ফেয়ার এন্ড লাভলি আছে না?
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
শুনলাম, আজকের “ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স-ডে” এর একটা ইভেন্টের স্পন্সর হলো ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’…ব্যাপারটা কেমন না? বিষয়টা কিছুটা ‘বিস্কুট খেতে খেতে দাঁত ব্রাশ করার মতো’ হয়ে গেলো না? যারা, মেয়েদেরকে ছেলেদের কাছে ন্যাচারাল বিউটি লুকাতে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে… যারা, মেয়েতে মেয়েতে ডিস্ক্রিপেন্সি তৈরি করছে, তারাই ধুমধাম করে আজকের দিন পালন করছে?
সেদিন অফিসে আসতে আসতে রেডিওতে একটা অ্যাড শুনলাম… কিছুটা এরকমঃ
ভাবি বলেছে: দেবর বাবাজী… আজ রাতে কিন্তু হলুদের দাওয়াত আছে… এখান থেকে আজকে তোমার মেয়ে পছন্দ করতেই হবে…বিয়ের বয়স তো পার হয়ে যাচ্ছে হে তোমার!!
দেবর হারামি বলছে: ভাবি, আজকের হলুদের অনুষ্ঠানে তোমার মতো একটা ফর্সা মেয়ে পেলেই কথা ফাইনাল করে ফেলবো… হে হে হে
ভাবি বলেছে: আরে চিন্তা কেনও? ফেয়ার এন্ড লাভলি আছে না… মাত্র ছয় থেকে আট সপ্তাহে আমি দায়িত্ব নিয়ে কন্যাকে, ফেয়ার করে লাভলি বানিয়ে ফেলবো—
থাম…থামম
“ফেয়ার করে লাভলি” বানিয়ে দিবি??????
আমরা ধারনা ছিলো, আমাদের মধ্যে যাই থাক না কেনও রেইসিজম নেই। ইন্ডিয়ার মতো উন্নত দেশে এখনও বিয়ের সময় জাত-ধর্ম-কুল দেখে, কিন্তু আমরা পৃথিবীর বোধ করি একমাত্র জাতি যাদের রক্তে রেইসিজম নেই… আই মিন ‘ছিল না’ কিন্তু ইদানিং, যা শুরু হয়েছে তা আসলেই লজ্জাজনক; শুধু লজ্জা জনক না… ঘৃণা করার মতো দিন দিন এই সব কস্মেটিক্সের এর প্রচার কিন্তু বেড়ে চলছে… আমাদের মন মানসিকতাও এতটাই নিচে নেমে গেছে যে আমরা এগুলো শুনেও না শোনার ভান করি…খুব ইচ্ছে হচ্ছিল এই প্রসাধনী কোম্পানির মার্কেটিং ডিরেক্টরকে, দেই একটা কল:
“হ্যালো… আমি কি আপনাদের মার্কেটিং ডিরেক্টর সাহেবের সাথে কথা বলতে পারি?”
“আপনি কে বলছেন প্লিজ?’
“আমি একজন সাংবাদিক…এডিটর – দৈনিক ফেসবুক”
“একটু ওয়েট করেন স্যার… লাইনটা ফরওয়ার্ড করছি এখনই’
‘হ্যালো হ্যালো কে?’
“আমি সাংবাদিক A. R. Hossain বলছি”
‘জি জি বলুন’
“আমি ফোনে লাইভ সাক্ষাতকার নিচ্ছি…রেকর্ড হচ্ছে… দয়া করে লাইনটা কাটবেন না”
‘জি জি বলুন বলুন’
“আপনাদের ‘ফেয়ার এন্ড লাভলির’ অ্যাডগুলো যে ইদানিং খুব রেসিস্ট হয়ে যাচ্ছে… বুঝতে পারছেন?”
‘কেনও কেনও?’
“আপনারা ছেলেদের শিখাচ্ছেন যে, বিয়ে করলে ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে হবে আর আপনাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ফর্সা হওয়া যায়”
‘যায় তো’
“তাহলে আপনারা এই প্রোডাক্ট আফ্রিকায় মার্কেট করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন না কেন?”
‘ওরা আবার বেশী কালো তো’
“তাহলে শ্রীলঙ্কায় মার্কেট করেন; ওরাও তো কালো; ওখানে করছেন না কেন? ওদের ১০০% জনগন শিক্ষিত এর জন্য???”
‘আপনার পয়েন্ট কি সাংবাদিক সাহেব?’
“পয়েন্ট হল আপনারা ভুয়ামি করছেন… এই প্রোডাক্ট আসলে কোনও কাজে দেয় নাহ”
‘আরে না, মাত্র ছয় থেকে আট সপ্তাহে এটা…”
“আমি এটা ৬ থেকে ৮ বছর হয়ে গেলো মাখছি… কোনও উপকার তো পেলাম না”
‘হলোগ্রাম, মার্কা দেখে নিয়েছেন?’
“ধুত্তরি… আমার হলোগ্রাম দেখা লাগবে না… আপনি বরং আমার মুখটা আইসে দেখেন। আগে ছিলাম আমি উজ্জ্বল শ্যাম… এখন বডি ঠিকই আছে, কিন্তু মুখ হয়ে গেছে ঘন শ্যাম… ভাগ্যিস ফুল বডিতে এটা মাখিনি”
‘আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইসাহেব’
“জি একদম ঠিক ধরেছেন, ভুলটা আমাদেরই হয়েছে… অনেক বড়ই ভুল হয়ে গেছে। তবে এখনও শুধরানোর টাইম আছে। ওয়েট দেখেন আমি কি করি এই ইস্যু নিয়ে…ওয়েট”
‘আপনি জানি কোন পত্রিকা থেকে? আপনার নামটা জানি কি বললেন? A R Rahman না কি যেন!! হ্যালো হ্যালো’
“হু… ঠিকই ধরেছেন… A R Rahman”
‘কুন A R Rahman আবার????… হ্যালো …হ্যালো’
আরিফ আর হোসেইনের ফেসবুক পাতা থেকে এই লাইনগুলো হুবহু নেয়া হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি