বঙ্গবন্ধুর শৈশবের স্মৃতি আজও টুঙ্গিপাড়ায় মানুষের মুখে মুখে

প্রকাশঃ মার্চ ১৭, ২০২০ সময়ঃ ৫:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:১১ অপরাহ্ণ

মধুমতি বিধৌত তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার একটি অনুন্নত জনপদের নাম টুঙ্গিপাড়া। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া একটি উপজেলা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ার ঐতিহ্যবাহী শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাসের রাখালরাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুন। বাবা-মা তাকে আদর করে ডাকতেন খোকা নামে। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায়ে জেল, জুলুম, হুলিয়া ও নির্যাতন ভোগসহ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ছোট্ট খোকা একদিন নিজেই হয়ে যান একটি ইতিহাস।

আবির্ভূত হন বাঙালি জাতির ত্রাণকর্তা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির জাতির পিতা হিসেবে। হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বিশ্ববরেণ্য নেতা।

টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মীর্জা বলেন, শেখ বোরহানউদ্দিন নামে একজন বুজুর্গ ব্যক্তি প্রায় তিনশ বছর আগে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ বংশের গোড়াপত্তন করেন। মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের তৈরি চকমিলান দালানগুলো শেখ বংশের আভিজাত্য ও খানদান আজও বয়ে নিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক এখন কেউ বেঁচে নেই। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এখন যেসব বক্তব্য পাওয়া যায় তার অধিকাংশের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল রয়েছে।

টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের আব্দুল হামিদ শেখ (১১০) বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় মূলত টুঙ্গিপাড়া জিটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বঙ্গবন্ধুর থেকে বয়সে বড় ছিলেন আব্দুল হামিদ শেখ। তিনি বঙ্গবন্ধুর উপরের ক্লাসে পড়তেন। বঙ্গবন্ধুর শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল। সবসময় আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকতে পছন্দ করতেন। স্কুলে সহপাঠীদের নিয়ে খেলাধুলায় মত্ত থাকতেন। বন্ধুদের নিয়ে গাছ থেকে আম পেড়ে খেতেন।কেউ কিছু বললে নিজের পরিচয় দিতেই আর কেউ কিছু বলতো না।

তিনি বলেন, একবার স্কুলে তার এক সহপাঠীকে শিক্ষক পড়া জিজ্ঞাসা করলেন। ওই ছাত্র পড়া বলতে না পারায় শ্রেণি শিক্ষক তাকে বেত্রাঘাত করেন। পরে ওই ছাত্র বলল, তার বই না থাকায় সে বাড়িতে বসে পড়া মুখস্ত করতে পারেনি। বিষয়টি শিশু মুজিবের মনকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। পরে তিনি তার নিজের বইগুলো ওই ছাত্রকে দেন।

এরপর তিনি তার বাবার চাকরিস্থল গোপালগঞ্জে চলে যান। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান মাদারীপুর মহকুমায় সেরেস্তাদার হিসেবে বদলি হন। সেখানে তিনি মাদারীপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এসময় চোখে গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কলকাতায় গিয়ে চোখের অপারেশন করা হলে ভালো হন। এসময় বঙ্গবন্ধুর পড়ালেখায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। ১৯৩৭ সালে তিনি আবার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।

বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান আবার গোপালগঞ্জ আদালতে বদলি হয়ে আসেন। তখন তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ার নিজেদের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন।

বঙ্গবন্ধুর চাচা শেখ কবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্ত্যন্ত উদার প্রকৃতির একজন মানুষ। শৈশবে তিনি আমাদের আদি বাড়ির সামনে সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। খেলাধুলা শেষে বাড়িতে যে খাবার থাকতো তিনি তা সবাইকে নিয়ে খেতেন।

গোপালগঞ্জ জেলা সিবিবি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আবু হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের সঙ্গে আমার বাবা আব্দুল হাকিমের বন্ধুত্ব ছিল। দুজনই আদালতে চাকরি করতেন। তিনি তার বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা গল্প শুনেছেন।
বঙ্গবন্ধু মিশন স্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি তার গৃহশিক্ষক আব্দুল হামিদের অনুপ্রেরণায় মুসলিম সেবা সমিতি গঠন করেন। গরিব ছেলেদের পড়ালেখার খরচের জোগান দিতে সমিতির পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টি ভিক্ষার চাল সংগ্রহ করা হতো। পরে ওই চাল বিক্রি করে যে টাকা হতো তা দিয়ে গরিব ছাত্রদের তিনি বই ও খাতা-কলম কিনে দিতেন।

১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে আসবেন খবরে মুসলমানদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের দায়িত্ব পড়ল। এ কমিটির সদস্যরা ওই দুই নেতাকে সংবর্ধনা দেবে।
ওই সময় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক মুসলিম লীগের সঙ্গে মন্ত্রিসভা গঠন করায় হিন্দুরা ক্ষেপে যায়। ফলে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে তারা সরে যাচ্ছিল। হিন্দুরা চাইছিল যাতে সংবর্ধনা না হয়। কংগ্রেস নিষেধ করায় তারা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে সরে পড়ছিল।

