বিদেশিদের প্রতারণার অর্থ লেনদেনে জড়িত ১২ ব্যাংক শনাক্ত

প্রকাশঃ জুলাই ২৭, ২০১৭ সময়ঃ ৩:১৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ

বিদেশিদের প্রতারণার অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের এমন ১২টি ব্যাংক শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আব্দুল বাতেন।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ নাইজেরিয়ানসহ বিদেশি প্রতারকচক্রের ৭ জন এবং ২ জন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বাতেন জানান, যে ১২টি ব্যাংক শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে বিদেশিরা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ জমা রাখতেন। বিভিন্ন উপায়ে সেসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাঠানো হতো।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের নাম রয়েছে।

আবদুল বাতেন বলেন, ১২টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশিরা প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করেন। এ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রেফতারকৃত লিজা আক্তারের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ডিবি। এ সব টাকা অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে পাকিস্তানি নাগরিক দানেশ রিজভীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে ভেরিফিকেশনের জন্য নানা ধরনের ডকুমেন্ট দিতে হয়। তবে তারা কিভাবে এসব অ্যাকাউন্ট খুলে ভিকটিমদের টাকা জমা দিয়েছে এ বিষয়ে আমরা ভাবছি। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর যে কোন বিষয়ে তদন্তের দায়ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। তবে এটা বলতে হবে যে, মামলার তদন্তে ব্যাংকগুলো আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

গ্রেফতারকৃত বিদেশি প্রতারক চক্রের সদস্যরা হলেন- জন আগাড়ি ইউজিও, আফেজ, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন, নামডি কেলভিন, লিজা আক্তার ওরফে অ্যাসতা, মোছা. তাসমিয়া পারভীন শিমু ও মো. মহসিন শেখ।

লিজা বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে থাকেন। তাসমিয়া পারভীন শিমু ও মো. মহসিন শেখ লিজার এ দেশীয় সহযোগী।

তাদের প্রতারণার ধরন সম্পর্কে আবদুল বাতেন বলেন, মো. কামরুজ্জামান নামে এক ভিকটিমের প্রিসকা খলিফা নামে কথিত এক বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সূত্রে ওই বিদেশি নারী কামরুজ্জামানকে জানান তার বাবার নামে লন্ডনের একটি ব্যাংক হিসাবে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা আছে। কিন্তু ওই টাকা তুলতে একজন বিশ্বস্ত লোক প্রয়োজন।

এ ভাবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠার এক পর্যায়ে ওই বিদেশি নারী কামরুজ্জামানকে জানান টাকাগুলো তুলতে কিছু ‘প্রসেসিং’ খরচ লাগবে। এ ভাবে তাকে ফাঁদে ফেলে একাধিক ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

একইভাবে মো. শাহনুর হোসেন (৫৭) নামে আরেকজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

বাতেন আরও বলেন, এ দেশে অনেক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। এদের মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের অধিবাসী নাগরিকরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারা নানাভাবে ফাঁদ পেতে এদেশের সহজ সরল ও লোভী প্রকৃতির মানুষকে ধোকা দিয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করে দিচ্ছেন।

অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারে পুলিশ শিগগিরই অভিযানে নামবে বলেও জানান তিনি।

গ্রেফতার মাইকেল ও নামডির স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ তৈরি পোশাক ব্যবসার আড়ালে প্রতারণামূলকভাবে বাংলাদেশি বিভিন্ন লোকজনের নাম ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G