বর্ষার চালতা ফুল
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
আকাশে মেঘের গর্জন। নীলাভ আকাশের বুক জুড়ে যেন পসরা সাজিয়ে বসেছে মেঘের দল। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি। বৃষ্টির পর পায়চারি করছিলাম বৃক্ষ-উদ্যানে। মাথার ওপরে তখন ঝলমলে নির্মল নীলাকাশ। বৃক্ষ-তরুলতায় বৃষ্টি-ধোঁওয়া উচ্ছ্বাস, পাতার কোলে বিন্দু বিন্দু জলের সৌন্দর্য।
শান্ত-সজীব প্রকৃতির এমন মুহূর্তে চালতা গাছের দিকে তাকাতেই থমকে গেল দৃষ্টি। ঘন সবুজ পাতার কোলে সদ্য ফোটা ফুলের মায়াবী হাসিতে ভরে গেল মন। বৃষ্টি-ভেজা দিনে চালতা ফুলের উল্লাস এ যেন বর্ষারই আগমনী বার্তা। মুগ্ধ চোখে ফুলের দিকে চেয়ে কেটে গেল নিষ্পলক আরও কিছু ক্ষণ।
ঋতুচক্রের পালায় বর্ষার আগাম ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। বর্ষার দাপটে দূর হয়েছে ক্লান্তি-অবসাদ। আষাঢ়-শ্রাবণের ডাকে আকাশ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে মেঘের দল। আর বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে যেন চালতা গাছ ফিরে পায় পূর্ণতা। ফলবতী হতে আর তর সয় না চালতা গাছের। তাই এ সময়েই দেখা মেলে চালতা ফুলের।
বর্ষার প্রথম ভাগে এ ফুল ফোটা শুরু করে। সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে কয়েকটি ফুল। গাছের পাতার সাথে পাল্লা দিয়েই হয়তো ফুলগুলো বড় হয়ে উঠেছে। পাঁচটি সাদা পাপড়ির বন্ধনে বাধা একেকটি ফুল। পাপড়ির মাঝখানে হলদে পরাগকেশর। কেশরের মৌমাছিকে দেখা গেল মধু আহরণে ব্যস্ত। দৃষ্টিনন্দন চালতা ফুল প্রকৃতিতে ছড়ায় হালকা সুবাস। চারপাশ মোহিত করে তোলে মিষ্টি গন্ধ।
সবুজ পাতার মাঝে এমন শ্বেত বর্ণের ফুল সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। এমন আকর্ষণীয় ফুলটি অবহেলিত বেশ! ফুল হিসেবে নয়, সে পরিচিত ফল হিসেবে। চালতা ফল নামেই পরিচিত গাছটি। শোভাবর্ধক এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia Indica। চিরহরিৎ এই গাছের উচ্চতা হয় ২০ মিটার। শাখা-প্রশাখা পরিপাটি। পাতা বেশ লম্বা, কিনারা খাঁজকাটা। বাকল লালচে ও মসৃণ হয়ে থাকে। এই গাছের কাঠ বেশ শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। নৌকা ও বন্দুকের বাঁট তৈরিতে এ কাঠের ব্যবহার অনেক পুরনো। ৫ থেকে ৬ বছরের মাথায় গিয়ে ফল দেয় চালতার গাছ।
ফুলের মতো ফলও বেশ বড় হয়। ফলের আকৃতি প্রায় গোল। রঙ সবুজ। চালতা টকজাতীয় ফল, পাকলে টকমিষ্টি। এই ফল দিয়ে আচার, জেলি তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে চালতা ফলের চাটনি বেশ জনপ্রিয়। জিভে জল আনা এই সুস্বাদু চাটনির গন্ধটাও অসাধারণ। চালতা ফল পাকে শরৎ থেকে হেমন্তকালে।
বাড়ির আঙিনা কিংবা বাগানে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে চালতার জনপ্রিয়তা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে চালতা গাছের দেখা প্রায় সব জায়গায়ই মেলে। তবে ঢাকায় যে নেই তা নয়। ঢাকার রমনা উদ্যান, নয়াপল্টন, মুক্তাঙ্গন, জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্ত্বর, চারুকলা, কলাভবনের সামনে, কার্জন হলের আশপাশে চালতার গাছ রয়েছে।
আমি চলে যাবো বলে
চালতা ফুল কি আর ভিজবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
-জীবনানন্দ দাশ