয়? একটি দেড়/দুই মিনিটের প্রতিবেদন কীভাবে তৈরি করতে হয়, বিশেষ কিংবা অনুসন্ধানী রিপোর্ট কীভাবে তৈরি করতে হয়; তা কখনও হাতে-কলমে দেখিয়ে দেয়া হয় না।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, একটি টেলিভিশন রিপোর্ট এর স্ক্রিপ্ট কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে যারা পড়ান তাদের বাস্তব কোনো ধারণাই নেই। যদি থাকতো তাহলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৫/৭ মিনিটের একটি টেলিভিশন প্রতিবেদন লেখার কথা বলা হতো না! উল্লেখ্য, বাস্তবে টেলিভিশনের কোনো রিপোর্ট দেড় থেকে ২ মিনিটের বেশি হয়না। বিশেষ কোনো রিপোর্ট হলে দুই থেকে আড়াই মিনিট; আর যদি কোনো বিশেষ রিপোর্টকে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অধিকতর গুরুত্ব দিতে চায়, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ মিনিট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এর বেশি কোনোভাবেই নয়। কারণ এখানে প্রতিটি সেকেন্ড-ই মূল্যবান। নিউজ প্রোডিউসারকে পুরো সংবাদটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হয়।
অথচ সাংবাদিকতার ঐসব ক্লাস থেকে এ বিষয়ে কোনো ধারণাই পাওয়া যায় না। এছাড়া একটি টেলিভিশনে কয়টি বিভাগ থাকে, বিভাগগুলোর কাজ কী, নিউজের রানডাউন কী; সে সম্পর্কেও কোনো বাস্তব ধারণা দেয়া হয় না।
এছাড়া ফিল্ডে গিয়ে একটি রিপোর্ট সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে রিপোর্টটি অনএয়ার যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে ধাপগুলো রয়েছে; প্রতিটি ধাপে একজন রিপোর্টারকে কোন কোন কাজগুলো করতে হয় সে সম্পর্কেও কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয় না। মোটকথা অ্যাসাইমেন্টে যাওয়া, স্ক্রিপ্ট লেখা, স্ক্রিপ্ট ফাইনাল করা, ভয়েজ দেয়া, এডিটিং প্যানেলে বসে ভিডিও মিক্সিং থেকে শুরু করে রিপোর্টটি অনএয়ার যাওয়া পর্যন্ত যে কর্মপদ্ধতি-সে সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যালি জানা প্রয়োজন; সে বিষয়গুলো না জেনেই একজন শিক্ষার্থীকে সাংবাদিকতা বিভাগের সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে আসতে হয়।
এছাড়া টেলিভিশনে ক্রাইম রিপোটিং, অনুসন্ধানী রিপোটিং এগুলোতো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। দেখা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো না জেনেই সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ডিগ্রী নিয়ে বের হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিদের টিভি স্টুডিও ল্যাব কিংবা ভিডিও মিক্সিং শেখার জন্য নূন্যতম একটি এডিটিং প্যানেল পর্যন্ত নেই। সুতরাং কর্মক্ষেত্রে দক্ষ বা যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার আগে নিজেকে কাজ শিখে টিকে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদেরতো এমনটি হবার কথা ছিলো না।
সাংবাদিকতার ক্লাসে পিটিসি, মিডপিটিসি এবং লাইভ, এজলাইভের সংজ্ঞা পড়ানো হয়। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে একটি লাইভ সংবাদ কিভাবে দিতে হয় কিংবা পিটিসি কিভাবে দিতে হয়। তা শেখানো হয় না। অথচ এখানে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হয়-কীভাবে উপস্থাপন করতে হয় তা সম্পূর্ণ হাতে-কলমে শেখার বিষয়।
মূলত এসব কারণেই টেলিভিশনে সদ্য যোগ দেয়া কারও কাজ নিয়ে চ্যানেলের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা বিরক্ত হন, আর মুখের উপর বলে বসেন- জার্নালিজম পড়ে কী শিখে এসেছো? যদিও বিষয়টি পীড়াদায়ক, কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয় না তাদের এ কথাগুলো অযৌক্তিক। আসলেইতো যেখানে যন্ত্রপাতি নেই, ল্যাব নেই, প্যানেল নেই, ক্যামেরা নেই, মাইক্রোফোন নেই, ভয়েসরুম নেই; এমনকি এসব ব্যবহারিক বিষয়গুলো বোঝানোর জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক পর্যন্ত নেই; সেখান থেকে আসলেই তারা কী শিখবে? অথচ এটাই বাস্তবতা। তাই যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ চালু হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে ঐ বিভাগের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো ও অভিজ্ঞ শিক্ষক আছে কিনা সে বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
