বিচিত্র কারুকাজ খচিত শতবর্ষী ‘কাঠ মসজিদ’

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৪:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:১৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

mathbaria-momin-mosque2.thumbnailশতবর্ষী পুরাকীর্তি মমিন মসজিদ। বিচিত্র কারুকাজ ও ক্যালিগ্রাফি খচিত সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি বিরল এই মসজিদটি স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে সমাধিক পরিচিত।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মৌলভী মমিন উদ্দিন আকন উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈল্পিক ভাবনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি মসজিদটি তৈরি করেন। যা শিল্পকর্মের অপূর্ব নিদর্শন হিসাবে তৈরি করেছে নতুন এক স্থাপত্য।

মমিন উদ্দিন আকনের নাতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর ‘মমিন মসজিদ : স্মৃতি বিস্মৃতির কথা’ বইয়ে লিখেছেন ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার ছেলে পীর বাদশা মিয়ার অনুসারী ছিলেন প্রয়াত মৌলভী মমিন উদ্দিন আকন। অনেক দিন ধরে নিজ বাড়িতে পাকা কাঠ দিয়ে মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন তিনি। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে কাঠের নানা নকশা দেখে নিজেই সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে মসজিদ তৈরির একটি পরিকল্পনা করেন।

১৯১৩ সালে কাঠ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাঠ শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা থেকে তিনি হরকুমার নাথকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে মসজিদ তৈরির প্রধান মিস্ত্রি নিয়োগ করেন।

২২ জন মিস্ত্রী দীর্ঘ সাত বছর নিরলস কাজ শেষে ১৯২০ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মমিন উদ্দিন আকন সব সময় মিস্ত্রিদের কাছে থেকে তাঁদের কাজ পরিচালনা করতেন এবং কারুকাজ গুলো সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন। কখনো কখনো একটি কাজ তিন চার বার করতে গিয়ে মিস্ত্রীরা বিরক্ত হতেন।

পূর্ব দিকে একটি মাত্র প্রবেশ দ্বারে কারুকার্য খচিত দুটি খাম্বা বিশিষ্ট দরজা রয়েছে, যাতে মসজিদ নির্মাণের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে। প্রবেশ দ্বারের উপরের বা দিকে আরবী হরফে ইসলামের চার খলিফার নাম ও মাঝ খানে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) অলংকৃত করা হয়েছে। প্রবেশ দ্বারের মাঝ খানের অংশে লেখা রয়েছে লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৭ এপ্রিল সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী মমিন মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

২০০৮ সালে খুলনা জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়নে মমিন মসজিদ প্রথম বারের মত সংস্কার করা হয়। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৩০ টি শিল্প সম্পৃদ্ধ মসজিদের তালিকায় রয়েছে মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ। গতবছর (২০১৩ সাল) ৪ ফেব্রুয়ারি মমিন মসজিদের শতবর্ষ উপলক্ষে মসজিদ প্রাঙ্গণে আলোচন সভা করে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, ‘ শত বছর পূর্বে মমিন মসজিদ তৈরিতে মমিন উদ্দিন আকন যে শিল্প রুচির পরিচয় দিয়েছে তা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের মসজিদ অনেক আগে ভারতের কাশ্মীরে একটি ছিল। ১৮৮৫ সালের ভুমকম্পে সেটি ধংসপ্রাপ্ত হয়। মমিন মসজিদ সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি একমাত্র নিদর্শন। সরকারের সহায়তা ও প্রচার পেলে মমিন মসজিদ পর্যটকদের কাছে হতে পারে দর্শনীয় স্থান।’

প্রতিক্ষণ/এডি/ রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G