শারমিন আকতার
‘প্রেমের স্বার্থকতা বিরহে’রবি ঠাকুর একথা বলেছেন সেই কবে।কেন বলেছেন একথা? চলুন একটু মিলিয়ে নিই এ যুগের হাওয়ার সাথে।
যখন কেউ ভালবাসে, সে চায় ভালবেসে ধীরে ধীরে একটা ভালো বাসা খুঁজে সেখানে একটা ছোট্ট নীড় গড়ে তুলতে। ভাবলেশহীন, দু:খহীন পরম শান্তির আলয় বানাতে। যেখানে সে নির্ভাবনাময় পাখির মতো খড়কুটো খুঁজে উষ্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। অত:পর তাহারা আবিষ্কার করবে একজোড়া সুপ্ত অথচ জীবিত ডিমের। যেখান থেকে শুরু হয় ভবিষ্যৎ পথচলা।
দিনের পর দিন ভাবী ভবিষ্যতের আশায় দিন গোনা আর সুপ্ত ডিমে তা দেওয়া। এভাবেই চলছে ভালবাসা। কিন্তু একদিন নিভে গেল নিয়নের বাতি। বন্ধ হয়ে গেল ভবিষ্যৎ পথচলা। কারণ ইতোমধ্যে জীবন্ত ডিমজোড়া যমরাজের কাছ থেকে পেয়ে গেছে সেই স্টে অর্ডার। তাতে লেখা ছিল, ‘দিন গুনিয়া আর লাভ হইবে না। কারণ আপনারা উভয়েই গত হইতে যাইতেছেন। অতএব, বিদায়। সুতরাং এ রাজ্যে স্বাগতম।
এভাবেই ভেঙে গেল বাসা। আর বাকি রইলো ‘ভালো’ নামক আপেক্ষিক এই শব্দটা। সেও দিন কয়েক পরে ‘নাই’হয়ে গেল। পড়ে রইলো ‘আশা’। কিন্তু সমস্যা হল, আশা’তো নিছক ক্ষণিকের আয়েলা মরিচিকা। যদিও মরিচিকার পেছনে দৌঁড়ানোর মজাই আলাদা। তাই দুদণ্ড জিরিয়ে যান। যখন ফুরিয়ে যাবে আলেয়ার ঘোর; দেখা হবে অমরাবতীর সাথে। তখন মনে হবে, এতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন পরের স্টেশনের জন্য।
রবি ঠাকুর নিতান্তই সেকেলে ভাবনা থেকে বলেছিলেন, প্রেমের স্বার্থকতা বিরহে।আমি এ যুগের ভাবনা বলছি। শুনে দেখুন না একবার আমার কথা। ভুল হলে নাহয় চলে যাব। দুয়ারে আর কড়া নাড়বো না।
ভেবে দেখুনতো একবার, যা হারিয়েছেন তা ভেবে ঠাঁই বসে থাকবেন তা কি হয়? এখনতো সেই গাছতলাও নেই, যেখানে শান্তির পায়রাদের উড়িয়ে দিয়ে আপনি ভাবের গগনে ভেসে বেড়াবেন। যেদিকে তাকাবেন দৃষ্টি সীমানায় দেখবেন শুধু কঠিন থেকে কঠিনতর সেই দেয়ালগুলো। যেখানে পৌঁছোই না কোনো ভাবনা, তার ভাবান্তরে।
তাই এ যুগে, প্রেমের স্বার্থকতা প্রেমে, বিরহে নয়।