আরেকটি বিষয় অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক বেতার ও টেলিভিশন সাংবাদিকতা নিয়ে বই লিখেছেন তারা গৎবাধা কিছু সংজ্ঞা আর ডিআইটি ভবন থেকে কীভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সূচনা হয়েছে; সেই ইতিহাসের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছেন। তাদের বই পড়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি; এই সেক্টরে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা তাদের আছে। সেকারণে বেতার ও টিভি রিপোটিং শেখার মতো কোনো বিষয়বস্তুও তাদের বইতে পাওয়া যায় না। শুধু সংজ্ঞা আর ইতিহাসের জ্ঞান দিয়েতো ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জন করা যায় না।
এছাড়া ইংরেজিতে যেসব বই আছে, সেগুলোতে ইউরোপ-আমেরিকার জার্নালিজমের সাংবাদিকতা চর্চার প্রতিফলন। ঐ বই পড়ে বা তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে এদেশে প্রফেশনালি বেতার বা টেলিভিশন সাংবাদিকতার যে চর্চা বা ধরণ তার সাথে খাপ খাওয়ানো যায় না। কমন ফিল্ড অব এক্সপেরিয়েন্স বলেওতো একটি কথা আছে। যেমন- বিবিসি, আল জাজিরায় কোনো কোনো প্রতিবেদনে একজন রিপোর্টারকে ৩ থেকে ৪ মিনিট পর্যন্ত শুধু পিটিসি দিতে দেখেছি। আবার তাদের অনেক প্রতিবেদনে ১৫ থেকে ১৭ মিনিট পর্যন্ত প্যাকেজের ডিউরেশন থাকে। যেখানে আমাদের দেশে একটি বিশেষ রিপোর্টের জন্য সবোচ্চ ডিউরেশন আড়াই থেকে ৩ মিনিট পযর্ন্ত। সুতরাং এখানেও পার্থক্যটি স্পষ্ট।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে যতদূর জেনেছি, একটু ভিন্ন ধারণা বা চিন্তার জন্য বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তবে তাদের যেসব প্রশিক্ষণ বিভিন্ন সময়ে এদেশে দেয়া হয়, সেগুলো মূলত দেশের বাইরে গণমাধ্যমে কাজের সহায়ক হলেও, কোনোভাবেই এদেশের গণমাধ্যম কাজের উপযোগী নয়। কেননা, তাদের সাংবাদিকতার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে উপমহাদেশীয় সাংবাদিকতা চর্চার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং এদেশে বেতার ও টেলিভিশনে যারা ফিল্ডে কাজ করে ব্যবহারিক জ্ঞানে ও অভিজ্ঞতায় নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন বা করছেন, তারা যখন বই লিখবেন বা প্রশিক্ষণ দেবেন; তখন সেটিই এদেশের সামাজিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও বাস্তবমুখী হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষায় দক্ষ হিসেবে বের না হবার পেছনে আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে, যা অনেকে জানেন, তবে কখনও কেউ এই পরম সত্যটি আলোচনায় আনতে চান না। আর সেটা হচ্ছে সাংবাদিকতা বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষকেরই গণমাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, হাতে গোনা খুব নগন্য শিক্ষকই আছেন যারা প্র্যাকটিক্যালি পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, রেডিও ও টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করে তারপর শিক্ষকতা পেশায় এসেছেন।
গণমাধ্যমে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও কেবল একাডেমিক রেজাল্ট ও তদবিরের জোরেও অনেকেই শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সাংবাদিকতার ক্লাসে তারা কেমন করছেন?শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সে ফিডব্যাকটুকু নেয়া প্রয়োজন। ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হলে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলনসই করে তোলারও বিকল্প নেই।
গত কয়েক বছরে কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত কয়েকজন শিক্ষক হয়েছেন; তাদের ছাত্রদের সাথে কথা বলে জেনেছি তাদের দূরাবস্থার কথা। রিপোটিং এর ক্লাসে তারাও জোটিংস পড়ান, আর বেতার ও টেলিভিশন সাংবাদিকতার ক্লাসে গৎবাধা ডিআইটি ভবনের সেই ইতিহাসের মধ্যেই নিজেকে এখনও আবদ্ধ করে রেখেছেন। সেখান থেকে বের হয়ে একটি আদর্শ টেলিভিশন স্ক্রিপ্ট লেখার শিক্ষাটা এখনও দিতে পারেননি তারা। অনুসন্ধানী রিপোর্ট, সেতো বহু দূরের কোনো স্বপ্ন!