বঙ্গবন্ধু সারাজীবন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। হিন্দু মুসলমান সবার সঙ্গে তিনি ছিলেন সবসময় আন্তরিক। শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দীকে যে কোনো মূল্যে তিনি সংবর্ধনা দেবেন সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি মুসলিম ছাত্রদের সংগঠিত করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। অবশ্য কিছুসংখ্যক ছাত্র তাদের দলে যোগ দেয়। অবশেষে শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী এলেন। সভা করলেন এবং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন। শহরে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় গ্রাম থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ অনেক লোকজন আনা হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

শেখ মুজিব তখন মিশন স্কুলের ছাত্র। শেরেবাংলা পাবলিক স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলেন। স্কুল পরিদর্শন শেষে সোহওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় ও কথা হয় শেখ মুজিবের। কলকতা গেলে তিনি তার সঙ্গে শেখ মুজিবকে দেখা করার কথা বলেন। এরপর শেখ মুজিব ১৯৩৯ সালে কলকাতায় যান এবং সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের সম্পাদক ও মুসলিম লীগ ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি হলেন। এভাবেই শেখ মুজিবুর রহমান ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে শুরু করেন।

অপরদিকে ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ১৩ বছর বয়সে তার চাচাতো বোন শেখ ফজিলাতুন্নেসার (রেনু) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, জেল-জুলুম ও আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামটিও জড়িয়ে আছে।

শেখ মুজিবুর রহমান মিশন স্কুলের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি তৎকালীন সময়ে ভালো খেলতেন তাদের এনে স্কুলে ভর্তি করাতেন এবং বেতন ফ্রি করে দিতেন।

১৯৩৯ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় প্রথম কারাবরণ করেন। ১৯৪১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। ওই সময় তিনি রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পরীক্ষার পর তিনি কলকাতায় চলে যান। দ্বিতীয় বিভাগে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। কলেজের বেকার হোস্টেলে তিনি তখন থাকতেন। ওই সময় সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশ মোতাবেক সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা আত্মজীবনী থেকে পাওয়া যায়, ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এরই মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন।

১৯৮৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করলে বঙ্গবন্ধু তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। এসময় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। একই বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন এবং তিনি গ্রেফতার হন।

১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে সমর্থন দেন। একই বছরের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান এবং ঢাকার রাজনীতিতে যুক্ত হন।

১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে বিশাল বিজয় লাভ করে। ২ এপ্রিল মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ওই বছর ১৪ মে শেখ মুজিবুর রহমান কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন। ৩০ মে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা বাতিল করেন। ১৯৫৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৭ জুন তিনি পল্টনের জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন।

১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। তিনি নবগঠিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি হয়। আবারও গ্রেফতার হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬২ সালের ২ জুন সামরিক শাসনের অবসানের পর জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বদলীয় অপোজিশন পার্র্টি গঠন হয়। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ৬ দফা গৃহিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি হন তিনি। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও ডাকসু কর্তৃক রেসকোর্সের জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়।

১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয় হয়।

এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।

১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন। এরপর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-উত্তর নবগঠিত বাংলাদেশের পুণর্গঠনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

টুঙ্গিপাড়ার লুৎফর মিয়া বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। মায়ের জিয়াফত অনুষ্ঠানে তিনি গাজী রকেটে একবার টুঙ্গিপাড়ায় এসেছিলেন। তখন দেশে খুব অভাব ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ সায়েরা খাতুন রেডক্রস হাসপাতাল উদ্বোধন করে ফিরছিলেন। আমার বয়স তখন ১০-১১ বছর। হাসপাতালের পাশে কাঠের পুলের পাশে খান সাহেবের পুকুর পাড়ে বসে আমি তালের শাঁস বিক্রি করছিলাম।

বঙ্গবন্ধু দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, এই ছেলে তোমার হাত তো কেটে যাবে। চলে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে একশ টাকার একটি নোট দিয়ে গেলেন। আমি বাড়ি ফিরে আমার মায়ের হাতে টাকাটা দেই। ওই টাকা দিয়ে আমরা আটা কিনে সারা মাস খেয়েছিলাম।

টুঙ্গিপাড়ায় গিমাডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম পান্না বলেন, বঙ্গবন্ধু তখন প্রধানমন্ত্রী। আমি কলেজে পড়তাম। একদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমাকে ওই বাড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রায় সবাই আগে থেকেই চিনতেন। তাই ওখানে আমাকে কেউ বাধা দিতো না।
অভ্যর্থনা রুমে গিয়ে দেখি পাশেই লাইব্রেরি রুমের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পায়চারী করছেন এবং জোরে জোরে কবিতা আবৃত্তি করছেন। ওনি আমাকে দেখে ভেতরে যেতে ইঙ্গিত করলেন। আমি ভেতরে গেলে তিনি সোফা দেখিয়ে বসতে ইশারা করলেন। আমি না বসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

কিছুক্ষণ পর তিনি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন কেন এসেছিস। আমি বললাম আপনাকে দেখার জন্য এসেছি। তিনি আমার দিকে অপলক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। বললেন, কি চাস? আমি উত্তরে বলেছিলাম আমি কিছুই চাই না।

তিনি তখন আমাকে ধমকের সুরে বললেন, কিছু একটা কর। বাপের অন্ন আর কত ধ্বংস করবি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল হৃদয়ের মানুষ। আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ। তিনি ছোট-বড় সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। হিংসা বিদ্বেষ কোনো কিছুই ছিল না তার মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়জুড়ে ছিল মানুষের জন্য ভালোবাসা।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G