বেকার যুবক বাছিরের দিন বদলের গল্প
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার শিক্ষিত বেকার যুবক বাছির আহম্মদ মৎস্য চাষ করে নিজের ভাগ্যকে বদলে নিয়েছে। ৬০ শতক পুকুরে মৎস্য চাষ শুরু করে বর্তমানে গড়ে তুলেছেন ১৫৯ একরের বিসমিল্লাহ মৎস্য খামার। এ খামারে ৪২টি পুকুর ও বেড়িতে মৎস্য চাষ করে বাছির এখন শত কোটি টাকার মালিক। বিগত ২০০৬ সালে ৬০ শতকের একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন এমবিএ পাস করা বেকার যুবক বাছির আহাম্মদ।
চাটিতলা আদর্শ মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সামান্য বেতনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালীন পৈতৃক ৬০ শতক পুকুরে দেশি জাতের মাছ চাষ করে সামান্য মুনাফা পেয়ে মাছ চাষের আগ্রহ জন্মে তার।বর্তমানে তিনি বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারে ৪২টি পুকুর এবং বেড়িতে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার টন মাছ উৎপাদন করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, ব্রিগেড, পাঙ্গাস, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরাসহ যাবতীয় মাছ উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করেন।
বাছির আহাম্মদ মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য একটি হ্যাচারি তৈরি করে প্রতি বছর প্রায় ২৫ টন রেণুু পোনা উৎপাদন করেন। ওই হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত রেণু পোনা নিজের খামারে চাষ করে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা আয় করেন।
তার খামারে ৩৮ জন শ্রমিক, ছয়জন ম্যানেজার ও একজন মৎস্য বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও খামার পাড়ের ৫৫ শতক জায়গা নিয়ে একটি গাছের বাগান গড়ে তোলেন। পাশাপাশি খামার ও বেড়ির পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ৭০ হাজার গাছ রোপণ করেছেন এবং বেড়ির পাড়ে ২ শতাধিক উন্নত জাতের ছাগল দিয়ে একটি ছাগলের খামার গড়ে তোলেন।
বিগত ২০০৬ সালে ৬০ শতক, ২০০৭ সালে তিন একর এবং ২০১১ সালে ৫২ একর জমির ওপর খামার তৈরি করেন। ওই খামারে ১৫৯ একর জায়গা রয়েছে। বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারে নিজ গ্রাম চাটিতলা, কাকৈরতলা, আটিয়াবাড়ী, ভোলাইন, মুলিধরা, পুঁজকরা, পদুয়া, ঘোড়াময়দানসহ ৮টি গ্রামের ২৪০ জন থেকে জমি অধিগ্রহণ করে খামার গড়ে তুলেছেন।
বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক বাছির আহাম্মদ জানান, ২০০৫ সালে এমবিএ পাস করে বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য স্থানীয় চাটিতলা আদর্শ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য ছিল, কিন্তু আয় বাড়াতে ভোলাইন বাজারে বিসমিল্লাহ কাপড় অ্যান্ড কসমেটিক দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করি। এ দুই প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে পরিবার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না, তাই আয় বাড়াতে নিজ পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে আজ আমি বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক।
এজন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা এবং আট গ্রামের জমিদাতাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক বাছির আহাম্মদ আরও জানান, তার মৎস্য চাষে উৎসাহিত হয়ে এলাকার বেকার যুবক রেদোয়ান আহাম্মদ সুমন, আজিম উদ্দিন মাকসুদ, ইকবাল হোসেন, আবুল বাশার মেম্বারসহ অনেক বেকার যুবক মৎস্য চাষ করে বেকারত্ব দূরীকরণসহ ব্যাপক কর্মস্থান তৈরি করেছেন।
এছাড়াও বাছির আহাম্মদ আশা প্রকাশ করেন, এ এলাকায় ফিডমিলস, আইস মিলস হলে মাছ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে প্রায় ৫০০ লোকের কর্মস্থান তৈরি হবে এবং মৎস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে খরচ অনেক কম হবে। পাশাপাশি সরকার বছরে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। বিসমিল্লাহ মৎস্য খামার মৎস্য চাষে সফলতার জন্য ২০১২ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলা ও ২০১৩ সালে কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ মাছ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করেন।
বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারে মাছ উৎপাদন ও বিক্রয়ে যাতায়াত, বিদ্যুৎ, পরিবহন, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মৎস্য হিমাগারসহ অনেক প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়েছে।
বাছির আহাম্মদের কঠোর পরিশ্রম, মেধা, সাহসিকতা ও সততার ফলে আজ সে বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক। মৎস্য চাষে লাকসাম ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক বিভিন্ন সময় অর্থ ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
বিসমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক বাছির আহাম্মদ বলেন, তার মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও সততা দিয়ে মৎস্য চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনসহ দেশ এবং জাতির উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/জীবন