ফুলতলার যৌনকর্মীদের অসহায়-কান্নার রাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার রাত পৌনে ১১ টা সময় চারজন বাড়ীওয়ালাকে ফুলতলা থানায় ডেকে এনে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের সামনে জোরপূর্বক লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয় আজ সকাল ১০টার মধ্যে যৌণকর্মীদের বাড়ি খালি করে দেয়া হবে। ফলে উচ্ছেদের জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া থাকলেও গভীর রাতে কোন কারণ ছাড়াই বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন যৌণকর্মীদের। আচমকা এমন সংবাদে সারা রাত অসহায়ের মত কান্নাকাটি করেই রাত পার করেছেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার ৫৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত যৌনপল্লীর বাসীন্দারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যৌণকর্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুঠোফোনে বলেন, ‘রাত পোহালেই চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। কোনো অবস্থাতেই তারা আর যৌনকর্মীদের বাড়ি ভাড়া দেবে না। এখন হঠাৎ করে কোথায় যাব, কেমনে যাব? এভাবে কী কয়েক ঘন্টার নোটিশে কাউকে ঘরছাড়া করা যায়? কিন্তু যৌনকর্মী বলেই ওরা আমাদের সঙ্গে এ রকম করছে।’
উচ্ছেদের জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলেও গভীর রাতে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ পেয়েছেন তিনি। যাবার কোনও জায়গা নেই তার। অন্যদিকে, তার আয়েই অসুস্থ মা, ভাই-বোন আর সন্তানসহ সংসারের খরচ চলে। এখন এই জায়গায় যদি না থাকি তাহলে কীভাবে চলবে? এমন চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। রাতে ঘুমাতে পারেননি, কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকলেও নিজের জিনিসপত্রও গুছিয়ে রেখেছেন।
তার ভাষ্যমতে, ‘এখন কোথাও যে কাজ করতে যাব সেটাও সম্ভব না। কাজ করতে গেলে কেউ নেবে না, বলবে যে ও পাড়ায় ছিলো। আর পুনর্বাসনের নামে ১০-১৫ হাজার টাকা দেয়া কথা বলছে। এই টাকায় কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবো? এইখানে দেনাই তো আছে ৫০ হাজারের বেশি। আমাগেরে যদি সময় দিতো, তাইলে আমরা প্রস্তুতি নিয়া কিছু টাকা গোছাইয়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতাম’।
ফুলতলার যৌনকর্মীদের সংগঠন আলোকিত নারী উন্নয়ন সমিতির সভানেত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৩১ তারিখের মধ্যে যৌনকর্মীদের পল্লী ছেড়ে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঐ সময়ের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় চলে না গেলে দাঙ্গা পুলিশ এনে প্রশাসন পল্লী খালি করার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এখানে যারা আছে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। অনেকেই আছে যারা এই কাজ করে সংসার চালায়। সবাই আতঙ্কে আছে, লোকজনও কম আসছে। কোথায় যাব আমরা, কার কাছে বিচার চাইবো’।
ফুলতলা থানার ওসি ইলিয়াস ফকির বলেন, ‘যৌনপল্লী উচ্ছেদ নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। ওরা এসেছিলো, আমি বলেছি তোমাদের পূনর্বাসন করা হবে। এখন কীভাবে পূনর্বাসন করা হবে, কবে নাগাদ করা হবে সেটা উপজেলা চেয়ারম্যান আকরাম সাহেব বলতে পারবেন। তার সঙ্গে কথা বলেন’।
উল্লেখ্য, এর আগে ৩১ আগস্টের মধ্যে ফুলতলা যৌনপল্লী খালি করার নির্দেশ দিয়েছিলো উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি সন্ধ্যায় অস্বীকার করার পর রাতেই পল্লীর বাড়ির মালিকদের ডেকে নিয়ে আজ শনিবার সকাল ১০ টার মধ্যে বাড়ি খালি করা হবে মর্মে জোরপূর্বক লিখিত বক্তব্য নেয়া হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে।
প্রতিক্ষন/এডি/এনজে