বিশ্বের ১০ কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচে ধনী দশটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফোর্বসে প্রকাশিত সংগঠন ১০টি হলো:
১. আইএসআইএস: বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জঙ্গি সংগঠন। বার্ষিক আয় ৩ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে।
বিস্তার: সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ।
আয়ের মূল উৎস: বিভিন্ন কর্পোরেট ও শেখশাহির গোপন পৃষ্ঠপোষকতায় তেলের ব্যবসা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং অধিকৃত সিরিয়া ও ইরাকের ব্যাংক লুট।
লক্ষ্য: সিরিয়া, ইরাক, জর্ডন, প্যালেস্তাইন, লেবানন সহ ভূমধ্যসাগরীয় আফ্রো-এশীয় তল্লাটে এক সঙ্ঘবদ্ধ ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা।
২. হামাস: মাত্র এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে প্যালেস্টাইনীয় হামাস ইজরায়েল ও সেই সঙ্গে পশ্চিমা দুনিয়ার ত্রাস হয়ে ওঠে। সংগঠনের বার্ষিক আয় ১ বিলিয়ন ডলার। যদিও ইজরায়েলের প্রিসিশন টার্গেট মিসাইল আক্রমণে তাদের দুই শীর্ষনেতা ইয়াসিন ও রানতিসির পর পর মৃত্যু ঘটায় হামাসের আগের শক্তি অনেকাংশে লোপ পেয়েছে৷
বিস্তার: জর্ডন নদীর পশ্চিম তট ও গাজা স্ট্রিপ
আয়ের মূল উৎস: করের নামে প্যালেস্টাইনীয় মহল্লাগুলি থেকে তোলা আদায়, আর্থিক সাহায্য ও অনুদান ।
লক্ষ্য: ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ও জর্ডন নদীর ধারে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।
৩. ফার্ক ( দ্য রেভলিউশনারি আর্মড ফোর্স অফ কলম্বিয়া): উগ্র বামপন্থী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। কলম্বিয়ায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সংগঠন বিস্তার লাভ করেছে৷ প্রথমে ছিল ফিদেল কাস্ত্রো-চে গেভারাদের মতো মার্কসবাদে অনুপ্রাণিত গেরিলাদের সংগঠন। পরে মাওবাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়৷ অতঃপর অনিবার্যভাবে কলম্বিয়ার ড্রাগ মাফিয়াদের খপ্পরে পড়ে৷ বার্ষিক আয় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
বিস্তার: কলম্বিয়া
আয়ের মূল উৎস: ড্রাগ উৎপাদন ও পাচার, মানুষ পাচার, অপহরণ, সোনা উত্তোলন
ঘোষিত লক্ষ্য: পুঁজিপতিদের হটিয়ে মার্কসিস্ট সরকার গঠন।
৪. হিজবুল্লাহ: ফিলিস্তিনের হামাসের মতো এই জঙ্গি সংগঠনেরও একটি রাজনৈতিক পটভূমি রয়েছে। মূলত লেবাননের শিয়াপন্থী জঙ্গিদের নিয়ে ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সংগঠন গঠিত৷ বিশ্বের ধনী জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে হিজবুল্লাহর নাম। এই সংগঠনের বার্ষিক আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
বিস্তার: প্রধানত লেবানন
আয়ের মূল উৎস: বিদেশ থেকে আর্থিক সাহায্য (বিশেষত ইরান), ড্রাগ পাচার ও উৎপাদন ।
লক্ষ্য: লেবাননে ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে জঙ্গি আক্রমণ।
৫. তালেবান: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রথম গঠিত এই জঙ্গি সংগঠনটি আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শাসন চালায়। বার্ষিক আয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। শরিয়তি আইনের ধ্বজাধারী এই জঙ্গি সংগঠনটি এখন টুকরো টুকরো৷ তবু তা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, উভয় দেশেই এক বিষফোঁড়া স্বরূপ।
আয়ের মূল উৎস: ড্রাগ পাচার (মূলত আফিম ও হেরোইন), কর্পোরেট স্পনসরশিপ ও অনুদান।
লক্ষ্য: আফগানিস্তানে ফের কট্টরপন্থী মুসলিম সরকার গঠন।
৬. আল-কায়েদা: বিশ্বের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় জ্বল জ্বল করে আল-কায়েদার নাম। ইসলামের প্রতি পশ্চিমী দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিই পালটে দিয়েছে এই কট্টরপন্থী মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। এই সংগঠনের বার্ষিক আয় ১৫০ মিলিয়ন ডলার।
আয়ের মূল উৎস:বিদেশি শক্তির অনুদান, অপহরণ, ড্রাগ পাচার
লক্ষ্য: ঘোষণা মতো খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া ‘জিহাদ’। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন।
৭. লস্কর-ই-তৈয়বা: পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামিক সংগঠন লস্কর জঙ্গিদের সংগঠন আজও ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের দাপট ও আতঙ্ক টিকিয়ে রেখেছে। বার্ষিক আয় ১০০ মিলিয়ন ডলার।
আয়ের মূল উৎস: বিদেশি শক্তির আর্থিক সাহায্য ও অনুদান
লক্ষ্য: অবিলম্বে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করা ও সমগ্র উপত্যকাকে পাকিস্তানের আওতায় এসে রক্ষণশীল মুসলিম শরিয়তি আইন চালু করা।
৮. আল শবাব: সোমালিয়ার সবচেয়ে বড় এই জঙ্গি সংগঠনের জন্ম ২০০৬ সালে। বার্ষিক আয় ৭০ মিলিয়ন ডলার।
আয়ের মূল উৎস:অপহরণ, মুক্তিপণ ও তোলা দায়, জলদস্যুবৃত্তি ও অনুদান
বিস্তার: সোমালিয়া, কেনিয়া ও উগান্ডা
লক্ষ্য: সোমালিয়ায় কট্টরপন্থী ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
৯. রিয়েল আই আর এ (বার্ষিক আয় ৫০ মিলিয়ন ডলার): রিয়েল আই আর এ, পুরো নাম রিয়েল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি। এটি মূল ‘আই আর এ’ সংগঠন থেকে ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া চরম উগ্রপন্থী শাখা, যারা ১৯৯৮ সালের ত্রিপাক্ষিক শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করেছিল। সংগঠনটি এখনও ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে’র বিরুদ্ধে নাশকতামূলক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। সংগঠনটিকে জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা।
আয়ের মূল উৎস: অপহরণ, চোরাকারবার এবং অনুদানই এদের আয়ের মূল উৎস।
বিস্তার: উত্তর আয়ারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেন
লক্ষ্য: একটি আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ আইরিশ রাষ্ট্র গঠন।
১০. বোকো হারাম (বার্ষিক আয় ৫২ মিলিয়ন ডলার): বোকো হারাম কথার অর্থ হল পশ্চিমী শিক্ষা পাপ। যারপরনাই কট্টরপন্থী ও সাংঘাতিক এই মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিশ্বাস, পশ্চিমী শিক্ষা বা মতাদর্শকে কোনও মতেই জায়গা দেওয়া যাবে না।
আয়ের মূল উৎস: কিডন্যাপিং ও মুক্তিপণ আদায় করেই এই জঙ্গি সংগঠনের তহবিল ভারী হয়ে চলেছে। পাশাপাশি ব্যাংক লুট ও তাবড় ধনী ব্যক্তিদের সুরক্ষা বাবদ তোলাবাজি চালায় এই জঙ্গি সংগঠন।
বিস্তার: নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন
লক্ষ্য: ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ও নাইজেরিয়ায় শরিয়তি কানুন চালু করাই এই জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে