ভাঙ্গলো এনডিএম: পদত্যাগ করলো ছাত্র আন্দোলনের হাজার সদস্য

প্রকাশঃ মে ৩১, ২০১৭ সময়ঃ ২:১৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১৯ অপরাহ্ণ

চেয়ারম্যানসহ জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম’র অযোগ্য নের্তৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে, এবার দল ছাড়লো ছাত্র সংগঠনের প্রায় এক হাজার সদস্য। দলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়ক এম এম এইচ শান্ত’র নের্তৃত্বে ১৮ মে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-থানা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেন।

এনডিএম’র চেয়ারম্যান, কথিত ধনকুবের ও বির্তকিত ব্যবসায়ী মুসাপুত্র ববি হাজ্জাজ বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলন’র কেন্দ্রীয় নের্তৃত্বের রাজনৈতিক অদক্ষতা, কর্মচারী নির্ভর দিক-নির্দেশনায় দল পরিচালনা, ঘন ঘন মত পাল্টানো, মুখে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতিার কথা বলে অগণতান্ত্রিক আচরণ করা,যখন-তখন পদ-পদবী প্রদান আবার অব্যাহতি দেয়া- এ ধরনের অসংখ্য অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পদত্যাগপত্রে আরো বলা হয়, এসব অগণতান্ত্রিক আচরণে আগামী দিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত দেখে দলের সৎ ও যোগ্য নেতাকর্মীরা হতাশ। আর সে কারণেই জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন’র নেতাকর্মীরা গণ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়ক এম এম এইচ শান্ত’র নের্তৃত্বে পাবনা, শেরপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও উপজেলা-থানার জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকর্মী পৃথক পৃথকভাবে দল ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছেন। উপজেলা-জেলা ও বিশ্ববিদ্যাল কেন্দ্রিক লিখিত বা মৌখিকভাবে মনোনীত আহবায়ক রুমেন আহমেদ, ফায়েজুর রহমান ও আলাউদ্দিন পলাশ’র নের্তৃত্বে স্ব স্ব কমিটি সম্মিলিত আবেদনের মাধ্যমে গণ পদত্যাগ করে। যাদের নের্তৃত্বে রয়েছে প্রায় এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। তাদের পদত্যাগপত্রগুলো এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জারের বনানীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মামুনের হাতে স্বশরীরে তুলে দেয়া হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, সাদা কাগজে কমিটিগুলোর আহবায়কদের স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রের মাধ্যমে গণ পদত্যাগ করেন জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকর্মী।

এদিকে ১৮ তারিখ উল্লেখিতদের পদত্যাগের দু দিন পর, ২০ মে রুমেন আহমেদকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে ফেসবুকের মাধ্যমে জানান দেয় এনডিএম। এতে বলা হয়, বহিস্কার আদেশ ২০ মে হতে কার্যকর হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ১৮ তারিখ পদত্যাগের পর যারা দলেই নেই, তাদের কি করে দল থেকে বহিস্কার করা হয়? এ প্রশ্নের জবাবে এনডিএম’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার বলেন, রাজনীতিতে পা দিয়েই বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ’র মুখে পড়েছি। দেখছি, শিখছি, ভাবছি আগামীদিনের সঠিক পরিকল্পনা কি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এনডিএম’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলবো। তার দাবি গেলো ক’দিন পার্টি অফিসে যাননি, সুতরাং এ বিষয় দলীয় মূখপাত্রই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি সবকিছু মিলিয়ে বেশখানিকটা হতাশ বলে জানান। তাই এই মূর্হূতে ব্যবসায় বেশি মনোযোগী আবুল বাশার।

এছাড়া আরেকটি ফেসবুক বার্তায় মো; ইসমাইল হোসেন ও মাসুদ রানা জুয়েল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১০ মে তারিখ উল্লেখ করে জানানো হয়, এম এম এইচ শান্ত, এম এম এইচ রুবেল, জাহিদ হাসান জয়, পলাশ খান ও ফায়েজুর রহমান সজিব’র সঙ্গে জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। দলের নেতাকর্মীদের উলে¬খিতদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ না করবার আহবান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরিত আহবায়ক ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে বেশকিছু অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনডিএম নেতা অভিযোগ করেন, সাবেক শিবির নেতা ইসমাইল এক সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবির সভাপতি মানিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