সময়ের পরিক্রমায় গণমাধ্যম অনেক দূর এগিয়ে গেছে, প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতি মুহুর্তের সংবাদে লাইভ প্রচারের ধুম পড়েছে। নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে একের পর এক গণমাধ্যম আসছে। আর এমন অবস্থায় যদি সাংবাদিকতার কোনো শিক্ষককে বিটিভির সেই ডিআইটি ভবনের মধ্যেই এখনও ঘুরপাক খেতে হয় তাহলে কী শিখবে তাদের ছাত্র-ছাত্রীরা?
অন্যদিকে সাংবাদিকতার যে সিলেবাস, সেটিতে সময়পোযোগী পরিবর্তন আনা জরুরী। পরীক্ষায় থিওরির চেয়ে প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলোর নম্বর বাড়িয়ে এটার উপর জোর দেয়া উচিত। একইসাথে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। কেবল ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। আর সাংবাদিকতার মতো বিষয়; যেখানে প্রতিটি পদে পদে ব্যবহারিক শিক্ষাটাই মূল। সুতরাং এ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নতুন করে ভাবা দরকার। একজন শিক্ষকেরই যদি গণমাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে কীভাবে প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দেবেন, কীভাবে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন? এসব কারণেই একাডেমিক ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি গণমাধ্যমের নূন্যতম তিনটি শাখায় কমপক্ষে ৭ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকার বিষয়টিও নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা জরুরী। প্রশ্ন আসতে পারে এধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া যারা শিক্ষকতা করছেন, তাহলে তারা কী করবেন? সেটারও সমাধান আছে। তাদেরকে গণমাধ্যমে বিভিন্ন শাখায় যথাপোযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবহারিক ক্লাসের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।
এর ফলে একজন মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যেমন প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডে কাজের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে ব্রতী হন, ঠিক তেমনি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকরাও তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করতে পারবেন।
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগটি রয়েছে বিভিন্ন নামে। যেমন- যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মিডিয়া স্টাডিজ, মাস মিডিয়া, টেলিভিশন মিডিয়া স্টাডিজ, মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম, গণযোগাযোগ, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন স্টাডিজ। নানা নামে থাকলেও পড়ানোর ধরণ এবং কোর্স প্রায় একই। এছাড়া আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, যোগাযোগসহ বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হয় ৭০ ভাগ, আর সাংবাদিকতা মাত্র ৩০ ভাগ। অর্থাৎ সাংবাদিকতা বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়- ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’নামে বিভাগ থাকার পরও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন স্টাডিজ’নামে আলাদা একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। এটার যৌক্তিকতা কতটুকু? তাহলে কি বলতে হবে ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ’টেলিভিশন সাংবাদিকতা শেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে ‘ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন স্টাডিজ’নামে আরেকটি বিভাগ খুলতে হলো। আমার মতে, বিভিন্ন নামে বিভাগ না খুলে বরং মাস কমিউনিকেশন থেকে জার্নালিজমকে বের করে আলাদা বিভাগ বা ইনস্টিটিউট হিসেবে ‘জার্নালিজমকে’স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করানো প্রয়োজন। যেখান থেকে শুধু টেলিভিশন নয়, পত্রিকা, রেডিও, অনলাইন সব বিষয়ে পড়ানো হবে হাতে-কলমে। থিওরি এবং প্র্যাকটিকাল সাংবাদিকতার যথাযথ চর্চার মাধ্যমে প্রায়োগিক শিক্ষার সুতিকাগারে পরিণত হবে সাংবাদিকতা বিভাগ।
