বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল খোলস বদলেছে মাত্র !

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ সময়ঃ ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সময়, একাত্তর, এটিএন নিউজ আর দেশ টিভির ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে যাওয়া দেখে অডিয়েন্স হিসেবে বেশ লজ্জা লাগছে। তাদের কী লজ্জা শরম কিছু আছে?

এই চ্যানেলগুলো গণহত্যার সময় চুপ থেকে এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কে কীভাবে ফোকাস করবে, সেটা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে। শুধু কী তাই? প্রতিনিয়ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদলেহন করে, উন্নয়ন প্রচার করে, তেলে ভাসিয়ে রাখার পর, এখন প্রতিযোগিতা করে হাসিনার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে নিউজ করছেন তারা ! সত্যিই সেলুকাস! হঠাৎ দেখে মনে হবে দেশের গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিরা সব হাজী সাহেব বনে গেছেন !

এসব নাটক দেখে আবেগি বাঙালীসহ বর্তমান উপদেষ্টাদের খুশিতে গদ গদ হবার কোনো কারণ দেখছি না। হাসিনার পালিয়ে যাবার পর এসব অনুগত দাসরা পীঠ বাঁচাতে জাস্ট খোলস বদলেছেন মাত্র, ভেতরের সব কিছু ঠিক আগের মতোই আছে। বেশিরভাগ চ্যানেলের মালিকানা চেঞ্জ হয়নি এবং সেখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকা চামচারা এখনো স্বপদে বহাল আছে, সুযোগ পেলে তারা আবারও পল্টি নেবে।

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে দেশ টিভি এবং ৭১ টিভির নিউজের শিরোণাম আর থাম্বনেইল দেখলে খুবই হাসি পায়। তাদের নিউজ দেখলে মনে হয়-তার যুগ যুগ ধরে ড. ইউনুসের সরকারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য উদগ্রীব ছিলো। অথচ হাসিনার সময়ে ড. ইউনুসকে নিয়ে তাদের নিউজ আর টকশোগুলো দেখলে বুঝবেন কত দ্রুত তারা পল্টি নিয়েছে। পল্টিবাজীকে শিল্প বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে তারা !!!

পতিত স্বৈরাচারের দোসর এসব টিভি চ্যানেলের মালিকপক্ষের যেখানে মেরুদন্ডই ছিলোনা, সেখানে তাদের নিয়োগ করা এবং বর্তমান সময়েও স্বপদে বহাল থাকা প্রধান সম্পাদক থেকে শুরু করে সংবাদকর্মী (তেলবাজ ও চামচা যারা আছে) তাদের কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ যদি আশা করেন তাহলে আপনি বাংলাদেশের বাস্তবতায় নাই।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। অথচ হাতেগোনা কয়েকটা গণমাধ্যম ছাড়া বাকীরা নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছিলো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে।

বেনজির, হারুন, ইনু, ওকা, পলক আর আরাফাতদের নুরানী (!) চেহারাতে তাদের স্ক্রিন প্রতিনিয়ত জ্বল জ্বল করতো, আর এখন সেখানে নাহিদ, সারজিস, হাসনাত, আসিফরা জ্বল জ্বল করছেন! কী চমৎকার বাস্তবতা, তাই না ? কিন্তু ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চলছে।

উদাহরণ হিসেবে সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে একাত্তর টিভিকে দেয়া ভিপি নুরের সাক্ষাৎকারটি একবার দেখে নিতে পারেন। যেকোনো সময় দেশকে কঠিনতর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে হাসিনার পদলেহনকারীরা সোচ্চার আছে। এটা যদি ভুলে যান তাহলে এখনো আপনারা বোকার স্বর্গে আছেন।

দেশের গণমাধ্যমে (বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে) শিগগিরই আমূল সংস্কার না করলে খোলস বদলানো সাপেরা ফনা তুলতে পিছপা হবে। ব্যাপকহারে সংস্কার জরুরী।

শুধু একটা কথা মাথায় রাখুন, গণমাধ্যম যথাযথ সংস্কার করতে আপনারা যদি ব্যর্থ হন তাহলে পতিত সরকারের এই আজ্ঞাবহ দোসররা আবার ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে পল্টি খাবে। শুধু তাই নয় , ছাত্র জনতার এই বিপ্লবী সরকারের পতনের ঘন্টা ধ্বনি বাজিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবেনা।

মনে আছে নিশ্চয়ই একেকটি পদ্মা সেতুর পিলার ধরে ধরে প্যাকেজ নিউজ আর লাইভের মাধ্যমে উন্নয়নের ন্যারেটিভ তৈরি করে তারা আমাদের রীতিমতো সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিয়েছিল। আর পালিয়ে যাওয়ার পর জানা গেল লুটপাটের কারণে ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈন্যদশার খবর। সেইসব উন্নয়ন সাংবাদিকরা (!) এখনো স্বপদে বহাল আছে !!!
আশা করি আপনাদের হুঁশ ফিরবে।

রাকিব হাসান
লেখক ও সাংবাদিক
ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
ই-মেইল:[email protected]

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G