এদিকে আরো একটি ফেসবুক বার্তায় জানা যায়, এম এম এইচ রুবেলকেও বহিস্কার করা হয়েছে পদত্যাগের দু’দিন পর। এসব নিয়ে  কথা হয়, এনডিএম’র মহাসচিব, এশিয়ান ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক আবদুল্লাহ এম তাহের এর সাথে। তিনি বলেন, পদত্যাগ করলেই যে তা গ্রহন করা হয়েছে, তাও তো নয়। তিনি প্রশ্ন করেন, সময় মতো পদত্যাগপত্রটি এসেছে কিনা, তাও তো খতিয়ে দেখতে হবে। আর ফেসবুকে দেয়া পোষ্ট প্রসঙ্গে তাহের বলেন এনডিএম’র অফিসিয়াল ফেসবুকে এধরনের কিছু নিশ্চয় দেয়া হয়নি? তিনি বলেন, ছাত্র সংগঠনটি কোনভাবেই এনডিএম’র অঙ্গ বা সহযোগী অংশ নয়, তারা ভ্রাতৃপ্রতিম। সুতরাং এসব বিষয় তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের বিষয় মূল দলের মহাসচিব’র কিছু বলার নেই। তারপরও কিছু জানার থাকলে, তাদের অভিভাবক-এনডিএম চেয়ারম্যান’র ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী কাম এনডিএম সাংগঠনিক সম্পাদক, “স্বপ্নের দেশ”র সমন্বয়ক মোমিনুল আমিনের সঙ্গে কথা বলবার পরামর্শ দেন একমাস আগে আত্মপ্রকাশ করা নতুন দল জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাসচিব আবদুল্লাহ এম তাহের।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান এনায়েত কবীরকে বেশ ক’বার মোবাইলে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি, এনডিএম’র সমন্বয়হীন অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিমত জানতে। তবে দলের দপ্তর সম্পাদক পারভেজ খান, ছাত্র নেতাদরে পদত্যাগ এবং বহিস্কার প্রসঙ্গ অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। আর ওসব জুনিয়র দু’চারজন ছেলেকে তো আগেই দল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা আবার পদত্যাগ করবে কি করে? সুতরাং বহিস্কারের তো প্রয়োজনই নেই। কোথাও যেন ভুল হচ্ছে।

এদিকে পদত্যাগের পর বহিস্কার আদেশ সম্পর্কে ছাত্রনেতা রুমেন আহমেদ বলেন, ‘যিনি দলে গণতন্ত্র বা জবাবদিহিতা র্চচ্চা করেন না, তিনি নাকি দেশে আজব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন। আরে মুক্তিযুদ্ধে বির্তকিত ব্যক্তির পূত্র করবেন রাষ্ট্র পরিচালনা, ওটা প্রচন্ড রোদে খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাবনা ছাড়া আর কিছু নয়। রুমেন বলেন, নির্লজ্জ মিথ্যাচার পদত্যাগের দু দিন পর বহিস্কার। তিনি বলেন, যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১৬জন সদস্যের ১২ জনই চলে যায়,সেটাকে রাজনৈতিক দল বলা যেতে পারে না। হতে পারে তা মজমা পার্টি। রুমেন বলেন, হয়েছেও তাই।

শাফিন-কাফিন দিয়ে তো আর দল চলে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন কোথায় গেলেন,তাজিন আহমেদ। কি কারণে নীরবে তাজিনকে চলে যেতে হলো? যিনি কথায় কথায় জবাবদিহিতার কথা বলেন, কোথায় গেলো তার জবাবদিহিতা? হাল-ফ্যাশনের টকশো স্পেশালিষ্ট থেকে দূরে থাকতে গণমাধ্যম ব্যক্তিদের পরামর্শ দেন ছাত্রনেতা রুমেন আহমেদ।

অপর ছাত্র নেতা রবিনের অভিযোগ ‘শিবিরের আশ্রয়-প্রশয় কেন্দ্র এনডিএম। তারা নাকি আবার স্বাধীনতার চেতনা। শুনলে হাসি পায়। যতটুকু চেতনা ছিলো, তা তো বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরীর রাজনৈতিক অলংকার। তার মতো রাজনীতিবিদকে সরিয়ে দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত করতেই কাজ করছে ববি হাজ্জাজ’। এ অভিযোগ ছাত্র নেতা  রবিন, রুমেন আহমেদসহ অনেকের।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G