এছাড়া সাংবাদিকতা বিভাগের সিলেবাসের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অনার্সের প্রতিটি বর্ষে/সেমিস্টারে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য পর্যাপ্ত নম্বর রাখা যেতে পারে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে প্র্যাকটিক্যাল শেখার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো বা আনুসঙ্গিক সুবিধা নেই, তারা প্রতিটি বর্ষে/ সেমিস্টারের ক্লাস শেষে যেকোনো মিডিয়া হাউসে তিন মাসের জন্য শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের জন্য পাঠাতে পারেন। তিন মাসের ইন্টার্নশিপ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাকে মূল্যায়ন করে নম্বর দেবে। যা ঐ শিক্ষার্থীর প্র্যাকটিক্যাল নম্বর হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার ঐ বর্ষের/সেমিস্টার পরীক্ষার সাথে যোগ হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিখবে এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করার সুযোগ পাবে।
যেমন প্রথম বর্ষে তাদের পাঠানো যেতে পারে ‘রেডিও তে’। হতে পারে বাংলাদেশ রেডিও বা এফএম রেডিও। দ্বিতীয় বর্ষে যেকোনো ‘দৈনিক পত্রিকায়’। তৃতীয় বর্ষে যেকোনো ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালে’ এবং চতুর্থ বর্ষে যেকোনো ‘টেলিভিশন চ্যানেলে’। প্রতিটি বর্ষে ৩ মাস করে ইন্টার্নশীপের ব্যবস্থা থাকার কারণে তারা থিওরির সাথে প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলোর সমন্বয় করতে শিখবে। একই সাথে সে কোন মাধ্যমে কাজের উপযুক্ত সেটিও বুঝতে পারবে। এরপর মাস্টার্সে এসব বিষয়ের উপর কিছু এডভান্স থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালি জ্ঞান যেন প্রতিটি শিক্ষার্থী পেতে পারে; সে লক্ষ্যেও সিলেবাসে কিছু বিষয় সংযোজন করা উচিত।
যেসব বিভাগের নিজস্ব স্টুডিও ল্যাব এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক আছে তারা নিজেরাই হাতেকলমে সব শেখাতে পারে। আর বাকীদের অবশ্যই ইন্টার্নশীপের উপর জোর দিতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, কেবল থিওরি এবং ব্যবহারিক শিক্ষার পরিপূর্ণ জ্ঞানই শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতার মতো প্রতিযোগীতামূলক ও চ্যালেঞ্জিং একটি পেশার উপযোগী করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
আমি মনে করি, দেশের দ্রুত বিকাশমান গণমাধ্যমের জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতার চর্চার যে ধরণ রয়েছে; সেটিকে আমূল সংশোধন করে সময়োপযোগী ব্যবহারিক সাংবাদিকতা চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করাটা এখন শুধু প্রয়োজন নয়, সময়ের দাবী। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোনো রাম-সাম-যদু-মধু নয়; সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই সময়োপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের গণমাধ্যমের হাল ধরবে।
রাকিব হাসান
সম্পাদক, প্রতিক্ষণ ডট কম
ফোন- 01717806536 , মেইল- [email protected]
বি:দ্র: প্রতিক্ষণের যেকোনো লেখা অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। এটি কপি রাইট আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।